শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » ঈদ যাত্রাঃ ট্রেনের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু
ঈদ যাত্রাঃ ট্রেনের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়, চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এদিনে দেওয়া হচ্ছে ২৭ এপ্রিলের টিকেট।
সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় টিকেটের জন্য যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়। স্টেশনের ১৬টি কাউন্টারের সামনেই দীর্ঘ লাইন।
টিকেট নিয়ে বেরিয়ে আসা সানজিদা আখতার নামে এক নারী বলেন, “ভাইয়া এসেছি গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়, এখন (৮টা ১৫ মিনিটে) পেলাম কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকেট। হিসাব করে দেখেন, কত ঘণ্টায় টিকেট পেলাম। তারপরও পেয়েছি।”
রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, তারা প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার টিকেট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এই টিকেটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, “আজকে থেকে অগ্রিম টিকেট কাটা শুরু হল একযোগে অনলাইন ও কাউন্টারে। পাঁচটি স্টেশনে এই অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে।
“যতক্ষণ টিকেট থাকবে, ততক্ষণ যাত্রীরা টিকেট পাবেন। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও টিকেট দেওয়া হচ্ছে।”
সায়েরা নামে আরেক নারী জানান, তিনি রাত থেকে অপেক্ষা করে টিকেট পেয়েছেন রংপুরের। পরিবারের চারজনের টিকেট নিয়েছেন তিনি।
অগ্রিম টিকেট কাটার সময়ে যাত্রীদের এনআইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি দেখাতে হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারজনের টিকেট কিনতে পারছেন। সেক্ষেত্রে তাকে অন্য তিনজনেরও এনআইডি বা জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে।
শনিবার ২৭ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। রোববার বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিলের টিকেট, সোমবার ২৯ এপ্রিলের টিকেট, মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিলের টিকেট এবং বুধবার ১ মের টিকেট বিক্রি হবে।
ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৫ মে থেকে। সেই টিকেট বিক্রি হবে ১ মে। এরপর যথাক্রমে ৬ মের জন্য ২ মে, ৭ মের জন্য ৩ মে এবং ৮ মের জন্য ৪ মে টিকেট কেনা যাবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ মে ঈদুল ফিতর হবে। সে অনুযায়ী ঈদের ৯ দিন আগে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করল বাংলাদেশে রেলওয়ে। তবে ঈদ যদি ৪ মে হয়, তবে ২৮ এপ্রিল বিক্রি হবে ২ মের ট্রেনের টিকেট।কোন স্টেশনে কোন অঞ্চলের টিকেট
# কমলাপুর রেল স্টেশন: সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেন
# ঢাকা বিমানবন্দর রেল স্টেশন: চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন
# তেজগাঁও রেল স্টেশন: ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেনসহ সব আন্তঃনগর ট্রেন
# ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন: মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেন।
গত দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ঈদে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। দুই বছর পর ঈদযাত্রায় ফিরেছে ট্রেন।
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য নিয়মিত ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও চাঁদপুর স্পেশাল-২ ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে।
এছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল একই সময়ে চলাচল করবে।ঢাকা-খুলনা রুটে খুলনা স্পেশাল ট্রেন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের অতিরিক্ত রেক দিয়ে চলাচল করবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত।
এছাড়া ঈদের দিন ভৈরব বাজার ও কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলাচল করবে।
মধ্য রাত থেকে লাইনে
টিকেটের জন্য সেহেরি খেয়ে কমলাপুর স্টেশনে আসেন সোহরাব হোসেন। তিনি পরিবারকে নিয়ে ২৭ এপ্রিল যশোর যাবেন। তার চারটি টিকেট প্রয়োজন।
