বুধবার, ৩০ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতা কি শুধুই একটি প্রাকৃতিক চক্রের অংশ?
জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতা কি শুধুই একটি প্রাকৃতিক চক্রের অংশ?
বিবিসি২৪নিউজ,ইইউ প্রতিনিধিঃ বিজ্ঞানীরা গত শতকে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ খোঁজা শুরু করেন৷ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিরা মনে করেন, মানুষের কাজের জন্য সৃষ্ট কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়৷ আসল কারণ কী?
প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছরের ইতিহাসে পৃথিবী কখনও হালকা, কখনওবা বেশি গরম অবস্থা ধারণ করেছে৷ সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘোরার সময় যখন তার অবস্থান সূর্যের কাছে এসেছে তখন পৃথিবী বেশি গরম ছিল, আর যখন সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব বেশি ছিল, তখন পৃথিবী অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ছিল৷এবার শিরোনামে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর পেতে কয়েকটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হলো:
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক হাজার বছরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বিবেচনা করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ এতে দেখা যায়, কয়েকশ বছর ধরে তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন না হলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে তা অনেক বেড়ে গেছে৷
এরপর ২০১৩ সালে ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ১১ হাজার বছরের তথ্য ব্যবহার করা হয়৷ সেখানেও প্রায় একই রকম ফল পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ সবশেষ বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর গত শতকে পৃথিবী আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত গরম হয়েছে৷ এই গবেষণায় আরও বলা হয়, গত দুই হাজার বছরে পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি ছিল৷ ফলে এই সময়টা মোটামুটি ঠাণ্ডা থাকার কথা৷ কিন্তু তাপমাত্রা অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি থাকার কারণে ঠাণ্ডা অবস্থাটা বোঝা যায়নি৷
Infografik Temperatur Anomalien, 1880 - 2019 EN
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ডাব্লিউএমওর ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট ২০২০’ রিপোর্ট বলছে, গতবছরের গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব সময়ের (১৮৫০-১৯০০ সাল, যখন জীবাশ্ম জ্বালানি তত ব্যবহৃত হত না) তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল৷ মানুষের কার্যক্রমের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ‘জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম বড় কারণ’ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়৷
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসিসি ২০০১ সালে জানিয়েছিল, শিল্পযুগ শুরুর আগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কয়েক হাজার বছর ধরে ২৮০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) ছিল৷ ১৯৯৯ সালে সেটা বেড়ে ৩৬৭ পিপিএম হয়৷ আর গত মে মাসে সেটা আরও বেড়ে ৪১৫ পিপিএম হয়েছে - সবশেষ প্রায় ৩০ লাখ বছর আগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি ছিল৷ তখন সাগরের পানির তাপমাত্রা প্রায় ৩০ মিটার বেশি ছিল এবং সেই সময় আধুনিক মানব সভ্যতার কোনো অস্তিত্ব ছিল না৷
লাইভ টিভি
বিজ্ঞানীরা গত শতকে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ খোঁজা শুরু করেন৷ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিরা মনে করেন, মানুষের কাজের জন্য সৃষ্ট কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়৷ আসল কারণ কী?
প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছরের ইতিহাসে পৃথিবী কখনও হালকা, কখনওবা বেশি গরম অবস্থা ধারণ করেছে৷ সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘোরার সময় যখন তার অবস্থান সূর্যের কাছে এসেছে তখন পৃথিবী বেশি গরম ছিল, আর যখন সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব বেশি ছিল, তখন পৃথিবী অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ছিল৷
এবার শিরোনামে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর পেতে কয়েকটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হলো:
১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক হাজার বছরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বিবেচনা করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ এতে দেখা যায়, কয়েকশ বছর ধরে তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন না হলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে তা অনেক বেড়ে গেছে৷
এরপর ২০১৩ সালে ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ১১ হাজার বছরের তথ্য ব্যবহার করা হয়৷ সেখানেও প্রায় একই রকম ফল পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ সবশেষ বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর গত শতকে পৃথিবী আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত গরম হয়েছে৷ এই গবেষণায় আরও বলা হয়, গত দুই হাজার বছরে পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি ছিল৷ ফলে এই সময়টা মোটামুটি ঠাণ্ডা থাকার কথা৷ কিন্তু তাপমাত্রা অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি থাকার কারণে ঠাণ্ডা অবস্থাটা বোঝা যায়নি৷
Infografik Temperatur Anomalien, 1880 - 2019 EN
