বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড | স্বাস্থ্যকথা » প্রত্যন্ত গ্রামে করোনা রোগীদের আশা-ভরসা অজয় মিস্ত্রির চলন্ত হাসপাতাল
প্রত্যন্ত গ্রামে করোনা রোগীদের আশা-ভরসা অজয় মিস্ত্রির চলন্ত হাসপাতাল
বিবিসি২৪নিউজ, অনলাইন ডেস্কঃ গ্রামের করোনা রোগীদের আশা-ভরসা ‘চলন্ত হাসপাতাল’। প্রথম ঢেউ থেকে আজ পর্যন্ত এই হাসপাতাল কোভিড আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পৌঁছে দিচ্ছে।
নিজের অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে চিকিৎসক অজয় মিস্ত্রি পৌঁছে গিয়েছেন আড়াইশর বেশি গ্রামে। লাখেরও বেশি রোগীকে দেখেছেন বিনামূল্যে।
করোনা মোকাবিলায় ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের হাসপাতালগুলি নাজেহাল। সর্বত্র অক্সিজেন বা ওষুধের হাহাকার শোনা গিয়েছে কয়েকদিন আগেও। গ্রামাঞ্চলে ছবিটা অপেক্ষাকৃত খারাপ। অনেক জায়গায় হাসপাতাল নেই। হাসপাতাল থাকলেও পরিকাঠামোর অভাব। সেখানকার করোনা আক্রান্ত মানুষের কাছে আশীর্বাদ ‘চলন্ত হাসপাতাল’। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে আজ পর্যন্ত চিকিৎসক অজয় মিস্ত্রির মেডিকেল টিম কয়েকটি জেলায় সফর করেছেন। বাঁকুড়ার বিরাট একটা অংশ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সুন্দরবনের উপকূল এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করেছেন। পৌঁছে গিয়েছেন এলাকার লক্ষাধিক মানুষের কাছে। এর পাশাপাশি হাঁসপুকুর ও সুন্দরবন অঞ্চলের হিউম্যানিটি হাসপাতালের ইনডোর রোগীদের পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন এই চিকিৎসক। গোটা বিশ্বে বহু চিকিৎসক যেখানে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, সেখানে এক লাখ ৭২ হাজার করোনা আক্রান্ত মানুষের কাছে কোন সাহসে পৌঁছচ্ছেন ডা. মিস্ত্রি? ইতিমধ্যে তাঁর টিমের দুজন চিকিৎসক করোনায় মারা গিয়েছেন। ১৫ জন প্যারামেডিক্যাল কর্মী ও ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে এখনো জারি কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই। তবে ডাক্তার অজয় মিস্ত্রি এখনও কোভিড আক্রান্ত হননি।
চলন্ত হাসপাতাল
মানুষের সেবাকে ব্রত করে অনেক আগেই মা সুবাসিনী মিস্ত্রির হাত ধরেছিলেন চিকিৎসক অজয় মিস্ত্রি। তৈরি হয়েছিল হিউম্যানিটি হাসপাতাল এবং ট্রাস্ট। ভারত সরকার একদা সব্জি বিক্রেতা সুবাসিনীকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান দেয়। সেই হাসপাতালের কাজ চালানোর সঙ্গে কোভিড যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অজয়। সেই উদ্যোগেই বিনামূল্যে দরিদ্র মানুষদের ওষুধের পাশাপাশি পৌঁছে দিচ্ছেন উপযুক্ত প্রোটিনযুক্ত আহার। প্রয়োজনে নিজেরাই অক্সিজেন সিলিন্ডার বহন করেছেন। তাঁর অ্যাম্বুলেন্সটিকে ছোটখাটো কোভিড হাসপাতাল বললে ভুল হবে না। কোভিড চিকিৎসার জন্য দরকারি অক্সিজেন, জীবনদায়ী ওষুধ, নেবুলাইজার মাস্ক, স্যানিটাইজার, পালস অক্সিমিটার, রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রপাতি, ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন— কী নেই সেখানে। ডয়চে ভেলেকে ডা. মিস্ত্রি বলেন, “যেসব জায়গায় বড় গাড়ি ঢুকতে পারে না, সেরকম জায়গাতেও পৌঁছে গিয়েছি। সঙ্কটে থাকা রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সেই ঘণ্টা দুই-তিন অক্সিজেন দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছি। এমনকি ৪০টির মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং কনসেনট্রেটর নিয়ে আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করেছি।” আর যেখানে চারচাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। সেখানে? জলপথে নৌকা অথবা নিজেরাই হেঁটে যন্ত্রপাতি বয়ে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন মানুষের সাহায্যে। মাটির দাওয়া, বেড়ার ঘর কিংবা খড়ের চালায় দরিদ্র মানুষের পাশে বসে চলেছে শতাব্দীর ত্রাস কোভিডের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা
আগাম প্রতিরোধ জরুরি
কীভাবে সম্ভব হল এই কঠিন কাজ? হিউম্যানিটি ট্রাস্টের ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা চালান। নির্দিষ্ট ফর্মে পরিবারের সদস্যদের অক্সিজেনের মাত্রা, রক্তচাপ নথিভুক্ত করা হয়। ওই স্বেচ্ছাসেবকরাই সন্দেহভাজন কোভিড আক্রান্তদের আইসিএমআর প্রোটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করেন। ওষুধ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ভাবে পালস অক্সিমিটার বা থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে রোগীদের পরীক্ষা শুরু হয়। নিয়মিত করা হয় রক্তপরীক্ষাও। ডয়চে ভেলেকে ডাক্তার অজয় মিস্ত্রি বলেন, “করোনার ছটা পর্যায়। তৃতীয় ধাপে রোগী পৌঁছনোর আগেই তাঁর চিকিৎসা শুরু করাটাই আমাদের টার্গেট ছিল। নইলে এই পর্যায়ে পৌঁছে গেলেই হাই স্টেরয়েড, হাই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করতে হয়। চতুর্থ ধাপে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। এইভাবে ক্রমশ রোগী সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে।” তবে কি সেই পুরোনো ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর’ থিওরি ব্যবহার করেছেন? চিকিৎসক বলেন, “করোনা কেন, যে কোনো রোগের ক্ষেত্রেই তো এটা ব্যবহার করা কর্তব্য। সঠিক স্বাস্থ্যশিক্ষা থাকলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগগুলিকেও গোড়াতেই আটকানো যাবে। হাসপাতালগুলিও চাপমুক্ত হবে।”