সোহরাব বলেন, “সেই ফজরের নামাজ পড়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন বাজে সাড়ে ৯টায়। এখনও আমার সামনে ৩০ জন। হয়ত কাউন্টারের মুখে পৌঁছাব আরও ঘণ্টাখানেক পর।”
টিকেট কাটার এই ভোগান্তি অবসানে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদে স্বচ্ছন্দ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি যেতে ট্রেনই নিরাপদ বাহন। সেজন্য এত কষ্ট স্বীকার করেও অপেক্ষার পর অপেক্ষায় সময় গুনছি।”
ভিড় হবে বলে আগেই পরিবারের সদস্যদের পাঠানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যাংককর্মী রাশেদা বেগম।
তিনি বলেন, “ছেলে-মেয়েদের আগেই পাঠাব, যাতে তারা নিরাপদে গিয়ে দাদুর সাথে থাকতে পারে। সেজন্য টিকেট কিনতে এসেছি। কিন্তু লাইনের গতি কম মনে হলেও শেষ পর্যন্ত সকাল ৯টায় টিকেট পেয়েছি হাতে। খুব ভালো লাগছে যে তিন ঘণ্টা লাইনে থেকে এই টিকেট পেলাম।”
সারা রাত সংবাদপত্র বিছিয়ে অনেকে বসেছিলেন স্টেশনে। সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওইসব পত্রিকার কাগজের স্তূপ একদিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।কমলাপুর স্টেশনের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ৩৬টি আন্তঃনগরে আসন সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৭২টি। আরও কিছু বগি যোগ করে আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে।
কমলাপুর স্টেশনে ১৬টি কাউন্টার থেকে বিক্রি করছে। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে।
অনলাইন টিকেটে সার্ভারে ক্রটি হচ্ছে এমন অভিযোগও যাত্রীদের। ফলে অনেকে সার্ভারে ঢুকতে পারে না। সহজ ডটকম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইন টিকেট বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে। এর আগে সিএনএস নামে আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেনের টিকেট বিক্রি করত।
যাত্রীদের কেউ কেউ বলেছেন, টিকেট কাউন্টারে গিয়ে নিজের পছন্দের টিকেট পাওয়া যায় না। কেবিন চাইলে পাওয়া যায় এসি চেয়ার ও শোভন চেয়ার দিচ্ছে।
টিকেট নিতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। অগ্রিম টিকেট কিনতে এসে ট্রেনের নিয়মিত যাত্রীরা পড়ছেন বিপাকে। তারা স্টেশনের প্রবেশ করতে বেগ পাচ্ছেন। সাইফুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী বলেন, “ট্রেনে যাব। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে স্টেশনেরই প্রবেশ করতে পারছি না। এভাবে চললে রেলওয়ে। এটা কেমন কথা।”
অগ্রিম টিকেটের জন্য আসা যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো কোনা টিকেট কাউন্টারে সার্ভারে সমস্যার কারণে যাত্রীরা টাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাউন্টারের ভেতর থেকে বলা হচ্ছে- ‘একটু অপেক্ষা করেন’।”
কালোবাজারি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা’
কমলাপুরের স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ বলেন, “কালো বাজারে টিকেট বিক্রি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে আরএমপি, র্যাব, পুলিশসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছেন। রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ মনিটরিং করছেন। যেন এটা নিশ্চিত হয় যে, টিকেট যাত্রীরা কাউন্টার থেকে পান। এই ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলবে ২৯ এপ্রিল থেকে। কমলাপুর স্টেশন থেকে এই ট্রেন যাত্রা শুরু করবে সকাল ৮টায়
স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ জানান, ঢাকা থেকে খুলনা এবং ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ এই দুটি বিশেষ ট্রেন চলবে, যার টিকেট বিক্রি হবে ২৫ এপ্রিল থেকে।
তিনি জানান, প্রতিদিন কমলাপুর স্টেশন থেকে সাড়ে ৬ হাজার টিকেট বিক্রি হবে।কেনো অনলাইনে টিকেট পাওয়া যাচ্ছেন না- তার ব্যাখ্যা দিলেন মাসুদ বলেন, “বিষয়টা হচ্ছে যে, সহজ ডটকম বলছে যে, যখন সকাল ৮টায় এটা ওপেন হয়, তখন একসাথে সবাই টিকেট কাটার চেষ্টা করেন। ২/৩ লাখ লোক যখন হিট করে একসাথে তখন তাদের ভাষায় সার্ভার জ্যাম হয়। সেজন্য সমস্যা হচ্ছে।”