বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » আইন-আদালত | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত কেন ঝুলে আছে?
বাংলাদেশে সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত কেন ঝুলে আছে?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ দেশে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি দম্পতি হত্যা মামলার বিচার, চার্জশিট তো দূরের কথা ১০ বছরে তদন্তই শেষ হয়নি। ৮৫ বার সময় নিয়েও তদন্তকারীরা আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেননি। ৮৬ বারের জন্য সময় চেয়েছেন।
জানা গেছে সময় নেয়ায় সেঞ্চুরিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ তদন্ত এখন আর দেশে নেই। ঝুলে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে কবে ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না।এই মামলার যেহেতু কোনো চার্জশিট হয়নি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পিপিও নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতে মামলাটি দেখছেন জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও)। মামলার তদন্তকারী যেমন বদলি হয় তেমনি জিআরও বদলি হয় বারবার। তদন্তকারীরাও আদালতে যান না। জিআরও সময় চেয়ে একটি মুখস্থ আবেদন করেন । আর নতুন সময় ধার্য হয়ে যায়। তারিখের পর তারিখ বাড়ে।
এখন এই মামলার জিআরও হলেন, সাব ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন। তিনি জানান,”আমার কাছে যে মামলাগুলো আছে তার মধ্যে এই মামলাটিতেই সবচেয়ে বেশি সময় নেয়া হচ্ছে। আর কোনো মামলায় ৮৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে বলে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমার অভিজ্ঞতায়ও এরকম ৮৫ বারেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারার ঘটনা দেখিনি। ফৌজদারি মামলায় আমার অভিজ্ঞতায় এত সময় লাগে বলে আমি আর দেখিনি। হয়তো মামলাটা সেনসেটিভ তাই এত সময় লাগছে।”
গত ২৪ জানুয়ারি ছিলো এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার ৮৫ তম তারিখ। জমা না দেয়ায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালত মামলার পরবর্তী প্রতিবেদন দেয়ার সময় ধার্য করেছেন ২৩ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন র্যাবের কোনো কর্মকর্তা আদালতে জাননি । জিআরওর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করেন।র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা এখন আর সাগর-রুনি হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেন না। তাই মামলাটির তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কেও তেমন কিছু জানা যায়নি।
রুনির ভাই নওশের রোমান জানান,”আমাদের সাথে এখন আর এই মামলা নিয়ে র্যাবের কেউ যোগাযোগ করেন না। গত বছর এইদিনে তারা একবার যোগাযোগ করেছিলেন। এবার তাও করেননি। এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কে তাও আমরা জানি না।”
মূলত এখন মামলাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফরেনসিক ও ডিএনএ টেস্টের নামে ঝুলে আছে। ছয় বছর আগে সেখানকার দুইটি বেসরকারি ল্যাবে এই টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয় ।
র্যাবের সহকারী পরিচালক( মিডিয়া) এএসপি এ এন এম ইমরান খান বলেন,”আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ এবং ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। কবে পাব বলতে পারছি না। সে কারণেই আমরা তদন্ত শেষ করতে পারছি না। আমাদের তদন্ত এখনো চলছে।”
তাই পুরো বিষয়টিই এখনো অনিশ্চিত। সামনের তারিখে কেন, আরো কত তারিখ পর র্যাব প্রতিবেদন দিতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয় বছরে প্রতিবেদন আসেনি। কবে আসবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন,”সাগর-রুনির মামলায় অন্যান্য মামলার চেয়ে সময় বেশি লাগছে। সাধারণভাবে এত বেশি সময় লাগতে আমি দেখিনি। সাদা চোখে দেখলে এটাকে অস্বাভাবিকই মনে হবে। তবে আমি যতদূর জানি মামলাটির গভীর তদন্ত হচ্ছে। মামলা ডিটেক্ট না হলে তো প্রতিবেদন দিতে পারবেন না তদন্তকারীরা। তাই তারা সময় নিচ্ছেন। আর এটা সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলা। অনেক সেনসেটিভ। তাই হয়তো তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন দেবেন।”
আর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন,”আমার আইন পেশা জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বলছি কোনো হত্যা মামলায় ৮৫ বারেও তদন্তকারীদের প্রতিবেদন না দিতে পারার ঘটনা নজীরবিহীন। আমি এরকম আর দেখিনি। এখানে তদন্তকারীদের অবহেলা স্পষ্ট। মামলার মেরিট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরো জানান,”সাগর-রুনি মামলায় এখন তদন্তকারীরা আদালতে আসেন না। জিআরও আবেদন করে নতুন তারিখ নেন। সময় বাড়ানোর আবেদনে কোনো কারণও উল্লেখ থাকে না। আবার কখনো কখনো আবেদনও করা হয় না। আদালত কাউকে না পেয়ে নতুন তারিখ দিয়ে দেন।”
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। চার দিন পর ডিবিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে তদন্তের ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। সেই দিন আদালত র্যাবকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।
এই মামলায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছিলো বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা ইমরান খান। তবে তাদের সবাই জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছেন।