বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » আনন্দ-বিনোদন | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | লাইফস্টাইল | শিরোনাম | সাবলিড » শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন
শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন
বিবিসি২৪নিউজ,বিধান চন্দ্র মন্ডল, কলকাতা থেকেঃ বাংলা গানের জগতের কিংবদন্তী শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় মারা গেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
মিসেস মুখোপাধ্যায় ২৭শে জানুয়ারি থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই তার কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ে, যদিও কোভিডমুক্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
এর পরে তার একটি অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। তবে সোমবার রাত থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার’
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, সিনেমার প্লেব্যাক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্র সঙ্গীত আর নজরুল গীতি, পুরাতনী গানেও সমান দক্ষতার সঙ্গে বাঙালির মন জয় করে গেছেন।
তার গাওয়া ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার’ বা ‘চন্দন পালংকে শুয়ে একা একা কী হবে’ বা ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ - এমন সব গান বাংলা আধুনিক গানের ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
যদিও শুধু কোনও একটা দিন নয় - সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ৯০ বছরের প্রায় গোটা জীবনটাই ছিল গানের।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা তার বাবার কাছেই।
১৪ বছর যখন তার বয়স, তখন একটি গানের পরীক্ষা হত, যার নাম ছিল গীতশ্রী। সেই পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নামের আগে তখন থেকেই গীতশ্রী পদবী জুড়ে গিয়েছিল।
এর পরেই তিনি শুরু করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য গান।
তবে তার প্রথাগত সঙ্গীত শিক্ষা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে - উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খায়ের কাছে রীতিমতো নাড়া বেঁধে।
উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁয়ের মৃত্যুর পরে তার ছেলে মুনাব্বর আলি খাঁয়ের কাছে শিক্ষা নিয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
যদিও তার আগেই শচীন দেব বর্মনের নজরে পড়ে গিয়ে মুম্বাই গিয়েও হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক গাইতে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক বছরের জন্য।লতার সাথে ছিল বিশেষ সখ্যতা
মুম্বাইতে প্রথম যে ছবিটিতে প্লেব্যাক গেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সেই তারানা ছবিতে লতা মঙ্গেশকারও গান গেয়েছিলেন।
সে সময়েই লতা মঙ্গেশকারের সঙ্গে যে সখ্যতা গড়ে ওঠে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের, তা টিকে ছিল পরবর্তী সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে।
লতা মঙ্গেশকারের মৃত্যুর খবর অবশ্য হাসপাতালে জানানো হয় নি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে।
মুম্বাই থেকে ফিরে সঙ্গীত শিক্ষার পাশাপাশিই একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
তার আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জুটি নেপথ্য গানে, আর পর্দায় উত্তম সুচিত্রা জুটি - এই রসায়ন বহু বাংলা ছবিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
‘জয়জয়ন্তী’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘সন্ধ্যা দীপের শিখা’, ‘সপ্তপদী’র মতো সিনেমায় তাঁর গাওয়া গান এভার গ্রিন হয়েই থেকে গিয়েছে।
১৯৭১ এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
তার জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সহায়তা করতে দেখা গিয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যেমন গান রেকর্ড করে দিয়েছিলেন তিনি, আবার শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি গেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’ গানটি।
সেই ছোটবেলায় গীতশ্রী সম্মান পাওয়ার পর থেকে বহু সম্মান পেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেরা নারী প্লেব্যাক সিঙ্গার যেমন হয়েছেন, তেমনই ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে দিয়েছে বঙ্গ বিভূষণ সম্মান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অনুরোধেই একটি সরকারি অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বহু বছর পরে জনসমক্ষে গান গেয়েছিলেন।
অবশ্য ভারত সরকারের পদ্ম সম্মান কোনও দিন পান নি তিনি - এবছর যদিও তাকে পদ্মশ্রী দিতে চেয়েছিল ভারত সরকার, তবে তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।