বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » রমজানে নিউমার্কেটের ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচার করতে হবে
রমজানে নিউমার্কেটের ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচার করতে হবে
ড. আরিফুর রহমানঃ রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় মঙ্গলবার সংযমের মাস রমজানে দিনভর যা ঘটেছে, সেটাকে শুধু অসংযমী বললে কম বলা হবে; বস্তুত ঢাকা কলেজের ছাত্রসমাজ ও নিউমার্কেট এলাকার দোকান-কর্মচারী ও মালিকপক্ষ বেপরোয়াপনার চূড়ান্ত নিদর্শন রেখেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত অতি তুচ্ছ কারণে। দুই দোকানের কর্মচারীদের সামান্য কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে এক দোকানপক্ষ ঢাকা কলেজের ছাত্রদের তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে। ফল হিসাবে শুরু হয় ছাত্র ও দোকান কর্মচরীদের মধ্যে এক অভাবিত সংঘর্ষ। শুরুটা হয়েছিল সোমবার মধ্যরাতে।
টানা তিন ঘণ্টা সংঘর্ষের পর সেহরির সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু পরদিন সকাল থেকে দুপক্ষের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, টায়ারে অগ্নিসংযোগ, লাঠি-রড হাতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুরো নিউমার্কেট এলাকা পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে।
একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। সংঘর্ষ চলে মঙ্গলবার দিনভর। এ সংঘর্ষে আহত কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া ৯ জন গণমাধ্যমকর্মীসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি এমন মারাত্মক অবস্থা ধারণ করে যে, কর্তৃপক্ষ ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়, যদিও শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন রোগীসহ বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী মানুষ। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের ঈদ মৌসুমের ব্যবসাও প্রচণ্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
মঙ্গলবারের সংঘর্ষের দায় কার? এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত হতে পারে কিছু প্রশ্ন। প্রথমত, আমরা এর আগেও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা দেখেছি। সেসব সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল শিক্ষার্থী ও দোকান কর্মচারীদের মধ্যে সরাসরি বিবাদের ফল হিসাবে।
কিন্তু এবার ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দোকানিদের একপক্ষের সহযোগী হিসাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকা কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত ছাত্রসমাজের এতটা নৈতিক অধঃপতন ঘটল কীভাবে? ছাত্রসমাজের এ বেপরোয়াপনা মেনে নেওয়া যায় না কোনোভাবেই। দ্বিতীয়ত, সোমবার রাতে পুলিশ সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেও মঙ্গলবার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অনেক দেরিতে, যে কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সোমবার রাতের ঘটনা যে মঙ্গলবারেও গড়াতে পারে, এটা কি পুলিশ বুঝতে পারেনি? যদি না বুঝে থাকে, তাহলে বলতে হবে এটা তাদের এক বড় ব্যর্থতা। তারা সময়মতো ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ব্যবসায়ীদের নেতা ও ঢাকা কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-শিক্ষক সংঘর্ষের ঘটনা দ্রুত থামাতে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেননি। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের জন্য দায়ীদের আইনের মুখোমুখি করা হবে। আমাদেরও বক্তব্য হলো, এ ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষত যারা ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকা মাঝেমাঝেই রণক্ষেত্রে পরিণত হবে, তা হতে পারে না। সবশেষে আমরা আশা করব, ছাত্রসমাজ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়-দুপক্ষের মধ্যেই শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।