শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে গুম নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কমিটি যা বলল
বাংলাদেশে গুম নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কমিটি যা বলল
বিবিসি২৪নিউজ, অনলাইন ডেস্কঃ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) চলতি বছর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ পরিষদের গুমসংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ ডব্লিউজিইআইডি (ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস)। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়েছে।
ইউএনএইচআরসির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বছর তিন সেশনে অনুষ্ঠিত ঘরোয়া বৈঠকে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত নতুন–পুরোনো গুমের ঘটনা এবং এ–সংক্রান্ত পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করেছে। এর বাইরে সাধারণ অন্যান্য অভিযোগও পর্যালোচনা করেছে তারা।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও গুম–খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং তাঁদের ও সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ভিত্তিতে ওই পর্যালোচনার কাজটি সম্পন্ন করেছে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
সরাসরি সাক্ষাতে ওয়ার্কিং গ্রুপ গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন ও সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুম বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও সংগৃহীত তথ্য বিনিময় করেছে। পরে গ্রুপ লিখিতভাবে বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৫তম অধিবেশন শেষে তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। গত ২০ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপের ওই বৈঠক হয়। গত ৬ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন হালনাগাদ করেছে ওয়ার্কিং গ্রুপ। হালনাগাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে:সাধারণ অভিযোগ
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করতে গুমকে অব্যাহতভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। গুমের এসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
গুমের শিকার হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষাসংক্রান্ত ঘোষণার (ডিক্লারেশন অন দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) লঙ্ঘন ও এ ঘোষণা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
এ সাধারণ অভিযোগ অবশ্যই ২০১১ সালের ৪ মে, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ, ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ও ২০১৯ সালের ২২ মে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো অভিযোগগুলোর অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। এখনো পর্যন্ত এসব অভিযোগের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে যেমন সাড়া পাওয়ার অভাব ছিল; তেমনি বাংলাদেশে সফরের অনুরোধে সাড়া না পাওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত জবাব দেওয়া হয়নি, যা আরও বেশি অস্বস্তির। মনে রাখা দরকার, যত অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর সবই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব সংস্থা ও বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করার জন্য বারবার ও অব্যাহতভাবে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।.
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম করেছে। তাঁদের বেশির ভাগকে হয় মুক্তি দেওয়া হয়েছে কিংবা শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তবে বেশ কয়েকজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। সূত্রগুলো ৮৬টি নথিভুক্ত ঘটনার কথা জানিয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে অজানা রয়ে গেছে।
সূত্রগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ সক্রিয়ভাবে জড়িত; যা ২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হয়। নিয়মিতভাবে লোকজনকে তুলে নেওয়া, বিচারবহির্ভূতভাবে তাঁদের হত্যা করা ও লাশ গুম করার বেশির ভাগ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি সবার জানা।
একইভাবে অভিযোগ রয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত বা এমন অপব্যবহারের ঘটনা তদারকিতে আগ্রহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে দৃশ্যত পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং পুরস্কৃত করা হয়েছে।
ওয়ার্কিং গ্রুপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার বা রাজনৈতিক বিরোধিতার বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনা প্রতিরোধে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গুমসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সাজানো মামলার আসামি বানিয়ে গণগ্রেপ্তারের কৌশল নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
