রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » আফগানিস্তান দূতাবাস থেকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের তুলে আনল বিমান বাহিনী
আফগানিস্তান দূতাবাস থেকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের তুলে আনল বিমান বাহিনী
বিবিসি২৪নিউজ, অমিত ঘোষ দিল্লি থেকেঃ ভারত জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবান যখন একের পর এক নতুন এলাকা দখল করে নিচ্ছে, তখন ভারত কান্দাহারে তাদের দূতাবাস থেকে প্রায় পঞ্চাশজন কূটনীতিক ও কর্মকর্তাকে আপদকালীন ভিত্তিতে উদ্ধার করে এনেছে।
কান্দাহার শহর ও তার আশেপাশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়াতেই শনিবার রাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি এয়ারক্র্যাফট গিয়ে কান্দাহার থেকে ওই কর্মকর্তাদের তুলে নিয়ে আসে - তবে বিমানটি তার যাত্রাপথে পাকিস্তানি আকাশসীমা এড়িয়ে গিয়েছিল বলেই সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভারতের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রায় দীর্ঘ দু’দশক ধরে আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকার পর মার্কিন সেনা খুব সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে পাকাপাকিভাবে বিদায় নিতে শুরু করেছে - আর তারপরই সে দেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।সে দেশে তালেবান নেতৃত্ব এমনও দাবি করেছে যে আফগানিস্তানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা এখন হয় তাদের দখলে, কিংবা খুব শিগগিরি তাদের কব্জায় চলে আসছে।
এই পটভূমিতে গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দিল্লিতে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা-কে তার দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে ‘ব্রিফ’ করেন।
এর পরেও কাবুলে ভারতের দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহেই জানানো হয়েছিল, তাদের দূতাবাস বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। কান্দাহার ও মাজার-ই-শরিফের ভারতীয় দূতাবাসও চালু থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু শুক্রবার থেকেই কান্দাহারের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে খবর আসতে শুরু করে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া যায়, শত শত তালেবান যোদ্ধা কান্দাহারের সীমানায় জড়ো হতে শুরু করেছে। এমন কী, শহরের ভেতর থেকেও বহু সশস্ত্র মানুষ তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন এবং কোনও কোনও এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে।এই পরিস্থিতিতে ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে কান্দাহার থেকে সব কূটনৈতিক কর্মকর্তাকে অবিলম্বে ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে।
সেই অনুযায়ী শনিবার রাতেই সেখানে পাঠানো হয় ইন্ডিয়ান এয়ারফার্সের একটি বিমান, সেটি কান্দাহারে নিযুক্ত সব ভারতীয় কর্মকর্তাকে গভীর রাতে দিল্লিতে নিয়ে আসে।
এদিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সেখানকার পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিকে আমরা প্রতিনিয়ত নজর রাখছি। তবে আমাদের কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তারি বিষয়টিই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে সরকারের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী ওই বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, কান্দাহারে ভারতীয় কনস্যুলেট মোটেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না।
এটিকে একটি ‘সাময়িক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাবুলের ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভিসা ও কনস্যুলার পরিষেবা দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
তবে আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত রোববার বিবিসিকে বলেছেন, ভারত যে বহুদিন ধরেই সে দেশে পায়ের তলায় শক্ত জমি চাইছে কান্দাহার থেকে কর্মকর্তাদের সরিয়ে আসার পদক্ষেপে তা অবশ্যই হোঁচট খাবে।
“যে তালেবান এখন কার্যত আফগানিস্তানের দখল নিতে চলেছে, তাদের সঙ্গে ভারতের ‘ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ’ বা কাজ চালানোর মতো সম্পর্ক রাখাও যে বেশ কঠিন, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট”, বলছেন ওই প্রাক্তন কূটনীতিবিদ।
আফগানিস্তানের হেরাত ও জালালাবাদে ভারতের যে দূতাবাস ছিল, গত বছরের এপ্রিলে কোভিড মহামারির সময় থেকেই সে দুটোও বন্ধ রয়েছে।