বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশের কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না
বাংলাদেশের কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না
বিবিসি২৪নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ করোনার ডেলটা ধরনের দাপটের মধ্যে সবকিছু খুলে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। তবে মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো কাজটিও করতে চাইছেন না অধিকাংশ মানুষ। বৃহস্পতিবার ঢাকার গণপরিবহন-বিপণিবিতান সব জায়গায় এই চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের পাশাপাশি বাসচালক-সহকারীদের বেশির ভাগই মাস্ক পরছেন না। দোকানকর্মীদেরও একই দশা। অনেক মার্কেটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল থাকলেও সেগুলো আর কাজ করছে না।
এদিকে এদিনও ঢাকায় মোট বাসের অর্ধেক চলার বিষয়টি তদারকির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী না নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ বাসই তা মানেনি। বাসমালিকেরা অর্ধেক বাস সড়কে ছেড়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে বাসের সুপারভাইজার ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কে প্রায় সব বাস চলাচল করেছে। ঘাটারচর থেকে খিলগাঁওগামী মিডলাইন পরিবহনের বাস আছে ৪৫টি। এর মধ্যে মেরামতের কারণে বৃহস্পতিবার ১০টি বাস চলেনি। আবার ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড রুটে চলাচলকারী রজনীগন্ধা পরিবহনের ১০০টি বাস চলে। এর মধ্যে এদিন ১০টি বাস সড়কে নামেনি। মোহাম্মদপুর থেকে ডেমরা রুটের স্বাধীন পরিবহনের ৪০টি বাসের মধ্যে ৩৫টি বাস চলেছে।
কঠোর বিধিনিষেধ ওঠার পর গণপরিবহন চালুর দ্বিতীয় দিনে আগের দিনের তুলনায় সড়কে বাস কিছুটা বেশি ছিল। দূরপাল্লার বাসের মধ্যে ঢাকামুখী বাসগুলোতে তুলনামূলক যাত্রী বেশি ছিল। রাজধানীতে দিনভর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও চত্বরগুলো পার হতে যানবানগুলোকে ট্রাফিক সিগন্যালে পড়তে হয়। সকালে কর্মস্থলে যেতে এবং বিকেলে অফিস ছুটির পর অনেক বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। বিকেল পাঁচটার দিকে ফার্মগেট মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, শাহবাগগামী ২১টি বাসের মধ্যে ১৪টিতেই দাঁড়ানো যাত্রী আছে। এসব বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হয়।
চালক-সহকারীরা মানছেন না
বেলা পৌনে দুইটায় জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে রজনীগন্ধা পরিবহনের একটি বাস দেখা যায়। সেটির চালকের মাস্ক ছিল থুতনিতে নামানো, সহকারীর মুখে কোনো মাস্কই ছিল না। ভেতরে যাত্রীদের ১৮ জনের মধ্যে ৫ জনের মুখেও মাস্ক ছিল না। এই বাসস্ট্যান্ড থেকে ১১ মিনিটের মধ্যে রজনীগন্ধা পরিবহনের ছয়টি বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
এগুলোর একটিরও চালক ও সহকারীর মুখে মাস্ক ছিল না। তিনটি বাসে অন্তত ২৬ জন যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না। একই সময়ের মধ্যে অন্যান্য পরিবহনের ১৯টি বাস চলতে দেখা যায়। সেগুলোর ১২টি বাসের চালক ও চালকের সহকারীর মুখে মাস্ক ছিল না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, দূরপাল্লার বাসগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। তবে রাজধানীর ভেতরের এবং আশপাশের জেলাগুলোতে চলাচলরত বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, সিটি বাসগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন বেশিসংখ্যক ট্রিপ ও স্টপেজের কারণে এটা ব্যবস্থা করা অনেকটাই কঠিন। তিনি বলেন, বাসে চালক ও চালকের সহকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম। তবে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আরও কড়াকড়ি করা হচ্ছে।
মাস্ক না পরার নানা অজুহাত
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্স, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা সুপারমার্কেট, নূরজাহান সুপারমার্কেট, মৌচাক মার্কেটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা যায়নি। ছিল না হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও। চাঁদনী চক ও মৌচাক মার্কেটের প্রবেশপথে একটি জীবাণুনাশক কাঠামো থাকলেও তা সচল ছিল না।
বিকেলে এই ছয়টি বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতরের চেয়ে সামনের ফুটপাতে ও সড়কে হকারদের দোকানে ভিড় বেশি। মার্কেটে প্রবেশের সময় দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক থাকলেও ভেতরে গিয়ে অনেকেই তা খুলে ফেলছেন। বিক্রেতাদের অনেকে ছিলেন মাস্ক ছাড়া।
বিকেল চারটার দিকে গাউছিয়া-নিউমার্কেট পদচারী–সেতুর ওপর দিয়ে গাদাগাদি করে লোকজনকে পারাপার হতে দেখা যায়। এই সেতুতে ছিল অন্তত ২৫ জন হকার। তাঁদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। তাঁদের একজন মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মাস্ক পরলে গরম লাগে বলে তিনি পরেন না। পাশের আরেক হকার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাস্ক পরলে ক্রেতার সঙ্গে কথা বলা যায় না।
নিউমার্কেটের নিচতলার ভেতরের দোকানগুলোতে ক্রেতা একেবারেই কম ছিল। তবে বিপণিবিতানটির দক্ষিণ ভবনের দোতলা ও তিনতলা, বাইরের দোকান ও ফুটপাতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি ছিল। এসব দোকানের অধিকাংশ ক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বিক্রেতারা ছিলেন উদাসীন। ২৫টির মতো দোকান ঘুরে দেখা যায় ১৪টি দোকানের মালিক-কর্মচারীর মুখে মাস্ক নেই।
নিউমার্কেটের ভেতরে প্রসাধন পণ্যের দোকানি আবুল কাশেম। তাঁর মুখে মাস্ক ছিল না। তিনি বলেন, ‘মার্কেটের ভেতরে কাস্টমার কম। বাইরে ও ফুটপাতে কাস্টমার বেশি। সকাল থেকেই এখানে তেমন ক্রেতা আসেনি। মাস্ক পরে কী হবে?’
নিউমার্কেটে প্রবেশের ফটক মোট চারটি। সরেজমিনে দেখা যায়, চারটি ফটকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করার অবকাঠামো আছে। কিন্তু একটিও সচল নয়। ক্রেতারা ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেও তাপমাত্রা মাপার বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার ব্যবস্থা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, জীবাণুনাশক টানেল নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ আছে। অনেকে ওই জীবাণুনাশক টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে চান না।