বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » ইউক্রেন যুদ্ধের খবর রাশিয়ার টেলিভিশনে যেভাবে দেখানো হচ্ছে
ইউক্রেন যুদ্ধের খবর রাশিয়ার টেলিভিশনে যেভাবে দেখানো হচ্ছে
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়ার টেলিভিশনগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধের খবর যেভাবে দেখানো হচ্ছে সেটিকে ‘অল্টারনেটিভ রিয়েলিটি’র চেয়ে ভালো উদাহরণ বুঝি আর কিছু হতে পারে না। বিবিসি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশনের বুলেটিন যখন শুরু হচ্ছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের টিভি টাওয়ারে হামলার খবর দিয়ে, তখন রুশ টেলিভিশনের খবরে বলা হচ্ছিল যে নানা শহরে এসব হামলার জন্য ইউক্রেন নিজেই দায়ী।
রাশিয়ার টেলিভিশন দর্শকরা এই যুদ্ধের কী চিত্র আসলে দেখতে পাচ্ছেন? বেতার তরঙ্গে কী ধরণের খবর তারা শুনতে পাচ্ছেন? রাশিয়ার প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ক্রেমলিন বা তাদের ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব চ্যানেলে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ গত ১ মার্চ, মঙ্গলবার যুদ্ধের কী ধরনের খবরাখবর পেয়েছেন, তার একটি খণ্ডচিত্র এ রকম:
রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি টেলিভিশন হচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন ‘চ্যানেল ওয়ান’।প্রতিদিন সকালে এই চ্যানেলে ‘গুড মর্নিং’ বলে যে অনুষ্ঠানটি হয়, সেটি অন্য যেকোন দেশের টেলিভিশনে সকালের অনুষ্ঠানের মতো বলেই মনে হবে- এটি সংবাদ, সংস্কৃতি এবং হালকা বিনোদনের মিশ্রণে তৈরি একটি অনুষ্ঠান।
তবে মঙ্গলবার এই অনুষ্ঠানে মস্কো সময় সকাল সাড়ে পাঁচটায় উপস্থাপক ঘোষণা দিলেন, তাদের অনুষ্ঠানসূচিতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে কিছু ঘটনার জন্য, ফলে আরও বেশি করে খবর এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থাকবে অনুষ্ঠানে। যেসব খবরাখবর অনুষ্ঠানে প্রচার করা হলো, তাতে ধারণা দেয়া হলো যে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে বলে যেকথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যে এবং তা ‘আনাড়ি দর্শকদের’ বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।
‘ইন্টারনেটে যেসব ফুটেজ ক্রমাগত ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোকে ভুয়া ছাড়া আর কিছু বলে বর্ণনা করা যায় না,’ বলছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক।
আর তখন দর্শকদের দেখানো হচ্ছিল এমন কিছু ছবি, যেগুলো নাকি ‘আনাড়ি-ভাবে ভার্চুয়াল জালিয়াতির’ মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
আরও পরে মস্কো সময় সকাল আটটার দিকে আমরা আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র সকালের বুলেটিন শুনছিলাম। এটির মালিক ক্রেমলিনের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশাল কোম্পানি গ্যাজপ্রমের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান।
এটি কেবলমাত্র ডনবাস অঞ্চলের খবর দিচ্ছিল, যেটি ইউক্রেনের পূর্বদিকে।গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যখন তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল, তখন সেটি কিন্তু এই অঞ্চলেই শুরু করার কথা বলা হয়েছিল। এই অভিযান শুরুর লক্ষ্য নাকি ছিল ‘ইউক্রেনের বেসামরিকীকরণ’ এবং ‘নাৎসিদের নির্মূল’ করা।
মাইলের পর মাইল দীর্ঘ যে রুশ সামরিক কনভয় এখন সাপের মতো এঁকেবেঁকে বেলারুস থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে - যেটি ছিল গতকাল বিবিসির রেডিও ফোর এর সংবাদ বুলেটিনের প্রধান খবর - সেটির কোন উল্লেখই তাদের রিপোর্টে ছিল না।
এনটিভির একজন উপস্থাপক বললেন, ‘আমরা শুরু করছি ডনবাসের সর্বশেষ খবর দিয়ে। এলএনআর (লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক) যোদ্ধারা তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে, তারা তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে, অন্যদিকে ডিএনআর (দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক) ইউনিটগুলো ১৬ কিলোমিটার এগিয়েছে।
’
উপস্থাপক এখানে মস্কোর সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীদের কথা বলছিলেন, যারা আট বছর আগে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের পর হতে তথাকথিত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রোসিয়া ওয়ান এবং চ্যানেল ওয়ান রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চ্যানেল - তবে দুটিই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। এই দুটি চ্যানেলের খবরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছিল। রোসিয়া ওয়ানের একজন উপস্থাপক বলেন, ইউক্রেনের বেসামরিক মানুষের জন্য হুমকি আসছে ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীদের দিক থেকে, রাশিয়ার বাহিনীর দিক থেকে নয়।
ওরা বেসামরিক মানুষকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের সামরিক অস্ত্রশস্ত্র আবাসিক এলাকায় মোতায়েন করছে এবং ডনবাস অঞ্চলের শহরগুলোতে গোলা দাগছে।
চ্যানেল ওয়ানের উপস্থাপক ঘোষণা করলেন যে, ইউক্রেনের বাহিনী ‘আবাসিক ভবনে গোলা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে’ এবং তারা গুদামঘরে অ্যামোনিয়া দিয়ে বোমা হামলা চালাতে চায় - এটি তারা করছে বেসামরিক লোকজন এবং রাশিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়ার উদ্দেশ্যে।
ইউক্রেনে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো এখানে যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে না। তার পরিবর্তে একে বর্ণনা করা হচ্ছে “অসামরিকীকরণের” একটি পদক্ষেপ হিসেবে, যার অংশ হিসেবে সামরিক স্থাপনা টার্গেট করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সব টেলিভিশন চ্যানেলে উপস্থাপক এবং সংবাদদাতারা বেশ আবেগপূর্ণ ভাষা এবং ছবি ব্যবহার করেন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার এই ‘বিশেষ সামরিক অভিযানকে’ তুলনা করেন নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের লড়াইয়ের সঙ্গে।ইউক্রেনকে দোষারোপ
প্রেসিডেন্ট পুতিনের সেই দাবিরই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে, যেটি তিনি গত সপ্তাহে করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছিলেন যে ইউক্রেন নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করে।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে যখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের অভিযান দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে কি-না, তখন রাশিয়ার টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে এই অভিযান বেশ সফল। ইউক্রেনের কত সামরিক সরঞ্জাম আর অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয়েছে, তার নিয়মিত আপডেট দেয়া হচ্ছে।
সকালের সংবাদে বলা হলো, ইউক্রেনের এগারোশো’ সামরিক স্থাপনা বিকল করে দেয়া হয়েছে এবং শত শত সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষের কোন হতাহতের খবর সেখানে নেই