মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড | স্বাস্থ্যকথা » টিকাগ্রহীতাদের করোনা সংক্রমণের ‘তীব্রতা কম’, সিভাসুর গবেষণার তথ্য
টিকাগ্রহীতাদের করোনা সংক্রমণের ‘তীব্রতা কম’, সিভাসুর গবেষণার তথ্য
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদকঃ করোনাভাইরাসে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর কেউ কেউ আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা কম বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইয়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক।
সিভাসু উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে সাত সদস্যের গবেষক দল গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রথম ডোজের টিকাগ্রহীতাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এ গবেষণা কার্যক্রম চালান।
তবে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক ভিত্তিতে গবেষণা না হলে এ বিষয়ে সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠবে না বলে তারা আরও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছেন।
গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন সিভাসুর অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী ও ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ভেটেরিনারি চিকিৎসক ত্রিদীপ দাশ, প্রনেশ দত্ত, মো. সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর আহমদ নিজামী।
গবেষণায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সিভাসু ল্যাবে পরীক্ষা করা ছয় হাজার ১৪৬ জনের নমুনার মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া এক হাজার ৭৫২ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ২০০ জন গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ শ্বাসকষ্ট তেমন ছিল না।
এদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশকে (১৬৫ জন) হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। বাকি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ (৩৫ জন) ভর্তি হলেও তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মধ্যে ১৭৭ জনের (৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ) শ্বাসকষ্ট ছিল না। ১৮৪ জনের অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়নি।
‘বয়সের আধিক্য এবং কো-মরবিডিটির’ কারণে বাকিদের শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়েছে বলে গবেষকদের দাবি।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজের কার্যকারিতা কতটুকু তা বুঝতে এ গবেষণা চালানো হয়।
তিনি বলেন, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে ১৬৫ জনের মৃদু উপসর্গ ছিল এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তাদের নমুনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল এসেছে।
এদের মধ্যে ১২৯ জনের (৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ) কো-মরবিডিটি ছিল, এর মধ্যে ৩৫ জন হাসপাতালে গেছেন, তাদের ১৬ জনের অক্সিজেন লেগেছে, কিন্তু তাদের তীব্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয় নাই। এই ১২৯ জনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ (৩৬ জন), ডায়াবেটিস (৩২ জন), এলার্জির (পাঁচজন) সমস্যা ছিল । ৫১ জনের আবার একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল।
টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে শুধু একজন রোগী হাসপাতালে মারা গেছেন উল্লেখ করে সিভাসু উপাচার্য বলেন, “৪৮ বছর বয়সী ওই রোগীর পূর্বেই কিডনি নিয়ে জটিলতা (কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট) ছিল বলে আমরা জেনেছি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্য ও মৃত্যু ঝুঁকি কম হবে বলে আমাদের মনে হয়েছে।”
দ্বিতীয় ডোজের পর কি হতে পারে সে বিষয়েও তাদের গবেষণা চলমান থাকবে বলে জানান গৌতম বুদ্ধ দাশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে টিকা নেওয়ার ৩২ দিন পর তারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং গড় তাপমাত্রা ছিল ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। টিকা না নেওয়াদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হাঁচি-কাশি থাকলেও গ্রহণকারীদের মধ্যে কারো কারো তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত ছিল।
প্রথম ডোজ নেওয়াদের মধ্যে যাদের শ্বাসকষ্ট ছিল তাগড়ে পাঁচদিনের বেশি ছিল না এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন সর্বনিম্ন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল। অপরদিকে যারা টিকা নেননি, তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট বেশিদিন ধরে দেখা গেছে।
গবেষক দলের সদস্য সিভাসুর কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারের ইনচার্জ অধ্যাপক শারমিন চৌধুরী বলেন, “আমরা দেখেছি যারা প্রথম ডোজ নিয়ে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। অর্থাৎ তাদের সিভিয়ারিটি অনেক কম ছিল এবং দ্রুত সুস্থ হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি।
টিকাগ্রহীতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এ গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সিভাসুর গবেষণার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট আবদুর রব মাসুম বলেন, “অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর কেউ আক্রান্ত হলেও তাদের সিভিয়ারিটি অনেক কম হবে বলে আমরা জানি। সিভাসুর গবেষকদের তথ্যেও তা উঠে এসেছে।”
কোভিড-১৯ নিয়ে বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালের এ চিকিৎসক বলেন, “আমাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের ক্ষেত্রেও তা দেখা গেছে।”
চট্টগ্রামের আটটি ও কক্সবাজার জেলার একটিসহ নয়টি ল্যাবে প্রতিদিন চট্টগ্রামের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে, চট্টগ্রাম জেলায় সোমবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ২২৭ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় মোট আক্রান্তের হার ১২ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে মারা গেছেন মোট ৪৬৪ জন।
সোমবার গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ২৯৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।