মাহে রমজান কৃচ্ছ্রসাধন ও আত্মসংযমের মাস
ড.আরিফুর রহমানঃ বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিন ধাপে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবেন। সারা বছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তারা যে পাপ করেছেন, তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার মোক্ষম মাস হলো এ রমজান। সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তারা যে নাজাতের পথ খুঁজবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাজার রজনীর শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। কুরআনের শিক্ষা হলো বিশ্বাসী মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে অশেষ কল্যাণ দান করা। কৃচ্ছ্রসাধন ও আত্মসংযমের এ মাসে তাই মানুষ আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার ওয়াদা করেন, তাদের সবরকম গুনাহ্ মাফ করে দেওয়ার জন্য আকুল প্রার্থনা করেন। এ মাসে আল্লাহ তার বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিতাপের বিষয় হলো, এ মাসেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী সততা আর ন্যায়নীতি ভুলে অতি মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতায় নামে। তারা রমজান মাসকে মুনাফা লোটার প্রায় হাতিয়ার করে ফেলে। যথেচ্ছভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর এই প্রবণতা আমাদের ব্যবসায়ীদের কৃচ্ছ্র আর আত্মশুদ্ধির বিপরীতে নিয়ে গেছে যেন। রমজানে বিশেষ কিছু খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা দোকানিরা এই বাড়তি চাহিদাকে মুনাফা লোটার হাতিয়ার করে তোলে। অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। রমজানের শিক্ষা অনুসরণের বদলে তারা যেন আরও সুযোগসন্ধানী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন। সর্বসাধারণের কথা বিবেচনা করে সরকারকে এ সময়ে চাল-ডাল-চিনি-ভোজ্যতেল-ছোলা-বুটসহ প্রধান খাদ্যশস্যের দামের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। রমজানে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট মানুষের দুর্ভোগের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নগরজীবনে অপরিহার্য উপকরণগুলোর সংকট কবে নিরসন হবে কে জানে! আমরা শুধু বলব, অন্তত রমজান মাসে যে কোনো উপায়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে নেওয়া হোক কার্যকর পদক্ষেপ। যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে।
রমজানে একশ্রেণির মানুষ সংযম ও কৃচ্ছ্রসাধনের পরিবর্তে ভোগ-বিলাসে মেতে ওঠে। সম্পদশালীদের ভেতর চলে ইফতার পার্টির প্রতিযোগিতা। অথচ ভোগ-বিলাস ও যথেচ্ছাচার ত্যাগ করে সহজ, সুন্দর ও অনাড়ম্বর জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় পবিত্র রমজানে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর। গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমজানেরই শিক্ষা। এ মাস মুসলমানদের জন্য আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উন্নতির সুযোগ এনে দেয়। এমন এক মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।