বিরোধীদের ওপর উল্লিখিত দমনমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গুম করার জন্য কীভাবে নজরদারি (শারীরিক নজরদারি; সেই সঙ্গে টেলিফোনে আড়ি পাতা; আন্তর্জাতিক মোবাইল গ্রাহক পরিচয়-শনাক্তকরণ, অবস্থানভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেম সফটওয়্যার ও ওয়াইফাই ইন্টারসেপ্টরের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম ট্র্যাকিং) চালানো হয় তা জানিয়েছে সূত্রগুলো। নজরদারির কৌশলগুলো মহামারির প্রেক্ষাপটে বেড়েছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের নিশানা করা হচ্ছে, যারা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের সাড়ার বিষয়ে সমালোচনামুখর বলে মনে হয়।
ওয়ার্কিং গ্রুপকে আরও জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত যাতে না হয়, সে জন্য গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গুম হওয়া প্রিয়জনকে মুক্তি বা চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।সূত্রগুলো ওয়ার্কিং গ্রুপকে জানায়, এমন অভিযোগ আছে, পুলিশ কর্মকর্তারা গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে অস্বীকার করেন বা শুধু তখনই গ্রহণ করেন, যখন সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার যেকোনো ধরনের অভিযোগ বাদ দেওয়া হয়। যখন অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়, তখন দৃশ্যত কোনো তদন্ত হয় না ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যেসব ক্ষেত্রে আদালতের তদন্তের নির্দেশ রয়েছে, সেখানেও এমনটা হয়।
নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান, ঘটনা তদন্ত করা ও দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যর্থতার ক্ষেত্রে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদারকি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা জরুরি। তবে প্রতিকারের এ ব্যবস্থাগুলোর ব্যর্থতা নিয়েও অভিযোগ আছে।
ওয়ার্কিং গ্রুপ কথিত আইনি ব্যবস্থার অস্তিত্ব সম্পর্কেও অবগত হয়েছে; যা অপরাধীদের দায়মুক্তি সহজতর করে। কথিত এ আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আছে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বা তা পুনরুদ্ধারে যেকোনো কাজের জন্য একজন সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি পন্থায় নিরাপত্তা দিতে জাতীয় সংসদের সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ওপর আরোপিত কোনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নিশ্চয়তা। এ আইনি ব্যবস্থার মধ্যে আরও আছে দায়িত্ব পালনকালে সংঘটিত অপরাধের জন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার আগে সরকারি অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। উপরন্তু সূত্রগুলো জানিয়েছে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্সের ১৩ ধারা র্যাবের যেকোনো সদস্যের বিচার কার্যত অসম্ভব করে তোলে।
সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়:
ক. উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আপনার কোনো অতিরিক্ত তথ্য ও মন্তব্য থাকলে জানান।
খ. আপনার সরকার কীভাবে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিদের (গুমের শিকার) অবস্থান নির্ধারণের উপায় হিসেবে দ্রুত ও কার্যকর বিচারিক প্রতিকার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে?
গ. আপনার সরকার কীভাবে নিশ্চিত করে যে গুম করার অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ঘটনার অভিযোগকারী, সাক্ষী, স্বজন, আইনজীবী বা তদন্তে অংশগ্রহণকারীদের চাপ বা ভয়ভীতি দেখানো বা প্রতিশোধের মাধ্যমে তদন্তের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করার অবস্থানে নেই? বিশেষ করে গুমের অভিযোগে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট অভিযোগের তদন্তের সময় সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আপনার সরকার কীভাবে নিশ্চিত করে?
ঘ. গুমসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিরা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান ও তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিদেশি মিশনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় না—আপনার সরকার এগুলো কীভাবে নিশ্চিত করে?
ঙ. কোনো ব্যক্তি, যিনি (গুমের) ঘটনা সম্পর্কে জানেন বা তাঁর বৈধ স্বার্থ আছে এমন কেউ গুমের ঘটনা নিয়ে একটি উপযুক্ত ও স্বাধীন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়েরে সক্ষম হবেন—আপনার সরকার কীভাবে তা নিশ্চিত করে? এমনকি, কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকলে, বিশেষ করে যদি এ ধরনের অভিযোগ নথিভুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে আপনার সরকার কীভাবে গুমের ঘটনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার বিষয় নিশ্চিত করে?
