রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে কেন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে কেন?
বিবিসি২৪নিউজ,ফরিদা ইয়াসমিন ওয়াশিংটন থেকেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবার পর জো বাইডেনের এখনো এক বছর পার হয়নি কিন্তু দিন দিন কমছে তার জনপ্রিয়তা । সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, বাইডেনের ব্যাপারে মার্কিন ভোটারদের সমর্থন বা এ্যাপ্রুভাল রেটিং গত কয়েক মাস ধরেই ৪০ শতাংশের কোঠায় ওঠানামা করছে।
তারা মনে করছেন জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি সমাজে কোন অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারেননি । ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে যে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন - তাকে নিয়ে কেন আমেরিকান ভোটাররা হতাশ?
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজলি কিবরিয়া বলছিলেন, আফগানিস্তান থেকে বিশৃংখলভাবে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার থেকে শুরু করে করোনাভাইরাস মহামারি, তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া - এরকম বেশ কয়েকটি কারণে লোকে জো বাইডেনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে।
“বাইডেন যেভাবে এসেছিল - একটা বিরাট আশা নিয়ে যে ট্রাম্প তো গেল - এখন আমরা অন্য ধরনের দেশ , পলিটিক্স, পলিসি দেখবো। কিন্তু ঠিক যেটা সবাই আশা করছিল - ওরকম হয়নি। এখনো কিছু হয়নি,” বলেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির শেষ দিনগুলোয় কংগ্রেস ভবনে টাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন আক্রমণের ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ ছিল উত্তাল।
এক দিকে করোনাভাইরাস মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান সামাজিক বিভেদ, অসাম্য, আর বর্ণবাদী উত্তেজনা, তার ওপর আমেরিকান গণতন্ত্রের একেবারে কেন্দ্রে এই আক্রমণ - সব মিলিয়ে এক চরম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে, অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে - প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু এখন তার সমর্থকরাই হতাশ যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভালো করতে পারছেন না।এমনকি ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে যারা প্রায় চিরকাল ভোট দিয়ে এসেছে - সেই কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, নারী এবং তরুণ জনগোষ্ঠী - তারাই মি. বাইডেনের প্রেসিডেন্সি নিয়ে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন বাইডেনের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে না, অর্থবহ কোন পরিবর্তন সমাজে আসেনি।
কেন এই হতাশা? ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক আলি রীয়াজ বলছেন এর কারণ একাধিক।
তিনি বলছেন, “চারটা প্রধান কারণ। তার মধ্যে প্রথম যেটা তা হলো সাম্প্রতিক কালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বা গ্যাসের অর্থাৎ তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সেটা একটা বড় বিষয়, দ্বিতীয় কারণ হলো কোভিডটা যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসার কারণে সেটা নিয়ন্ত্রণ ঠিক যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। তার একটা কারণ হচ্ছে রিপাবলিকান দলের অনেক কট্টরপন্থী সমর্থক সেভাবে টিকা নিচ্ছেন না।
”তিন নম্বর হচ্ছে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার প্রসঙ্গ, আর চতুর্থ হচ্ছে - দলের ভেতরে এক ধরনের অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সেনেটে দুজন সদস্য - জো মানচিন এবং ক্রিসটেন সিনেমার ভুমিকা বড় বড় বাধা তৈরি করছে। ফলে নতুন কোন পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না যা তার সমর্থকরা দেখতে পাচ্ছেন। ফলে এই সমস্ত বিষয় মিলে প্রত্যাশার চেয়ে কম প্রাপ্তি এ হতাশা তৈরি করেছে। ”
তবে অন্য কেউ কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। এরা মনে করেন বাইডেনের সমর্থকরা হতাশ - কারণ তারা আসলে বড় বেশি আশা করে ফেলেছিলেন।
টেক্সাসের এ এণ্ড এম ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহনাজ মোমেনের মতে - অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন যে জো বাইডেন খুব বড় কোন পরিবর্তন আনার জন্য প্রেসিডেন্ট হননি।
আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের প্রথম ১০০ দিনে জনপ্রিয়তার পরিসংখ্যানআমাদের দেখতে হবে বাইডেন প্রার্থী হিসেবে কি প্রমিজ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন - নাথিং উইল ফান্ডামেন্টালি চেঞ্জ। উনি কিন্ত এটা পালন করেছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে থেকে তাকে প্রার্থী করা হয়েছিল কারণ তাকে মনে করা হয়েছিল সবচেয়ে ইলেকটেবল - এ জন্য নয় যে তিনি যা করতে চান সেটাই সবাই চায়।”
“আর অর্থনীতির সমস্যার মূল কারণ যে অথনৈতিক বৈষম্য তা তো অনেকদিন ধরেই বেড়ে চলেছে। কিন্তু কোভিডের কারণে বৈষম্য এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে, এত ট্যানজিবল হয়ে গেছে যে - আমি এ দেশে ২০ বছর ধরে আছি, কখনো এখানকার মিডিয়ায় অর্থনীতি নিয়ে এমন নেগেটিভ কথাবার্তা শুনিনি। কারণ সাধারণ মানুষের কষ্টটা এখন এমন পর্যায়ে যে, তা একেবারে অসহনীয় অবস্থায় চলে গেছে।”
ডেমোক্র্যাটদের যারা সনাতনী ভোটার - যেমন তরুণরা - তারা কী চেয়েছিলেন, এবং কী হবার কথা ছিল - যা হয়নি? একটি উদাহরণ দিলেন মেহনাজ মোমেন।
“আমি আপনাকে একটা কংক্রিট উদাহরণ দেই। তরুণরা যাদের একটা বড় ইস্যু স্টুডেন্ট ডেট - বা উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্ররা যে ঋণ নেয়। বাইডেন আসার পর ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল, বিল্ড ব্যাক বেটার - এসব উদ্যেগের মধ্যে প্রভিশন ছিল এই ঋণ মাফ করার। কিন্তু খুব কম পরিমাণ ঋণ মাফ করা হয়েছে। তা ছাড়া কিস্তি দেয়ায় যে সাময়িক বিরতি ছিল - তা আবার জানুয়ারি থেকে দিতে হবে। এ অবস্থায় তরুণ ভোটারদের মনে হতেই পারে যে আমরা এত উৎসাহ নিয়ে ভোট দিলাম, একটা ডেমক্র্যাটিক সরকার আনলাম, কিন্তু আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল - তা তো পূরণ হলো না।নাজলী কিবরিয়া বলছিলেন , প্রেসিডেন্ট তার সোশাল রিফর্ম প্যাকেজ নিয়ে এগুতে পারছেন না।