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ডাব্লিউএমওর ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট ২০২০’ রিপোর্ট বলছে, গতবছরের গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব সময়ের (১৮৫০-১৯০০ সাল, যখন জীবাশ্ম জ্বালানি তত ব্যবহৃত হত না) তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল৷ মানুষের কার্যক্রমের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ‘জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম বড় কারণ’ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়৷
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসিসি ২০০১ সালে জানিয়েছিল, শিল্পযুগ শুরুর আগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কয়েক হাজার বছর ধরে ২৮০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) ছিল৷ ১৯৯৯ সালে সেটা বেড়ে ৩৬৭ পিপিএম হয়৷ আর গত মে মাসে সেটা আরও বেড়ে ৪১৫ পিপিএম হয়েছে - সবশেষ প্রায় ৩০ লাখ বছর আগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি ছিল৷ তখন সাগরের পানির তাপমাত্রা প্রায় ৩০ মিটার বেশি ছিল এবং সেই সময় আধুনিক মানব সভ্যতার কোনো অস্তিত্ব ছিল না৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ইউরোপে
রেকর্ড তাপমাত্রা
২০১৯ সালে ইউরোপজুড়ে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙেছে৷ জুলাই মাসে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে জার্মানিতে৷ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ এক বছরেই দুইবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে ফ্রান্স৷ ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়েছেন সেখানকার মানুষ৷
চলতি বছরের নভেম্বরে ইটালির ভেনিস একাধিকবার বন্যার কবলে পড়েছে৷ একমাসে প্রথমবারের মতো তিনবার পানির উচ্চতা দেড় মিটারের রেখা স্পর্শ করেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামনের দিনগুলোতে প্রায়ই বন্যার কবলে পড়তে হতে পারে ভেনিসবাসীকে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ইউরোপে
স্পেনে দাবানল
যেই তাপদাহে পুড়েছে ফ্রান্স ও জার্মানি, তা ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের জন্ম দিয়েছে স্পেনে৷ আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে গ্রান কানারিয়া দ্বীপের ন্যাশনাল পার্ক, যা দেশটিতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইউরোপের তাপমাত্রা হয়ে উঠছে একদিকে উষ্ণ আর অন্যদিকে শুস্ক৷ এর ফলে এমন দাবানলের ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ইউরোপে
মরছে জার্মানির বন
খরা, ঝড় আর তীব্র তাপে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জার্মানির বনাঞ্চল৷ জার্মানির বন বিষয়ক একটি সংগঠনের হিসাবে ২০১৮ সালের পর এখন পর্যন্ত ১০ লাখ গাছের মৃত্যু হয়েছে৷ এটা কোনো একক আবাহওয়ার ঘটনায় নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়েছে বলে জানান বিডিএফ নামের এই সংগঠনের এক কর্মী৷
গলছে আল্পসের বরফ
আল্পসের ইটালি অংশে মঁ ব্লঁ পর্বতের বরফ গলে গেছে চলতি বছরে৷ সুইস আল্পসের পিজল নামের একটি হিমবাহও পুরোপুরি হারিয়ে গেছে৷ এজন্য অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ারও আয়োজন করা হয়েছে সেখানে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে আল্পসের এসব হিমবাহ৷
পরপর দুই বছরের খরায় বিপাকে পড়েছেন জার্মান কৃষকরা৷ ২০১৮ সালে রেকর্ড খরার পর ২০১৯ সালের তাপদাহে ব্যাপকভাবে ফসলের ক্ষতি হয়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনে জার্মানি এমন বৈরি আবহাওয়ায় আক্রান্ত হতে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন জার্মান আবহাওয়া বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাউল বেকার৷
১৯৯১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রকাশিত প্রায় ১২ হাজার গবেষণার সারমর্ম পর্যালোচনা করে ২০১৩ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার বিজ্ঞানীরা এসব গবেষণা পর্যালোচনা করেছিলেন৷ তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন জানায়, ১২ হাজার গবেষণার মধ্যে ৩২.৬ শতাংশ গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে মানুষ দায়ী, সেই ধারনাকে সমর্থন জানানো হয়৷ ৬৬.৪ শতাংশ গবেষণায় এই ধারনা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷ আর মাত্র এক শতাংশেরও কম গবেষণায় ঐ ধারনা প্রত্যাখ্যান করা হয়৷
২০১৯ সালের প্রথম সাত মাসে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রকাশিত ১১ হাজার ৬০২টি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করে জানানো হয়, শতভাগ বিজ্ঞানী বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য যে মানুষই দায় সে ব্যাপারে একমত হয়েছেন৷
বিশেষজ্ঞেরকথা
নাসার জলবায়ু বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন কুক বলেন, বিশ শতকের শেষদিকে বিজ্ঞানীরা যখন বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ খোঁজা শুরু করেন তখন তারা সম্ভাব্য চারটি কারণের কথা মাথায় রেখেছিলেন- গ্রিনহাউস গ্যাস, সৌরশক্তি, ওশান সার্কুলেশন ও ভলকানিক অ্যাক্টিভিটি৷ ‘‘এর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ও শিল্পকরণের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনই একমাত্র বিষয়, যেটা আমরা এখন যে ধরনের বৈশ্বিক উষ্ণতা দেখছি, সে সম্পর্কে আভাস দিয়েছিল,” বলে ডয়চে ভেলেকে জানান বেঞ্জামিন কুক৷ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে মানুষই দায়ী সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী যতটা তারা মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব নিয়ে ছিল৷