শনিবার, ১ মে ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনতে চাই
বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনতে চাই
বিবিসি২৪নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ ভারতে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সরকার এখন ভারতের বাইরে বিকল্প হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টিকার অভাবে প্রথম ডোজ স্থগিত করা এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় টিকা কার্যক্রম হোঁচট খেয়েছে।
টিকার ঘাটতির কারণে বাংলাদেশে একদিকে প্রথম ডোজ দেয়া স্থগিত করা হয়েছে। একইসাথে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন করার ব্যাপারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে অদূর ভবিষ্যতে টিকা আসার সম্ভবনা নাকচ করে দেয়া হয়েছে।ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল।
এখন এই টিকার ঘাটতি সামলাতে বাংলাদেশ সরকার ভারতের বাইরে বিকল্প জায়গা থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনার চেষ্টার কথা বলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো: খুরশিদ আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে এবং তাদের অনেকে তা ব্যবহার করেনি। তাদের কাছ থেকে এই টিকা পাওয়া যাবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে।
“আমরা এই ঘাটতি মেটাতে টিকা সংগ্রহ করার চেষ্টায় আছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা যোগাযোগ করছি। আমেরিকা, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, ইউকে এবং অস্ট্রেলিয়ায় আমরা যোগাযোগ করেছি,” বলেন অধ্যাপক আলম।
“আমরা ২০ লাখ ডোজ টিকা আনার চেষ্টা করছি। যাতে যারা এই টিকা নিয়েছেন, তারা যেন (দ্বিতীয় ডোজ) মিস না করেন।”
তিনি এই চেষ্টায় টিকা পাওয়ার আশা ব্যক্ত করে বলেন, “আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ। আমিও আশা করছি এই টিকা পেয়ে যাবো।”
তবে এই টিকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে- তার কোন সুনির্দিষ্ট সময় অধ্যাপক আলম জানাতে পারেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ লাখ ডোজের মতো টিকার ঘাটতি রয়েছে।
ফলে এখন বাংলাদেশের হাতে যে পরিমাণ টিকা রয়েছে, তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলে বলা হচ্ছে।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছিল।
যারা এই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ছাড়া অন্য কোন টিকা দেয়া যাবে না-বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
ফলে টিকার যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তাতে পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো: আলম বলেছেন, প্রথম ডোজ দেয়া থেকে দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে যে সময় হাতে থাকছে, তার মাঝে টিকা পাওয়া সম্ভব হবে।
“আমাদের প্রথম ডোজ দেয়ার পর ১২ সপ্তাহের সময় থাকে। যদিও আমরা আট সপ্তাহের মাথায় (দ্বিতীয় ডোজ) দিয়েছিলাম। এর কারণ আমাদের দেশের মানুষ যদি সময়মতো না আসে, তাহলে পরেও যাতে তাদের (টিকা) দেয়া যায়। কিন্তু ১২ সপ্তাহের সময়টা সারা দুনিয়াতেই মানা হচ্ছে।
“১২ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে আমাদের আট সপ্তাহ চলে গেলেও চার সপ্তাহ সময় হাতে থাকবে। এই সময়ের মধ্যে টিকা পাব আশা করছি,” অধ্যাপক আলম বলেছেন।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা দেয়ার কথা থাকলেও গত দুই মাসে কোন চালান আসেনি।
সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই টিকার এই ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত ছিল বলে তারা বলছেন।
এখন বিষয়টিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক ড: বে-নজীর আহমেদ বলেছেন, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এখনও সময় রয়েছে।
“এখনও সম্ভবনা আছে এটা সমাধানের। যেহেতু তিন মাস পর্যন্ত এর দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যায়। ফলে সময় আছে।”
একইসাথে ড: আহমেদ বলেছেন, “আমাদেরতো আরও আগে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মাসে যদি ত্রিশ লাখ করেও আসতো, তাহলে আমরা এতদিনে প্রায় দেড় কোটি লোককে টিকা দিতে পারতাম। এক্ষেত্রে আমরা মাত্র অর্ধকোটি লোককে টিকা দিয়েছি। সুতরাং অবশ্যই আমরা হোঁচট খেয়েছি,” তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সরকার এখন রাশিয়া এবং চীন থেকেও টিকা আনার ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মে মাসে চীন থেকে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আসতে পারে।তবে এসব প্রক্রিয়ায় সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হচ্ছে।ফলে বাংলাদেশে আবার প্রথম ডোজ দেয়া শুরু করতেও সময় লেগে যেতে পারে।