বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে আমেরিকা রাজনীতি করছে : চীন
কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে আমেরিকা রাজনীতি করছে : চীন
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্রের তোড়জোড়ের মধ্যে চীন জানিয়েছে, এটা নিয়ে রাজনীতি হলে তা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে আর সেইসঙ্গে মহামারী দমনে বিশ্ববাসীর প্রচেষ্টাকেও খাটো করবে।
বুধবার বিকেলে ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “কিছু রাজনৈতিক শক্তি দোষ চাপানো এবং রাজনৈতিক কারসাজির পথ বেছে নিয়েছে।”
কোভিড- ১৯ এর উৎস খুঁজতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বিতীয় দফায় অনুসন্ধান শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়ায় তদন্তকারীদের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া নিয়ে চাপে আছে চীন।
চীনে প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রাণী থেকে নাকি গবেষণাগারের দুর্ঘটনা থেকে হয়েছিল তা নিয়ে আগামী তিনমাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বুধবার বাইডেন বলেন, “কোভিড- ১৯ কোনো প্রাণীর শরীর থেকে মানুষে নাকি গবেষণাগারের দুর্ঘটনা থেকে ছড়িয়েছে তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।”
এর আগে মঙ্গলবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে কোভিডের উৎস নিয়ে নতুন করে আরও নিবিড় এবং ‘স্বচ্ছ’ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী জেভিয়ের বেসেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, চীনের ‘গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে’।
দেশটির হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের একটি গবেষণাগারে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণা থেকেই ‘সার্স-সিওভি-২ সংক্রমণ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে’ বলে দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।
চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে।
ওয়াশিংটনে কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের (সিএফআর) জ্যেষ্ঠ ফেলো ইয়ানঝঙ হুয়াং জানিয়েছেন, চীন যথেষ্ট খোলামেলা না হওয়ার কারণেই গবেষণাগার থেকে সংক্রমণের তত্ত্ব নতুন করে সামনে এসেছে।
‘এই অনুমান প্রমাণ করার জন্য নতুন কিছুই নেই’ জানিয়ে তিনি বলেন, “মহামারীর উৎপত্তি নিয়ে তদন্তের ফলাফলে আস্থা তৈরির জন্য স্বচ্ছতা খুবই জরুরি।
চীনা দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, “সারা বিশ্বে কোভিড- ১৯ এর শুরুর দিকের ঘটনাগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা দরকার এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে গোপন স্থাপনা এবং জৈব গবেষণাগারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালাতে হবে।”
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি পত্রিকার দ্য গ্লোবাল টাইমস সাময়িকীতে বুধবার বলা হয়, গবেষণাগার থেকে সংক্রমণের তত্ত্ব নিয়ে যদি আরও তদন্ত করতে হয় তবে যুক্তরাষ্ট্রকে ফোর্ট ডেট্রিক ল্যাবসহ নিজেদের অন্যান্য গবেষণাগারগুলোতেও তদন্ত করতে দিতে হবে।
নতুন করে তদন্তের পক্ষে কাজ করা পরামর্শক সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো জেইমি মেটজেল বলেন, “এটা খুব স্পষ্ট যে তারা যেখানে আটকে আছে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য তারা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক করার চেষ্টা করছে।”
মার্চে প্রকাশিত চীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্স-সিওভি-২ সংক্রমণ গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে এটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। সেখানে বলা হয়, সম্ভবত বাদুড় থেকে কোনো একটি প্রাণীর মাধ্যমে বাহিত হয়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে।
অন্য কোনো দেশ থেকে হিমায়িত খাবারের মাধ্যমে কোভিড- ১৯ চীনে ঢুকেছে অথবা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বন্যপ্রাণীর বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক থেকে এটা ছড়িয়ে থাকতে পারে বলেও বারবার ইঙ্গিত দিচ্ছে চীন।
‘মহামারী চীন থেকে শুরু হয়েছে’ উল্লেখ করে মেটজেল বলেন, “সেখানে পূর্ণ মাত্রায় তদন্ত শুরু করতে হবে এবং প্রয়োজনে তা বাড়াতে হবে। সংক্ষেপে বললে, এটা (চীনা দূতাবাসের বিবৃতি) মহামারীর দুঃখজনক ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেককে এবং তাদের পরিবারকে ভয়ঙ্করভাবে অপমান করেছে।”
কোভিড- ১৯ এর উৎস নিয়ে তদন্ত একটা ‘অচলাবস্থায়’ আটকে আছে উল্লেখ করে সিএফআর এর জ্যেষ্ঠ ফেলো হুয়াং বলেন, “আপনি চীনের কাছে আরও সহযোগিতা এবং স্বচ্ছতা চাইলেও এখন তদন্তের দাবি বাড়ায় এর রাজনীতিকরণও অনেক বেশি হচ্ছে।”