শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | শিরোনাম | সাবলিড » রাশিয়ার হামলায় ইইউর সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
রাশিয়ার হামলায় ইইউর সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
বিবিসি২৪নিউজ,ইইউ প্রতিনিধিঃ আগ্রাসী রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেইনের সৈন্যদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে গোলার আঘাতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লাগার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
ইউক্রেইন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার বাহিনী শুক্রবার ভোরের দিকে ইউক্রেইনের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের এনারহোদার শহরে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলের জন্য আক্রমণ করার পর একটি ট্রেইনিং বিল্ডিংয়ে গোলা এসে পড়ে এবং একটি অংশ আগুন ধরে যায়।
ওই খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, কারণ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং তেজিস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে তা বিশাল এলাকাজুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করবে।
পরে ওই কেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরগুলো নিরাপদে বন্ধ করে দিয়ে বিপুল আকারের কনটেইনমেন্ট পরিকাঠামোর মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী জেনিফার গ্র্যানহোম জানান।
এক টুইটে তিনি বলেন, জাপোরিঝিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ইউক্রেইনের জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। সেখানে তেজিস্ক্রিয়ার মাত্রা বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এক টুইটে জানায়, জাপোরিঝিয়ার জরুরি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
প্ল্যান্টেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি জানিয়ে ওই কেন্দ্রের মুখপাত্র আন্দ্রেই তুজ সিএনএনকে বলেছেন, তাদের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। কেউ হতাহত হওয়ার খবর মেলেনি।
ছয় ইউনিটের ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। ইউরোপে এরচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আর নেই।
দেশটির পারমাণবিক বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এনারগোটমের তথ্য অনুযায়ী, ওই কেন্দ্রে ৪০ থেকে ৪২ বিলিয়ন কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা ইউক্রেইনের মোট উৎপাদনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এবং দেশটিতের উৎপাদিত মোট পারমাণবিক বিদ্যুতের প্রায় ৪৭ শতাংশের সমান।
এই প্ল্যান্টে সার্বক্ষণিক রেডিয়েশন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে এবং ৩০ কিলোমিটার রেডিয়েশন কন্ট্রোল জোন রয়েছে।
রাশিয়ার গোলার আঘাতে সেখানে আগুন লেগে যাওয়ার খবর জানিয়ে ভোরে একটি টুইট করেন ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা।
আগুন নেভানোর জন্য ওই এলাকায় লড়াই থামিয়ে ফায়ার ফাইটারদের কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল দুর্ঘটনার চেয়ে দশগুন ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হবে।ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এর পরপরই এক ভিডিও বার্তায় বলেন, রাশিয়ার ট্যাংক পরিকল্পিতভাবে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গোলা ছুড়েছে।
তিনি বলেন, “ইউরোপবাসী জেগে ওঠো, তোমাদের রাজনীতিবিদদের বল যে রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেইনে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা করেছে।”
ইউক্রেইনের জরুরি বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, যে ট্রেইনিং বিল্ডিংয়ে গোলা পড়েছে, তার তিনটি তলায় আগুন জ্বলছিল। কিন্তু রুশ বাহিনীর টানা আক্রমণের মধ্যে ফায়ার ফাইটাররা সেখানে পৌঁছাতে পারছিলেন না।
কযেক ঘণ্টা পর ওই এলাকার লড়াই থামার খবর দেন এনারহোদারের মেয়র দিমিত্র ওরলভ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে এবং এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয় বলে ইউক্রেইনের জরুরি বিভাগের এক ফেইসবুক পোস্টে জানানো হয়।