বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়া- দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়া- দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন আর নির্বিচারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে তাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এছাড়া ২০১৭ সালের আগে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয়ে আছে আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে ১১ লাথের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের গা ঢিলেমি আর নানা ফন্দিফিকিরে প্রত্যাবাসনের সেই চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ।
২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের চার বছর পূর্তি ঘিরে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে খ্যাতনামা সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাট। মাইকেল পি. স্কার্ফ, পল আর. উইলিয়ামস ও মিলেনা স্টেরিওর লেখা নিবন্ধটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ই. গ্লাডস্টোন বলেছিলেন, জাস্টিস ডিলেড ইজ জাস্টিস ডিনাইড। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, বিচার বিলম্বিত হওয়া মানে বিচার না হওয়া। আইজীবী হিসেবে যারা প্রায় প্রতিটি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ও হাইব্রিড ট্রাইব্যুনালে এবং বিশ্বব্যাপী দুই ডজনেরও বেশি শান্তি আলোচনায় উপদেশ দিয়েছেন, আমরা শান্তি ও জোট সংরক্ষণের নামে নৃশংসতা এড়িয়ে যাওয়ার ফলাফল সরাসরি দেখেছি।
বাইডেন প্রশাসনের সামনে ঐতিহাসিক একটি সুযোগ রয়েছে। সেটি হচ্ছে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা ঘটানো হয়েছে তাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে নৈতিক কর্তৃত্ব রয়েছে সেটি পুনঃসমর্থন করার সুযোগ রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের।
সেই সাথে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। ‘সব অপরাধের অপরাধ’ এর জন্য মিয়ানমার ও স্বতন্ত্র অপরাধীদের জবাবদিহি করার পক্ষে দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে কথা বলা উচিত বাইডেন প্রশাসনের।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে তা আমরা সরাসরি দেখেছি। ২০১৮ সালের মার্চ ও এপ্রিলে আমাদের ল ফার্ম পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড পলিসি গ্রুপ (পিআইএলপিজি) যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুরোধে বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শরণার্থী ক্যাম্পে মানবাধিকার বিষয়ে ডকুমেন্টেশন তদন্ত মিশন পরিচালনা করে।
আমাদের তদন্ত মিশনের উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তার যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করা এবং মিয়ানমারে নীতি নির্ধারকদের তা জানানো। আমাদের অভিজ্ঞ তদন্তকারীরা কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ১০০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। তাতে সহিংসতা, অবমাননা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে বহু মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতা।
আমাদের দলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক বহু আইনজীবী ছিলেন। তারা রোহিঙ্গাদের দেওয়া ১৫ হাজার পৃষ্ঠার সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করেন। এসব তথ্য বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা বিশ্বাস করার অনেক কারণ আছে।
২০১৮ সালে আমরা যখন আমাদের বাস্তব তথ্য প্রতিবেদন ও উপাত্ত স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছিলাম তখন ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারে সংঘটিত হওয়া এসব অপরাধকে গণহত্যা অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি।
গত এপ্রিলে বাইডেন প্রশাসন অন্য প্রেক্ষাপটে গণহত্যা অপরাধকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা প্রদর্শন করে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অটোম্যান সাম্রাজ্যে আর্মেনীয়দের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে গণহত্যা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ১০৬ বছর অপেক্ষা করা উচিৎ হবে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা গণত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে চুপ রয়েছে, আমরা ইতোমধ্যে ফলাফল দেখতে শুরু করেছি।
গত ৬ মাসে ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কক্সবাজার থেকে দূরবর্তী একটি (ভাসারচর) দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়েছে। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরে (শরণার্থী) যারা বাস করছেন তাদের অনেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তা কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে একজন নেতার ভূমিকা পালন করতে হবে।