শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » পাকিস্তানে নবীর অবমাননা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফ্রান্স-বিরোধী সহিংস-বিক্ষোভ, ফরাসিদের দেশত্যাগের আহ্বান
পাকিস্তানে নবীর অবমাননা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফ্রান্স-বিরোধী সহিংস-বিক্ষোভ, ফরাসিদের দেশত্যাগের আহ্বান
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ফ্রান্স-বিরোধী সহিংস বিক্ষোভ চলার কারণে ফ্রান্স সেখানে থাকা তাদের সব নাগরিককে সাময়িকভাবে সে দেশ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে।
পাকিস্তানে ফরাসি দূতাবাস থেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে ”পাকিস্তানে ফ্রান্সের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থান ও ব্যক্তিরা গুরুতর হুমকিতে রয়েছে”। দূতাবাস সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নতুন সংঘর্ষে এই সপ্তাহে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।নবীর কার্টুন দেখানোর অধিকারের পক্ষে ফ্রান্স যুক্তি দেওয়ার পর পাকিস্তানে কয়েক মাস আগে এই বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল।
ফ্রান্সে একটি স্কুলের ক্লাসে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনার সময় এ ধরনের কার্টুন দেখানোর পর একজন শিক্ষকের শিরশ্চ্ছেদের ঘটনার পর গত বছর অক্টোবর মাসে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ বাকস্বাধীনতার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেন।
এর জেরে পাকিস্তানসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়।নবীর চিত্র প্রদর্শন ইসলামে পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং মুসলমানদের কাছে এটা অবমাননাকর ও ধর্মদ্রোহিতার সামিল।
পাকিস্তানের কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই লাব্বায়িক পাকিস্তান (টিএলপি)-এর নেতা সাদ হুসেইন রিজভীকে পাকিস্তান সরকার গ্রেপ্তার করার পর এ সপ্তাহে প্রতিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই দলটি পাকিস্তান থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছিল।
মি. রিজভীর গ্রেপ্তার এবং টিএলপি দলকে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর দলের হাজার হাজার সমর্থক পাকিস্তানের রাস্তায় নেমে আসে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট ছোঁড়ে, এবং টিয়ার গ্যাস ও জল-কামান ব্যবহার করে।অতীতে ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে টিএলপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষের জমায়েত হয়েছে। পাকিস্তানের আইনে নবীকে অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে দায়ী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেন, পাকিস্তান ”নবীর সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষে”, কিন্তু টিএলপির দাবি মেনে নিলে ”বিশ্বের চোখে পাকিস্তান একটি উগ্রপন্থী দেশ হিসাবে পরিগণিত হবে”।
পাকিস্তানে ফরাসি দূতাবাস গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে: ”পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় এই বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।
”সেই বিবেচনা থেকে, এবং যেহেতু পাকিস্তানে ফরাসি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব কিছু গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে, ফরাসি নাগরিকদের বর্তমানে চালু থাকা বাণিজ্যিক বিমান ব্যবহার করে সাময়িকভাবে পাকিস্তান ত্যাগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।”ধর্মনিরপেক্ষতা - ফরাসি ভাষায় যাকে বলে ‘লাইসিতে’ - তা ফ্রান্সের জাতীয় পরিচয়ের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। ফরাসী বিপ্লবের পর থেকেই “মুক্তি, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব” ফরাসী রাষ্ট্রের মূলমন্ত্র - কিন্তু লাইসিতে বা ধর্মনিরপেক্ষতাও সমান গুরুত্ব পায় সে দেশে।
লাইসিতের মূল কথা হলো জনসমক্ষে - তা ক্লাসরুম হোক বা কাজের জায়গায় হোক - সেখানে ধর্মের কোনও কথাই চলবে না। ফরাসি রাষ্ট্রের কথা - কোনও একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিকে রক্ষার জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ চাপালে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে।
ফ্রান্সের ব্যাঙ্গাত্মক সাপ্তাহিক পত্রিকা শার্লি হেব্দো নবীর কার্টুন ছাপানো এবং অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করার কারণে ২০১৫ সালে ওই পত্রিকা অফিস লক্ষ্য করে রক্তক্ষয়ী জিহাদী হামলা চালানো হয়।শার্লি এব্দো সাময়িকীর কার্টুন ছাপানোর অধিকার আছে বলে অক্টোবর মাসে মি. ম্যাক্রঁর মন্তব্যের পর ক্রোধ ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম বিশ্বে।
পাকিস্তান, প্রতিবেশী ইরান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর রাস্তায় ফ্রান্স-বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভে ফ্রান্সকে বর্জনের ডাক দেয়া হয়।
নভেম্বর মাসে টিএলপি পাকিস্তানে তাদের বিক্ষোভ সাময়িকভাবে স্থগিত করে এই বলে যে পাকিস্তানের মন্ত্রীরা ফরাসি পণ্য বয়কট করতে রাজি হয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মি. ম্যাক্রঁর সমালোচনা করেছিলেন, কিন্তু সরকার ফরাসি পণ্য বয়কট করতে সম্মত হয়েছে এমন দাবি কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে। সরকার বলেছে, এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
টিএলপি তেহরিক-ই-লাব্বায়িক ইয়া রাসুল আল্লাহ (টিএলওয়াইআরএ) আন্দোলনের রাজনৈতিক সংগঠন।
এই দলের নেতা ছিলেন মি. রিজভীর পিতা খাদিম রিজভী। তিনি মারা যান নভেম্বর মাসে।টিএলপি দল হিসাবে জনপ্রিয়তা পায় ২০১১ সালে পুলিশ অফিসার মুমতাজ কাদরীর ফাঁসির বিরোধিতা করার মধ্যে দিয়ে। ২০১১ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের গর্ভনর সালমান তাসিরকে হত্যা করেছিলেন মুমতাজ কাদরী, কারণ দেশটির ধর্ম আবমাননা আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন মি. তাসির।