বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » নানান অপরাধেঃ র্যাবের ২৩৬ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
নানান অপরাধেঃ র্যাবের ২৩৬ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ দেশে নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৪ বছরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের ২৩৬ জন সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাউকে করা হয়েছে চাকরি থেকে বরখাস্ত, আবার কাউকে দেওয়া হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর। এছাড়াও নানান ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধ দমন করতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়া সদস্যদের বিরুদ্ধে র্যাব সবসময় সজাগ রয়েছে। যখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাহিনীর মধ্যে স্বচ্ছতার পাশাপাশি জনগণের আস্থা অর্জন করেছে র্যাব।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যারা ভালো কাজ করবে তাদের যেমন পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যারা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে তাদেরও বিভিন্ন শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। এতে যেকোনও বাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকে।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এলিট ফোর্স হিসেবে গঠন করা হয় র্যাব। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ থেকে। এ বাহিনীতে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ড থেকে বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অপরাধ দমনে, বিশেষ করে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য অর্জন করে আসছে র্যাব। তবে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো র্যাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে সমালোচনা করে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। যা অনেকটা ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করছে। যদিও র্যাব দাবি করে আসছে, বিচারবহির্ভূত কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনও ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বাহিনীটি।
র্যাব বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ২৩৬ র্যাব সদস্যকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত চার বছরে ৩৭ সদস্যকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর। এছাড়া অন্যান্য গুরুদণ্ড শাস্তির আওতায় নেওয়া হয়েছে ১৯৯ জনকে। কাউকে তুলে নিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, ডিসিপ্লিন ভঙ্গ, মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয় র্যাবে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের।
র্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২১ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে ১১ জনকে, এছাড়া গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৪১ জনকে। ২০২০ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় পাঁচ জনকে, গুরুদণ্ড দেওয়া হয় ৫৪ জনকে। ২০১৯ সালে গুরুদণ্ড দেওয়া হয় ৬১ জনকে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় ১৭ জনকে। ২০১৮ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় চার জনকে, গুরুদণ্ড দেওয়া হয় ৪৩ জনকে।র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র্যাব-এ কর্মরত অবস্থায় সব কর্মকর্তার কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এলে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হয়ে থাকে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে কোনও ধরনের ছাড় দেওয়া হয় না। নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে বাহিনী থেকে এখন পর্যন্ত গত চার বছরে দুইশ’র বেশি র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণের আস্থা অর্জন করে র্যাব জনগণের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে। যারাই জনগণের নিরাপত্তার বিপরীতে গিয়ে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা যেকোনও বাহিনীর জন্যই রুটিন কাজ উল্লেখ করে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘যারা ত্রুটি-বিচ্যুতি করবেন, কর্তব্যে অবহেলা করবেন আইন ভঙ্গ করবেন; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বিবেচনায় শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে অভিযুক্তদের। যারা আইনবহির্ভূত কাজ করবে, সেই সঙ্গে যারা আইন মোতাবেক কাজ করে যাবে; এসব বিষয় বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভালো কাজের জন্য থাকতে হবে পুরস্কার, সেইসঙ্গে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার জন্য থাকতে হবে শাস্তির ব্যবস্থা। আর সেটার কার্যকারিতা থাকতে হবে।’