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করতে গুমকে অব্যাহতভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। গুমের এসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
গুমের শিকার হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষাসংক্রান্ত ঘোষণার (ডিক্লারেশন অন দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স) লঙ্ঘন ও এ ঘোষণা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
এ সাধারণ অভিযোগ অবশ্যই ২০১১ সালের ৪ মে, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ, ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ও ২০১৯ সালের ২২ মে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো অভিযোগগুলোর অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। এখনো পর্যন্ত এসব অভিযোগের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে যেমন সাড়া পাওয়ার অভাব ছিল; তেমনি বাংলাদেশে সফরের অনুরোধে সাড়া না পাওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত জবাব দেওয়া হয়নি, যা আরও বেশি অস্বস্তির। মনে রাখা দরকার, যত অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর সবই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব সংস্থা ও বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করার জন্য বারবার ও অব্যাহতভাবে গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
সংঘটিত অপরাধের জন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার আগে সরকারি অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। উপরন্তু সূত্রগুলো জানিয়েছে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্সের ১৩ ধারা র্যাবের যেকোনো সদস্যের বিচার কার্যত অসম্ভব করে তোলে।
১০.
সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়:
ক. উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আপনার কোনো অতিরিক্ত তথ্য ও মন্তব্য থাকলে জানান।
খ. আপনার সরকার কীভাবে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিদের (গুমের শিকার) অবস্থান নির্ধারণের উপায় হিসেবে দ্রুত ও কার্যকর বিচারিক প্রতিকার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে?
গ. আপনার সরকার কীভাবে নিশ্চিত করে যে গুম করার অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ঘটনার অভিযোগকারী, সাক্ষী, স্বজন, আইনজীবী বা তদন্তে অংশগ্রহণকারীদের চাপ বা ভয়ভীতি দেখানো বা প্রতিশোধের মাধ্যমে তদন্তের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করার অবস্থানে নেই? বিশেষ করে গুমের অভিযোগে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট অভিযোগের তদন্তের সময় সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আপনার সরকার কীভাবে নিশ্চিত করে?
ঘ. গুমসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিরা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান ও তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিদেশি মিশনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় না—আপনার সরকার এগুলো কীভাবে নিশ্চিত করে?
ঙ. কোনো ব্যক্তি, যিনি (গুমের) ঘটনা সম্পর্কে জানেন বা তাঁর বৈধ স্বার্থ আছে এমন কেউ গুমের ঘটনা নিয়ে একটি উপযুক্ত ও স্বাধীন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়েরে সক্ষম হবেন—আপনার সরকার কীভাবে তা নিশ্চিত করে? এমনকি, কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকলে, বিশেষ করে যদি এ ধরনের অভিযোগ নথিভুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে আপনার সরকার কীভাবে গুমের ঘটনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার বিষয় নিশ্চিত করে?
চ. আপনার সরকার অভিযোগকারী, সাক্ষী, গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন, তাঁদের আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, গুমের ঘটনার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির তথ্য প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষা এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে অসদাচরণ, তাঁদের ভীতি প্রদর্শন (অযাচিত নজরদারিসহ) বা প্রতিশোধের শিকার হওয়া থেকে রক্ষায় সহায়তায়
কী পদক্ষেপ নেয়?
ছ. পূর্ববর্তী পয়েন্টে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্ব্যবহার, ভীতি প্রদর্শন, প্রতিশোধ গ্রহণ বা অন্য কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সেই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আপনার সরকার কী পদক্ষেপ নেয়?
জ. পূর্ববর্তী পয়েন্টে উল্লেখিত ব্যক্তিদের হয়রানি ও প্রতিশোধের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশোধ গ্রহণের মতো ঘটনা ঘটে থাকলে তা তদন্তে আপনার সরকার কোনো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কি?
ঝ. আপনার সরকার কীভাবে ভুক্তভোগী ও তাঁদের স্বজনদের একটি কার্যকর প্রতিকার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে? যেখানে অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হওয়া, (গুম হওয়া ব্যক্তি) পুনরুদ্ধার, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, সন্তুষ্টির ন্যূনতম নিশ্চয়তা এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার ন্যূনতম নিশ্চয়তা থাকা উচিত।
ঞ. কীভাবে আপনার সরকার নিশ্চিত করে যে গুম করার অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের বিচার শুধু উপযুক্ত সাধারণ আদালতেই করা হয়।
ট. আপনার সরকার কীভাবে এটি নিশ্চিত করে, গুম করেছে বা এমন অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা এমন কোনো ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হবেন না, যেখানে তাঁদের কোনো ফৌজদারি মামলা বা নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে?