মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশের মেট্রোরেলে আরও ১ হাজার ৩৫০ কোটি ঋণ দিচ্ছে- জাপান
বাংলাদেশের মেট্রোরেলে আরও ১ হাজার ৩৫০ কোটি ঋণ দিচ্ছে- জাপান
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা: দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে দ্রুত এগিয়ে চলছে প্রকল্পের উত্তরার দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করা হবে। কাজ চলছে প্রকল্পের বাকি অংশেও।
উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে আরও ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বর্তমানে প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জাইকা ঋণ চলমান। ফলে বাড়তি ঋণযুক্ত হওয়ায় চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পে মোট জাইকা ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৭ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) নগরীর শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের মধ্যে ৪২তম ইয়েন লোন প্যাকেজের আওতায় চলমান মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে বিনিময় নোট ঋণচুক্তি সই হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মধ্যে এই বিষয়ে বিনিময় নোট চুক্তিসই হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহো হায়াকাওয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ।
ঋণে সুদহার ০ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। সেজন্য প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আর জাইকার অনুমতি নিয়েই মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে সুতরাং জাইকা বাড়তি ঋণ দিচ্ছে প্রকল্পে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণ থেকে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
যদিও প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন নতুন করে যে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বাড়ছে, তার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে আট হাজার ৪০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও জাইকার ঋণ থেকে আশা করা হচ্ছে ব্যয় হবে তিন হাজার ৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা।
১ জুলাই ২০১২ সাল থেকে ৩০ জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের কাজের পরিধি বাড়ছে। সেজন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরও প্রায় এক বছর বেশি সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ
প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়া প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও ই অ্যান্ড এম সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টের (টিওডি) জন্য ভূমি বরাদ্দ ও নকশা তৈরি, ট্রেন পরিচালনার বিদ্যুৎ খরচ ও এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি তৈরি, ফুটপাত নির্মাণ, পরামর্শক ব্যয় ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্যও ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাশাপাশি উত্তরা সেন্টার স্টেশনকে কেন্দ্র করে একটি ট্রান্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড হাব (টিওডি) নির্মাণ, স্টেশন প্লাজাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করা হবে এ টাকা। এসব পরিকল্পনাও ছিল না প্রকল্পটির মূল ডিপিপিতে। মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যয় বেশির পেছনে শুল্ক ও ভ্যাট খাতকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ডিএমটিসিএল।
সংস্থাটি আরও বলছে, প্রকল্প ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় বিভিন্ন পণ্য, নির্মাণসামগ্রী ও সেবা ক্রয় বাবদ সরকারকে শুল্ক-কর দিতে গিয়ে। এর বাইরে জমি অধিগ্রহণের পেছনেও একটা বড় ব্যয় হয়। সংশোধিত ডিপিপির প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের প্রায় ২৩ শতাংশই খরচ হচ্ছে শুল্ক-কর ও জমি অধিগ্রহণ খাতে। পরামর্শক খাতেও ব্যয় বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসরণে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করায় মেট্রোরেল লাইন- ৬ এর বর্তমান দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটারে উন্নীত হয়। বাড়তি অংশের জন্য প্রকল্পে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি ঋণ দিচ্ছে জাপান।
কিছু নতুন খাত অন্তর্ভুক্তি
পরামর্শক নিয়োগ খাতে ১৩৫ কোটি, ইউটিলিটি সংযোগ খাতে ১০ কোটি, লাইসেন্স ফি নবায়ন খাতে ১০ কোটি, ডিজিটাল আর্কাইভ সফটওয়্যার খাতে ৫০ লাখ, রোলিং স্টকস (মতিঝিল টু কমলাপুর) খাতে ৫০ কোটি ১৪ লাখ সিভিল ওয়ার্কস (মতিঝিল টু কমলাপুর) খাতে ১১৬০ মিটার অন্তর্ভুক্তিতে ৭১৪ কোটি ৫৬ লাখ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণে ৯২ কোটি ৮০ লাখ ও বৈদ্যতিক বিল খাতে ২০০ কোটি টাকা লাগবে।
নতুন খাতের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি
ভূমি অধিগ্রহণ ও কেনা খাতে ১৮ দশমিক ৭৯ হেক্টর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফলে জমির মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৫ দশমিক ৭৯ হেক্টর। এখাতে মোট ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৭৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জেনারেল পরামর্শক সেবা খাতে ১৩ হাজার ৫৪৪ জনমাস বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ খাতে ৫৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সিডি ভ্যাট খাতে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়ছে।
মেট্রোরেলের স্টেশন সংখ্যা বেড়ে ১৭টি
২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন হওয়ার কথা ছিল। এখন নতুন করে কমলাপুরে একটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণী, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।
প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন- ৬) একটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত জনগরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। উত্তরা থেকে কমলাপুর দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
মেট্রোরেলের সর্বশেষ সার্বিক গড় অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব হতে আগারগাঁও অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।