শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

BBC24 News
মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » জেলার খবর | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | লাইফস্টাইল | শিরোনাম | সাবলিড » মা-কখনও বাঘিনী, এমনই এক সাহসী-মা লিবিয়ায় গিয়ে মাফিয়াদের হাত থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনলেন
প্রথম পাতা » জেলার খবর | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | লাইফস্টাইল | শিরোনাম | সাবলিড » মা-কখনও বাঘিনী, এমনই এক সাহসী-মা লিবিয়ায় গিয়ে মাফিয়াদের হাত থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনলেন
৫০৪ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মা-কখনও বাঘিনী, এমনই এক সাহসী-মা লিবিয়ায় গিয়ে মাফিয়াদের হাত থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনলেন

---বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়ারা অপহরণ করে ইয়াকুবকে, অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে বসতভিটার একটি অংশ বিক্রি করে একমাত্র ছেলে ইয়াকুবকে লিবিয়ায় পাঠান মা শাহিনূর বেগম।

ছয় মাস ধরে ছেলের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় মা সুদূর লিবিয়া গিয়ে মাফিয়াদের হাতে বন্দী ছেলেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।
সেই সঙ্গে মাফিয়াদের কাছে আটকে থাকা আরও প্রায় ২৫০ জন বাঙালিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

মা শাহিনূরের এমন সাহসী ভূমিকা ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গত ২১ মার্চ ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কালিকাপুর নিজ গ্রামে ফেরেন শাহিনুর বেগম।

এর আগে ছেলেকে উদ্ধারের আশা দেখিয়ে দালালরা তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে। এখন প্রায় ২০ লাখ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে এই পরিবারটি।

শাহিনূর বেগম বলেন, আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। স্বামী লিবিয়ায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। চাচা শ্বশুরের কাছে বসতভিটার একটি অংশ বিক্রি করে ২০১৯ সালে ছেলেকে লিবিয়া পাঠাই। সেখানে গিয়ে তেলের কোম্পানিতে কাজ শুরু করে। আমার স্বামী ও ছেলে লিবিয়ায় কাজ করে যে টাকা পাঠাতো তা দিয়ে আমার সংসার ভালোই চলছিল। ২০২১ সালের শুরুতে আমার ছেলে মোবাইলে বলে- ‘মা আমি অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যেতে চাই। সেখানে ভালো টাকা ইনকাম। আমিও না করিনি। তখন জাহাঙ্গীর নামে এক দালালকে চার লাখ টাকা দিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে যাওয়ার পথে নৌকা লিবিয়ার কোস্টগার্ডের কাছে ধরা পড়ে।

সেখানে নির্যাতন সহ্য করে ২২ দিন জেলে থাকার পর কোস্টগার্ডকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ইয়াকুবকে ছাড়িয়ে আনে তার বাবা আবুল খায়ের। এ ঘটনার আট মাস পর ইয়াকুব আবারও স্বপ্ন দেখে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার। তখনই ঘটে অঘটন। ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়াদের হাতে ধরা পড়ে ইয়াকুব। তখন আমার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ছেলে ইয়াকুব বলেন, মাফিয়ারা আমাকে আটক করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা সব রেখে দেয়। এ সময় সেখানে আমাকেসহ প্রায় ৩০০ জনকে মাটির নিচে একটি ছোট অন্ধকার রুমে রাখা হয়। চোখের সামনে কত মানুষ একটু খাবারের জন্য হাহাকার করেছে। কত মানুষকে অসুস্থ হয়ে মরতে দেখেছি। বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনেছি। ঠিকমতো খাবার দিত না।

তিনি বলেন, মাফিয়াদের কাছে অনেক আগে আটক হওয়া সাতজন বাঙালি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করত। তারা আমাদের অনেক মারধর করত। কারণ মাফিয়ারা বলেছিল আমাদের ঠিকমতো শাসন করতে পারলে তাদের ছেড়ে দেবে। তাই তারা কথায় কথায় মারত। মারধরের ক্ষত চিহ্ন ও পোকামাকড়ের কামড়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরে। ৩০০ জনের জন্য ৩০০ রুটি দিলে সেই ৭ জন বাঙালি প্রায় ৩০-৪০টি রুটি রেখে দিত। বাকি রুটি আমরা ভাগ করে খেতাম। মাফিয়ারা বাঙালি দালালের মাধ্যমে জিম্মি করার বিষয়টি সবার পরিবারকে জানায়। ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে আমার পরিবার থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েও আমাকে ছাড়ত না। তখন শত চেষ্টা করে কারও সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বসে বসে মা-বাবার কথা মনে করে কান্না করতাম। শাহিনূর বেগম বলেন, প্রায় ছয় মাস আমার ছেলের সন্ধান না পেয়ে আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। লিবিয়াতে আমার স্বামী আবুল খায়ের ছেলের শোকে স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দালালদের টাকা দিয়েও আমার ছেলেকে খোঁজার কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিই ছেলের খোঁজে নিজেই লিবিয়া যাব। তখন গ্রামবাসী বলত আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। আরও কত কথা। আমার মন বলত আমার ছেলে বেঁচে আছে। তাই কুমিল্লা গিয়ে আমি নিজে পাসপোর্ট করি। তারপর আমার জামাইয়ের সহযোগিতায় ভিসা ও বিমানের টিকিট সংগ্রহ করি।

