শনিবার, ১২ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এক শ কোটি ডোজ করোনার টিকা দান করবেন জি-৭ নেতারা
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এক শ কোটি ডোজ করোনার টিকা দান করবেন জি-৭ নেতারা
বিবিসি২৪নিউজ, রুপা শামীমা, লন্ডন থেকেঃ বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর নেতারা শুক্রবার ব্রিটেনে তিন দিনের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে কোভিড-১৯ মহামারি ও জলবায়ুকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রসঙ্গ।জোটের সদস্য যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এক শ কোটি ডোজ করোনার টিকা দান করবেন জি-৭ নেতারা। করোনা মহামারিতে গত বছরের সম্মেলন না হওয়ায় প্রায় দুই বছর পর সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি।
আগামী সোমবার অধিকাংশ জি-৭ সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা ব্রাসেলসে ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দেবেন। এরপর জো বাইডেন জেনেভায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে অংশ নেবেন। হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে, বাইডেন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ড, সাইবার হামলা, অ্যালেক্সি নাভালনির কারাদণ্ড প্রভৃতি ইস্যুতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। অবশ্য বাইডেন তাঁর সফর শুরুর আগেই রাশিয়াকে সতর্ক করেছেন। ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে রাশিয়াকে মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে গত বুধবার যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। তিনি তাঁর প্রশাসনের পরিষেবাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো একত্রে দাঁড়িয়েছে।’
সম্মেলনপূর্ব বার্তায় জি-৭ সম্মেলনের আয়োজক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘চীন থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে। কারবিস বেতে আমরা সেই খারাপ সময়কে পেছনে ফেলব।’ বরিস আরও বলেছেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলোর জন্য দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার এবং বিশ্বকে টিকা দেওয়ার উপযুক্ত সময় এটা। কারণ, সবাইকে সুরক্ষিত করা না গেলে কেউ পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়।’
কোভিড ও জলবায়ু
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ইতিমধ্যে ৫০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই প্রতিশ্রুতির পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও আগামী বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে জি-৭–এর নেতারা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার মতো বিস্তৃত পরিকল্পনা নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁরা এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছেন বলে জানিয়েছে ডাউনিং স্ট্রিট।
সম্মেলনে জি-৭ নেতারা উন্নয়নশীল বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। আগামী নভেম্বরে স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ–২৬) আগেই তাঁরা এ নিয়ে পরিকল্পনা এগিয়ে রাখতে পারেন। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বিলম্বিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। আসন্ন কপ–২৬ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হবে উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা এবং এ লক্ষ্যকে অর্জনযোগ্য অবস্থায় বহাল রাখা।
জি-৭ সম্মেলনের মতোই যুক্তরাজ্য চাইছে, সেখানে বিশ্বনেতারা সরাসরি উপস্থিত থাকুন। প্রয়োজনে দরিদ্র দেশগুলোর অতিথিদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
জি-৭ নেতাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন।
করোনা ও জলবায়ুকে প্রাধান্য দিয়ে যখন সম্মেলন চলছে, তখন অক্সফামের কর্মীরা জি–৭–এ অংশ নেওয়া সাত বিশ্বনেতার মুখোশ পরে সিরিঞ্জ টানাটানি করছেন। ফলমাউথের কাছে এক দ্বীপে তাঁরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন
করোনা ও জলবায়ুকে প্রাধান্য দিয়ে যখন সম্মেলন চলছে, তখন অক্সফামের কর্মীরা জি–৭–এ অংশ নেওয়া সাত বিশ্বনেতার মুখোশ পরে সিরিঞ্জ টানাটানি করছেন। ফলমাউথের কাছে এক দ্বীপে তাঁরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেনছবি: রয়টার্স
টিকা নিয়ে সুখবর
জি-৭ সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে বিশ্বকে টিকা দান করার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সুখবর শুনেছে বিশ্ব। বিশ্বের বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো করোনার টিকার বড় ধরনের সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের ধনী দেশগুলো ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যায় করোনার টিকা কিনে নিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। টিকার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। দরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে টিকার বাড়তি মজুত ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার জন্য ধনী দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে জি-৭ নেতারা টিকা দান করার বিষয়ে অঙ্গীকার করতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও দপ্তর ডাউনিং স্ট্রিটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জি-৭ সম্মেলনে শীর্ষনেতারা বিশ্বকে অন্তত এক বিলিয়ন ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেবেন বলে আশা করছেন। টিকা ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি অর্থায়নের মাধ্যমে এই দান করা হবে। এ ছাড়া এক শ কোটি ডোজ টিকা বিতরণের লক্ষ্য পূরণে টিকার বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়াতেও জি-৭ নেতারা একমত হতে যাচ্ছেন বলে জানায় ডাউনিং স্ট্রিট। এ জন্য একটি পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আগামী বছরের মধ্যে অন্তত ১০ কোটি উদ্বৃত্ত ডোজ টিকা দান করবে। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তাঁর দেশে টিকা কার্যক্রমের সফলতার পথ ধরে তাঁরা এখন তাঁদের উদ্বৃত্ত থেকে টিকা ভাগ করে নিতে যাচ্ছেন। এভাবে করোনা মহামারিকে পরাজিত করতে তাঁরা বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।
জি-৭-এর চেয়ার হিসেবে বরিস জনসন বলেছেন, তিনি আশা করছেন, ২০২২ সালের মধ্যে পুরো বিশ্বকে করোনার টিকা দেওয়ার বিষয়ে জোটের নেতারা দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করবেন।
টিকার ন্যায্য বণ্টনের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এই টিকা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা ২০২১ সালের শেষ নাগাদ অন্তত ১০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা দান করতে সম্মত হয়েছেন।
বাইডেন–বরিস বৈঠক
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ‘অবিনশ্বর’ হিসেবে অভিহিত করে দুই দেশের মধ্যকার এমন সম্পর্কের প্রশংসা করেন। জি–৭ নেতাদের সম্মেলন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথম সাক্ষাতে মিলিত হন।
বৈঠকের পর গতকাল দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বরিস জনসন বলেন, ‘এ দুই দেশের সম্পর্ককে আপনারা “গভীর ও অর্থবহ” বলতে পারেন। এমনকি আপনারা চাইলে এ সম্পর্ককে “অবিনশ্বর সম্পর্ক”ও বলতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক বজায় রয়েছে। আর এই সম্পর্ক ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।