শনিবার, ১৯ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপে প্রাধান্য পাবে যেসব বিষয়
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপে প্রাধান্য পাবে যেসব বিষয়
বিবিসি২৪নিউজ,কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকাঃ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপোড়েন শেষ করে একসঙ্গে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলতে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের সর্বোচ্চ ফোরাম অংশীদারিত্ব সংলাপ হবে আগামীকাল রোববার (২০ মার্চ)। দুই পক্ষের ওই বৈঠকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়কে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাণিজ্যিক সুবিধা (ওয়াশিংটনের বাজারে নতুন করে জিএসপি সুবিধা চাইতে পারে ঢাকা), সামরিক যোগাযোগ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গুরুত্ব পাবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই পক্ষই চায় নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক এবং একে অন্যের উন্নতিতে অবদান রাখুক। উভয়েই চাচ্ছে, এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে এবং শক্তিশালী টেকসই সম্পর্ক গড়তে। এ বিষয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনীতিকরা কাজ করছেন। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকায় অংশীদারিত্ব সংলাপ হতে যাচ্ছে।
এরপর আগামী এপ্রিলে ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের আমন্ত্রণে আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করবেন।
আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে আরও দুটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে। এছাড়া, আগামী এপ্রিল-মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ারের ঢাকা সফরে আসার কথা আছে।
সংলাপ সামনে রেখে বেশ কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংলাপে বাংলাদেশের প্রাধান্যের বিষয়গুলো ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সূত্র জানিয়েছেন, ন্যুল্যান্ড আজ (১৯ মার্চ) বিকেলে ঢাকা সফরে আসছেন। তার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে প্রতিনিধিদলও ঢাকায় পৌঁছাবে। এ সফরে আন্ডার সেক্রেটারি ও তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে শক্তিশালী এবং সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।
জানা গেছে, এবারের ঢাকা-ওয়াশিংটন সংলাপ র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনাও করেছে বাংলাদেশ। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ ফোরামের এ বৈঠকে বাংলাদেশ এ ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুটিও সংলাপে গুরুত্ব পেতে পারে। ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘে ভোট হলেও সেখানে কারো পক্ষ নেয়নি বাংলাদেশ। তবে, ইউক্রেনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র জোরালো অবস্থান নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, বিশ্বের সব দেশই ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিপক্ষে সরব হোক। তাই, এবারের সংলাপে বিষয়টি উঠতে পারে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে দুটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে। এই দুটি চুক্তি হলো—জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা)। তবে, এখনই এই চুক্তি করতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। এই চুক্তির বিষয়ে আরও ধীরে পদক্ষেপ নিতে চায় ঢাকা।
বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় সোচ্চার। বিশেষ করে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সমাবেশের অধিকার ইত্যাদি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়ে আসছে। এবারের সংলাপেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিষয়টি উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর অংশীদারত্ব সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারি সংলাপে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।’
২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওয়াশিংটনে প্রথম অংশীদারি সংলাপ হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর একবার ঢাকা, পরের বার ওয়াশিংটনে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। তবে, করোনার কারণে গত দুই বছর এ সংলাপ হয়নি।
২০১৯ সালের ১২ জুন ওয়াশিংটনে সর্বশেষ সংলাপ হয়। শেষবারের সংলাপে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়তে উভয় পক্ষ একমত হয়। ঢাকা-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা সংলাপ ঘিরে ছিল নিরাপত্তা, মিলিটারি প্রশিক্ষণ, রোহিঙ্গা সংকট ও ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান ফ্লাইট ইস্যু। বৈঠকে ৬ সদস্য বিশিষ্ট মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-সহাকারী মন্ত্রী মাইকেল এফ মিলার। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকান অণু বিভাগের মহাপরিচালক ফেরদৌসী শাহরিয়ার। বৈঠকে নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতাকে প্রধান উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মার্কিন প্রতিনিধিদল বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময়, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও যৌথ অনুশীলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে জানায়। ঢাকা ও নিউ ইয়র্কেরমধ্যে বিমান ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও বেসামরিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়েও উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের তরফে বলা হয়, সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত আছে। উভয় দেশের ক্ষেত্রে পরিচিত ও নতুন নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে আলোচনা হয়।