২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি লিবিয়ায় রওনা হই। ছেলের চিন্তায় আমি বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন বিমানবালারা আমাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখেন। তারা আমাকে অনেক হেল্প করেন। প্রথমে দুবাই যাই। মিশনে ২৪ ঘণ্টা ঠাণ্ডার মধ্যে বসেছিলাম। খাওয়া-দাওয়া কিছু করতে পারিনি। মাথায় শুধু একটা চিন্তা- এত টাকা খরচ করে লিবিয়া যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে ছেলেকে কীভাবে খুঁজব। কিছু বাঙালির সহযোগিতায় লিবিয়ার বেনঘাজিতে স্বামীর কাছে যাই। তখন আমার স্বামী খুব অসুস্থ ছিলেন। তাই নিজেই ছেলের খোঁজে বের হয়ে পড়ি।

ছেলে ইয়াকুব বলেন, কয়েকমাস চেষ্টা করার পর আমাদের দেখাশোনা করত-এমন একজনের থেকে একটি মোবাইল চেয়ে নিতে সক্ষম হই। তখন বাবাকে কল দিয়ে বলি, মাফিয়ারা আমাকে আটকে রেখেছে। আমার জায়গার নাম বলি এবং কোনো দালালকে টাকা না দিয়ে অন্য কোনো পদ্ধতিতে আমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অনুরোধ করি। মাত্র ১৭ সেকেন্ড কথা বলতে পেরেছি।

শাহিনূর বেগম বলেন, ছেলের কল পাওয়ার পর আমি আরও পাগলের মতো হয়ে যাই। তখন আমি প্রতিজ্ঞা করি যেকোনো উপায়ে মাফিয়াদের থেকে আমার ছেলেকে উদ্ধার করব। তখন লিবিয়ায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন বাঙালিকে আমার ছেলের বিষয়টি খুলে বলি। তাদের সহযোগিতায় আমি বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগ করি। দূতাবাস ও আইওএমের কর্মকর্তারা সব শুনে আমাকে সাহায্য করেন। তখন সেখানে তাদের প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে আমার ছেলের ছবি এনে দেন। আমি ছবি দেখে চিনতে পারিনি। ছেলের এতো অবস্থা খারাপ ছিল। ছবিতে ছেলের অবস্থা দেখে চার দিন অসুস্থ ছিলাম।

আইওএমের কর্মকর্তারা লিবিয়া সরকারের সহযোগিতায় ইয়াকুবকে উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে সেখানে বন্দি থাকা আরও ২৫০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়। আমার ছেলে উদ্ধার হলেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। তারা আমাকে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। ছেলের কান্নার শব্দ শুনে আমিও কেঁদে ফেলি। তাকে একনজর দেখার জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। ছেলে তখন ত্রিপোলিতে ছিল, আর আমি বেনঘাজিতে।

বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় গত ১০ মার্চ আমার ছেলেকে দেশে পাঠানো হয়। আমিও তাদের সহযোগিতায় ১৬ মার্চ বাংলাদেশে এসে আমার ছেলের দেখা পাই। তখন দুইজনে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছি। ঢাকা ক্যাম্পে এক সপ্তাহ থাকার পর কুমিল্লায় নিজ গ্রামে এসে তার চিকিৎসা করাই। এখনও সে মানসিকভাবে অসুস্থ। অনেক কিছু মনে রাখতে পারে না।

মায়ের সাহসী ভূমিকা নিয়ে ইয়াকুব বলেন, আমার মা পৃথিবীর সেরা মা। আমি মরে যাব সেটা ভেবেছি, কিন্তু আমার মা আমাকে উদ্ধার করার জন্য টাকা ধার করে লিবিয়া যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আবারও প্রমাণ হলো মায়ের ভালোবাসার কোনো তুলনা করা যায় না।

প্রতিবেশী ওমর ফারুক বলেন, লিবিয়া গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করে মা ঘরে ফিরেছেন- বিষয়টি বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে এই ছেলের জন্য। মায়ের এমন ভালোবাসা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

শাহিনূর বেগম বলেন, কোনো মায়ের সন্তান যেন অবৈধভাবে ইতালি না যায়। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ- আমার ছেলের জন্য যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আমি আর তাকে বিদেশ পাঠাব না। বাংলাদেশি কিছু দালাল আমার ছেলেকে খুঁজে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমি তাদের নামে মামলা করব। আমার কষ্টের টাকা ফেরত চাই। আমরা বর্তমানে ২০ লাখ টাকা ঋণে রয়েছি। আমার ঘরটি ছাড়া আর কিছু নেই। সবাই সহযোগিতা করলে ঋণের চিন্তা থেকে মুক্ত হব।



আর্কাইভ

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত
পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ
ইলন মাস্কের রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে হাজির ট্রাম্প
লেবাননে নিহত দুই শতাধিক শিশু: ইউনিসেফ
মার্তিনেজের ধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়ালেন পুতিন
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হয়নি: হাসনাত
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি স্বাক্ষর