সোমবার, ১৪ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক সিটিতে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি
যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক সিটিতে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি
বিবিসি২৪নিউজ,মোঃ সুমন মিয়া ( নিউইয়র্ক) যুক্তরাষ্ট্র থেকেঃ বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জনবহুল নগরী। সম্প্রতি এই নগরীর আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিন সিটির পাঁচটি বরোর কোথাও না কোথাও সংগঠিত হচ্ছে মারাত্নক অপরাধ। বিশেষ করে বন্দুক সহিংসতায় ঝড়ে যাচ্ছে নিরীহ মানুষের জীবন। পুলিশ সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না খুনীদের হাত থেকে। এছাড়া সাবওয়েতে ধাক্কা দিয়ে ফেলা দেয়া সহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনাও বাড়ছে সমানতালে। কোথাও স্বস্থি ও নিরাপদে নেই নগরবাসী। নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন অপরাধ কর্মের। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রুকলীনের ইস্ট নিউইয়র্কে মোদাসেসর খন্দকার নামে ৩৬ বছর বয়সী একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মধ্যরাতের দিকে তার নিজ বাসার কাছে খুন করা হয় তাকে। হত্যাকান্ডের এ ঘটনায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ম্যানহাটানের হারলেমে দুবৃর্ত্তের গুলিতে দুই পুলিশ অফিসারের নিহতের ঘটনা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জে ফেলেছে নূতন মেয়রকে। সত্তরের দশকে নিউইয়র্ক সিটি ছিল আইনশৃংখলার অবনতির অনিরাপদ এক নগরী। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অপরাধমুক্ত রাখার দৃঢ় সংক্প প্রকাশ করেছিলেন স্টেট গভর্নর ক্যাথি হোচুল ও সিটি মেয়র অ্যাডামস। নিউইয়র্কের জনসাধারণকে নিরাপদ রাখতে নানা কর্ম কর্মপরিকল্পনা ও ঘোষণা করেছেন তারা। অপরাধীদের কিছুতেই ছাড় দেবেন না এমন দৃঢ়তা দুজনের কন্ঠে। এজন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক ষ্টেট সিটির সবার সহযোগিতা চেয়েছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর মেয়র অ্যাডামস নিউ ইয়র্কের বিতর্কিত জামিন সংস্কার আইন পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্রীয় আইন প্রণেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন। যাতে বিচারকদের বিবেচনা করার অনুমতি দেয়া হয় যে, একজন ব্যক্তিকে কারাগার থেকে বের করে দেওয়ার আগে সে বিপজ্জনক কিনা। মেয়র অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর সাথেও এ নিয়ে দেখা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্ক বাসি এবং জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফেডারেল সরকার বন্দুক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। সিটির সাবওয়েকে নিরাপদ করতে ইতিমধ্যে হোমলেস মুক্ত করার প্রক্রিয়া থেকে শুরু হয়েছে। আইন প্রয়োগ বৃদ্ধি করে গৃহহীন এবং মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের যত্ন নেয়ার নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন মেয়র অ্যাডামস। এতকিছুর পরও নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধপ্রবণতা কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। চলতি বছরের জানুয়ারি অপেক্ষা ফেব্রুয়ারিতে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮℅ দাড়িয়েছে। গত ৩ মার্চ নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নিউইয়র্ক পুলিশ জানায় প্রতিটি বড় অপরাধ বিভাগের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। কেবল সিটি গুলির ঘটনা সামান্য হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসে খুনের সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ২৯ এবং থেকে ৩২ হয়েছে,যেখানে বন্দুক হামলার ঘটনা ৭৭ থেকে কমে ৭৬ হয়েছে। অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিভাগে অপরাধের মাত্রা মারাত্নক হারে বেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে ধর্ষন ৩৫.৪ শতাংশ। গাড়ি চুরির ঘটনা গত বছর ছিল ৫২৯ টি, যা এ বছর দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩ তে। এছাড়া ডাকাতি ৫৬ শতাংশ, চুরি ৪৪ শতাংশ, এবং হামলা ২২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে সিটির পরিবহন সেক্টর ও অপরাধ বৃদ্ধি থেকে রেহাই পায়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৮২ টি পরিবহনে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। যা ২০২১ সালের একই মাসের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি। সিটিতে হেট ক্রাইমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইহুদি জনসংখ্যার ওপর হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে 400%। এশিয়ানদের ওপর ১২৫ শতাংশ। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ পুরুষ ও মহিলাদের অপরাধমূলক আচরণের গভীর মূল কারন গুলোকে সক্রিয়ভাবে মোকাবেলা করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার ফিচ্যান্ট।নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতি অপরাধ কর্মকান্ডে সিটিবাসী যেমন উদি¦গ্ন, তেমনি প্রচন্ড চাপে আছেন মেয়র এরিক এডামস। ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের কর্মকর্তাদেও সাথে বৈঠক করেছেন। যেকোন মূল্যে সিটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।