মঙ্গলবার, ২২ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বিশ্ব জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে হাঁটছে : জাতিসংঘ
বিশ্ব জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে হাঁটছে : জাতিসংঘ
বিবিসি২৪নিউজ,ফরিদা ইয়াসমিন, জাতিসংঘ-যুক্তরাষ্ট্র থেকেঃ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল সোমবার বলেছেন, ব্যাপক মাত্রায় কার্বন দূষণ কমানোর প্রয়োজন আমলে না নিয়ে প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো বরং তা বাড়ানোর দিকেই এগোনোয় বিশ্ব ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে অবচেতনে হাঁটছে’।যুক্তরাজ্যের লন্ডনে টেকসইযোগ্যতা বিষয়ক এক সম্মেলনে বিশ্বসংস্থার মহাসচিব গুতেরেস গতকাল বলেন, এ গ্রহকে রক্ষা করতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যেই ‘লাইফ সাপোর্টে’।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃ সরকার প্যানেলের (আইপিসিসি)-এর তথ্য অনুসারে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে হবে। শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কার্বন নিরপেক্ষতা (বাতাসে গ্যাস নিঃসরণ এবং সরিয়ে নেওয়া সমান) অর্জন করতে হবে। এমনকি দেশগুলো যদি প্যারিস চুক্তিরপ্যারিস চুক্তির আওতায় নতুন গৃহীত অঙ্গীকারগুলো মেনে চলে তবুও চলতি দশক সমাপ্তির আগে নিঃসরণ ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
আগে ধারণ করা ভিডিও বার্তায় গুতেরেস বলেন, ‘সমস্যাটি ধীরে ধীরে বাড়ছে। আমরা জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে অবচেতনে ধাবিত হচ্ছি।’ উষ্ণায়ন দুই ডিগ্রির সীমার বাইরেও চলে যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যদি এ অবস্থাই যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যকে বিদায়ী চুম্বন দিতে পারি।’ আইপিসিসি’র ১৯৫টি দেশের দু সপ্তাহব্যাপী সভার কয়েক ঘণ্টা আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যটি এল। বাতাসে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস এবং বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেওয়ার বিকল্পগুলোর ওপর একটি প্রতিবেদন অনুমোদন দিতে আইপিসিসি’র এই সভা হচ্ছে।
গুতেরেস করোনাভাইরাস মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে ‘নির্লজ্জভাবে অসম’ আখ্যা দেন। মহামারির সময় পরিবেশ অনুকূল জ্বালানির দিকে ধাবিত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন জলবায়ু সম্পর্কিত পদক্ষেপগুলোকেআরো বিপথে চালিত করতে পারে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল ও গ্যাসের জন্য অন্যান্য দেশে ছোটাছুটি করার প্রবণতার তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘এটা পাগলামি। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি আসক্তির ফল হচ্ছে সবার একসঙ্গে ধ্বংস হওয়া।’
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) কর্তৃক গত বছর প্রকাশিত আন্তঃসরকারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা বিশ্বে তেল-গ্যাসনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প ও নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বেমানান।লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্ব না দেওয়া দেশগুলোর নাম না উল্লেখের রীতি ভেঙে গুতেরেস বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও আরো কিছু ‘কয়েকটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দেশ নিকট ভবিষ্যতে জলবায়ু সম্পর্কিত পরিকল্পনায় ‘অর্থপূর্ণ’ মাত্রার কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও আরো বেশ কিছু ‘উদীয়মান অর্থনীতির’ দেশের উন্নয়ন চাহিদা ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো তাদের জলবায়ু সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি পূরণে বাধা দেয়, বিশেষত তাদের কয়লা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো।
এ বিষয়ে গুতেরেস বলেন, উন্নত দেশগুলোর উচিত এসব উদীয়মান অর্থনীতির দেশকে কয়লার দূষণ থেকে ফিরিয়ে আনতে অর্থ, প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান সরবরাহ করা।তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমাদের গ্রহ দোষারোপের পালা সহ্য করতে পারবে না। পৃথিবী যখন জ্বলছে তখন আমরা একে অপরের দিকে আঙুল তুলতে পারি না।’
এসময় গুতেরেস বলেন, ধনী দেশগুলোর সংগঠন ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-কে অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য দেশগুলোকে কয়লা থেকে সরে আসতে হবে ২০৪০ সালের মধ্যে।