রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিক্ষাঙ্গন | শিরোনাম | সাবলিড » স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আবারও ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে কঠোর নির্দেশনা
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আবারও ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়কে কঠোর নির্দেশনা
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: দেশের ২৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সময় আবারও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে শিক্ষার্থী ভর্তিসহ অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সব কার্যক্রম অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ১২ বছর পূর্ণ হলেও এখনও দেশের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরিভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়নি। কেউ আংশিকভাবে কেউবা নির্মাণাধীন কাজ দেখিয়ে বছরের পর বছর আউটার ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ে নানাভাবে আলটিমেটাম দিলেও এখনো তারা প্রধান ক্যাম্পাসে যায়নি। সে কারণে ইউজিসি থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করা হয়েছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই শোকজের জবাবে নতুন করে আরও সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের পর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অস্থায়ী সব ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অবৈধ করে বিবেচিত হবে। সেখানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন সবার জন্য সমান, সবাইকে তা মানতে হবে। ইউজিসির আলটিমেটাম অনুযায়ী যারা সক্ষম হবে তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে। তবে করোনায় অনেকে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা রাজধানী বনানীর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুরে দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ রোডে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, ধানমন্ডিতে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ধানমন্ডির কলাবাগানে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির লালমাটিয়া ও উত্তরায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস, রাজারবাগে দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, গুলশানে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বনানীতে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা মডেল টাউনে উত্তরা ইউনিভার্সিটি, পান্থপথে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বনানীতে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, একই এলাকায় রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও শ্যামলীর আশা ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
এর বাইরে চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং ইউজিসির শোকজের জবাব না দেওয়ায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। রোববার এ সিদ্ধান্ত ইউজিসিতে অনুমোদন হয়েছে। এ বিষয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হবে।
এসব বিষয়ে নর্দান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ মো. আবু আব্দুল্লাহ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য শামীম পাটোয়ারীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।
স্থায়ী ক্যাম্পাস ইস্যুতে আমরা দফায় দফায় সময় বাড়িয়েছি। কেউ কেউ স্থায়ী ক্যাম্পাস করেও নিজেদের অনীহা থেকে স্থানান্তর হচ্ছে না। আমরা তাদের বারবার সতর্ক করেছি। সবদিক বিবেচনা করে আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছি।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আইন সবার জন্য সমান, সবাইকে তা মানতে হবে। ইউজিসির আলটিমেটাম অনুযায়ী যারা সক্ষম হবে তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে। তবে করোনায় অনেকে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যাদের সক্ষমতা আছে তাদের দ্রুত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যাওয়া উচিত। একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকবে আর ঢাকায় একটি অস্থায়ী থাকবে সেটি হতে পারে না। এ বিষয়ে আমরা ইউজিসির চিঠি পেলে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যুগের সূচনা। এখন পর্যন্ত দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ৯৯টি। ২০১০ সালের আগে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এর মধ্যে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ আদালতে মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে বন্ধ করে দেয় সরকার।
জানা যায়, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করায় ২৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ (কারণ দর্শানো নোটিশ) করেছে ইউজিসি। ভাড়া বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি ও ক্লাস করানোর কারণে তাদের নোটিশ দেওয়া হয়। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে আগের ঠিকানায় (অস্থায়ী) নানা নামে ক্যাম্পাস ধরে রেখেছে, সেগুলোর বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হলেও স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করেনি এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ করেছে ইউজিসি।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে আমরা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১২ বছর পূর্ণ হলেও যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি তাদের ক্যাটাগরিভিত্তিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। করোনার কারণে অনেকে পিছিয়ে গেছে, নতুন করে সময় চেয়েছে। তাদের কার কী অবস্থা সেটি নির্ণয় করে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের পর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস ইস্যুতে আমরা দফায় দফায় সময় বাড়িয়েছি। কেউ কেউ স্থায়ী ক্যাম্পাস করেও নিজেদের অনীহা থেকে স্থানান্তর হচ্ছে না। তাদের বারবার সতর্ক করেছি। সব দিক বিবেচনা করে আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অবশিষ্ট ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ আংশিক ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। জমি কিনেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের পদক্ষেপই নেয়নি।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০১০ সালের পর থেকে সরকার এসব প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা আলটিমেটাম দিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ওই সময় বলা হয়েছিল, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ নির্দেশ পালন করতে পারবে না তাদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকার কথা ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিবর্তন আসে। বারবার আলটিমেটাম দেওয়ার পরও তা প্রতিপালনে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এতোদিন মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে ‘নিশ্চুপ’ ছিল। এমনকি এ সংক্রান্ত মিটিং পর্যন্ত হয়নি। চার বছরে এবার ইউজিসি নিজ উদ্যোগে আরেক দফায় আলটিমেটাম দিয়েছে।