আবারও রিমান্ডে পরীমনি
বিবিসি২৪নিউজ, আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিত্রনায়িকা পরীমনিকে আরও এক দিন রিমান্ডে পেল সিআইডি। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।গত ১৬ আগস্ট বনানী থানায় মাদকদ্রব্য আইনের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা তৃতীয় দফায় পরীমণির পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে পরীমনির উপস্থিতিতে এ রিমান্ড ও জামিনের শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মজিবুর রহমান ও নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে পরীমনির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পরীমনিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবারও পরীমনির জামিন ও রিমান্ড শুনানির জন্য তাকে আদালতে তোলা হয়েছিল। কিন্তু এদিন শুনানি হয়নি। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত বৃহস্পতিবার রিমান্ড ও জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।
এদিন দুপুরে দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে জামিন শুনানির জন্য নথি উপস্থাপিত হয়। ওই সময় বিচারক বলেন, মামলাটিতে গত ১৬ আগস্ট এই আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। যার শুনানি বৃহস্পতিবার ধার্য হয়েছে। তাই আজ (বুধবার) জামিন শুনানি করা যাবে না। বৃহস্পতিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির সময় করতে পারবেন।
ওই সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মজিবর রহমান বলেন, তাহলে আমাদের জামিনের আবেদন ফেরত দিন আমরাও নতুন করে জামিন আবেদন বৃহস্পতিবার দাখিল করব। তখন বিচারক তা মঞ্জুর করে আবেদন ফেরত দেন।
এর আগে গত সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরী জামিন আবেদনের শুনানি বুধবার ধার্য করেন।
গত ১৩ আগস্ট বেলা পৌনে ১২টার দিকে পরীমনি ও তার ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দিপু এবং রাজ ও তার ম্যানেজারকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ৩টা পর্যন্ত তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখার পর আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানো হয়। নতুনভাবে এদিন রিমান্ড আবেদন ছিল না।
তবে আসামিরা জামিন পেলে তদন্ত বিঘ্নিত হতে পারে এবং আসামিরা পলাতক হতে পারেন উল্লেখ করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
আবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে আসামিরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে আটকে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিকালে পরীমনির জন্য আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সৌরভী ও মজিবুর রহমান আদালতে জামিন আবেদন করে বলেন, পরীমনি ‘ভারটিগো’ এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এর রোগী। তিনি দীর্ঘসময় পুলিশ কাস্টডিতে (হেফাজতে) অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তিনি একজন প্রথম সারির চিত্রনায়িকা। ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ডিজিটাল তারকা হিসেবে বিশ্বের ১০০ জনের মধ্যে পরীমনির নাম রয়েছে। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জন্য গৌরবজনক।
আসামি পরীমনির জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্রের অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে পরীমনির যে চুক্তি হয়েছে তা ভঙ্গেরও সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি ‘প্রীতিলতা’ নামক একটি সরকারি সিনেমার জন্য ফটোশুট অলরেডি করা হয়েছে। এতোদিন রিমান্ডে থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়নি। জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া আবশ্যক।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য তুলে ধরে জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পরীমনি ও তার ম্যানেজারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৫ আগস্ট পরীমনি ও রাজ এবং তাদের ম্যানেজারকে মাদক মামলায় চারদিন করে ও গত ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দুই দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত। তবে গত ১০ আগস্ট আদালত রাজ তার ম্যানেজারের পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বিকাল চারটার পর বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। এ সময় পরীমনির বাসা থেকে ১৮.৫ লিটার বিদেশি মদ, চার গ্রাম আইস, এক স্লট এলএসডি এবং একটি পাইপ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় র্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান মাদক আইনে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।