বুধবার, ১১ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » টিকা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি সই
টিকা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি সই
বিবিসি২৪নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সিনোফার্মের টিকার দাম নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি নন-ডিসক্লোজার চুক্তি সই করেছে। এই চুক্তিবলে জানা যাবেনা ঠিক কতো দামে টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন চুক্তির কথা স্বীকার করেছেন। বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ি দাম প্রকাশ করা যাবে না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রীর কাছেও একই প্রশ্ন ছিল কতো দামে কেনা হয়েছে টিকা? মন্ত্রীর জবাব, আগে যে দামে কেনা হয়েছে তার চেয়ে বাড়েনি।
এর আগে গত ২৭শে মে মন্ত্রীপরিষদের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার ১০ ডলার করে সিনোফার্মের প্রতিডোজ টিকা কেনার তথ্য প্রকাশ করে দেন। এই খবর গণমাধ্যমে আসার পর প্রথমে আপত্তি জানায় শ্রীলংকা। তাদের ভাষ্য, একই টিকা চীন তাদের কাছে ১৫ ডলারে বিক্রি করেছে। এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।চীনের তরফে বলা হয়, বাংলাদেশ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। এরপর পহেলা জুন অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তারকে ওএসডি করা হয়।
বুধবারের বৈঠকে সিনোফার্ম থেকে আরো ৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর আগে সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনা হয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে। এজন্য টিকা লাগবে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ডোজ।
উল্লেখ্য যে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করার পর ভারত সরকার মার্চ মাসে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।তারা তখন বলে, নিজ দেশেই টিকার চাহিদা ব্যাপক, এই অবস্থায় রপ্তানি বন্ধ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এতে করে টিকার সঙ্কটে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করতে থাকে। তবে চীন ছাড়া অন্য কোন সূত্র থেকে টিকা কেনার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। সেরামের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ সরবরাহ করার কথা ছিল। সে অনুযায়ি বাংলাদেশ গত ৭ই ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। কোভ্যাক্স, সিনোফার্মসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে, ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭৩ জনের। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে এই মুহুর্তে টিকার মজুত আছে ৭৬ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ ডোজ। এ পর্যন্ত টিকার জন্য দুই কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ দিতে হবে। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় আছেন আরো এক কোটির বেশি মানুষ। এই মূহুর্তে আরো দুই কোটির মতো টিকার প্রয়োজন।
ওদিকে সিটি করপোরেশন এলাকায় বৃহস্পতিবার থেকে মর্ডানার টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই দিন থেকে মর্ডানার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হবে। মর্ডানার টিকার মজুত কম থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিদপ্তর জানিয়েছে, এসব কেন্দ্রে এখন মর্ডানার পরিবর্তে সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে।
গত কয়েক দিন ধরে টিকা নিতে কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। টিকা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রে রাতেই লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। অতিরিক্ত মানুষের কারণে স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না। কোনো কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চিত্রও দেখা গেছে।
এদিকে গত একদিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪২০ জন। শনাক্তের হার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে।