বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » আমেরিকা | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ট্রাম্প ক্যাপিটলে সবাইকে “মরতে” রেখেছিল-ডেমোক্র্যাটরা
ট্রাম্প ক্যাপিটলে সবাইকে “মরতে” রেখেছিল-ডেমোক্র্যাটরা
বিবিসি২৪নিউজ, ফরিদা ইয়াসমিন, ওয়াশিংটন, থেকেঃ ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিশংসনের বিচারে তার সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে হামলার নতুন কিছু নাটকীয় ভিডিও সেনেটরদের দেখানো হয়েছে।
মি. ট্রাম্পের নিজের বক্তব্য এবং টুইটকে তার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে ডেমোক্র্যাটরা বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে যাতে তারা অভিযোগ তুলেছে যে, হামলার দিন এবং এর আগে তিনি নিজেই “প্রধান উস্কানিদাতা” হিসেবে কাজ করেছেন।
বিচারের সময় আবেগঘন বিবৃতিতে অভিশংসনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা সহিংস ঘটনার খুঁটিনাটি তুলে ধরেন।
অপ্রকাশিত নিরাপত্তা ফুটেজে দেখা যায় যে, দাঙ্গাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কতটা কাছাকাছি চলে এসেছিল।
ভেতরে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে রাজনীতিবিদদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। অনেক সময় মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে দাঙ্গাকারীরা ভবনের চেম্বারে প্রবেশ করছিল।
উত্তেজিত কিছু অডিওতে শোনা যায় যে, নিরাপত্তা রক্ষীরা সহায়তা চাইছিল, তারা বলছিল যে কিভাবে জনতা তাদের বিরুদ্ধে ব্যাট এবং টিয়ার গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রতিনিধি স্টেইসি প্ল্যাসকেট সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের সময় অভিযোগ তোলেন যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট সহিংসতায় “ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি” দিয়েছিল এবং জ্যেষ্ঠ সদস্যদের “লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল” যাদের মধ্যে তার নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও রয়েছেন।গত ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলা হয়। এর আগে গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির কারণে মি. ট্রাম্প জয় পাননি বলে মিথ্যা অভিযোগের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়।
ক্যাপিটলে নির্বাচনের ফল অনুমোদন দেয়ার সময় ওই হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জন মারা যায়।
চলতি সপ্তাহের শেষে মি ট্রাম্পের আইনজীবী তার পক্ষে বিচারে যুক্তি তুলে ধরবেন। তবে এরইমধ্যে তিনি দাবি করেছেন যে, তার বিরুদ্ধে বিচার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং অসাংবিধানিক।
১০০ আসনের সেনেটে মি. ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার। তবে এখনো পর্যন্ত রিপাবলিকান অধ্যুষিত সেনেটের বেশিরভাগ সদস্য ট্রাম্পের প্রতি অনুগত থাকার কারণে তিনি রেহাই পেয়ে যাবেন।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি পরবর্তীতে আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিচার প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতার বিষয়ে মঙ্গলবার প্রক্রিয়াগত ভোটের পর সেনেটররা প্রথম দিনের বিচারে বসেন। যেখানে উভয়পক্ষকে ১৬ ঘণ্টা করে সময় দেয়া হয় নিজেদের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য।
প্রধান প্রসিকিউশন ম্যানেজার জেমি রাস্কিন বলেন যে, গত মাসের সহিংসতায় ট্রাম্প কোন “নিরপরাধ দর্শক” ছিলেন না কারণ তিনি এর জন্য তিনি কয়েক মাস ধরে তাদের “প্রশংসা করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং তা তৈরি করেছেন।”
ম্যানেজাররা মি. ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট এবং ক্লিপ ব্যবহার করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে তিনি কিভাবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে “বড় ধরণের মিথ্যা” প্রচারের চেষ্টা করেছেন যে তার কাছ থেকে নির্বাচনকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
৬ই জানুয়ারিতে তার দেয়া বক্তব্যের ফুটেজকে আলাদা আলাদা অংশে বিভক্ত করে দেখানো হয়েছে যে তিনি কিভাবে সমর্থকদের “উত্তেজিত” করেছিলেন যা পরবর্তীতে তাদের ক্যাপিটলের দিকে ধাবিত করেছিল।
ট্রাম্পের সমর্থক ওয়েবসাইটগুলোর স্ক্রিনশট প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে যে তার সমর্থক ঘাঁটিতে থাকা চরমপন্থিরা ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে হামলার পূর্ব-পরিকল্পনা করতে উৎসাহিত করেছে এবং আইনপ্রণেতাদের উপর সহিংস হওয়ার ইচ্ছার বিষয়ে খোলাখুলিই কথা বলেছে।
এর আগে অপ্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায় যে, দাঙ্গাকারীরা কিভাবে শরীরে বর্ম পরে সহিংসভাবে ভবনে প্রবেশ করেছিল। সেসময় যারা নির্বাচনের ফল অনুমোদনে কাজ করছিল তাদের খুঁজছিল।
একটি ক্লিপে দেখা যায় যে, এক নিরাপত্তারক্ষী রিপাবলিকান সেনেটর এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
মি. রমনিকে রক্ষা করার জন্য ক্যাপিটলের পুলিশ কর্মকর্তা ইগুয়েন গুডম্যানের প্রশংসা করা হয়।
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স এবং তার পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। কারণ নির্বাচনের ফল অনুমোদনে আপত্তি না তোলায় ভিড়ের মধ্যে থাকা অনেকেই তাকে তার “ফাঁসি” দাবি করছিল।
আরেক ভিডিওতে দেখা যায় যে, ন্যান্সি পেলোসির কর্মীদের লুকিয়ে গুঞ্জন করতে শোনা যায় কারণ দাঙ্গাকারীরা হাউজ স্পিকারের খোঁজে তার অফিসে ঢুকে পরে এবং বলতে থাকে যে, “আপনি কোথায় ন্যান্সি পেলোসি”।
বুধবার যে ফুটেজ দেখানো হয় তার মধ্যে কিছু ছিল অস্বস্তিকর। মোবাইলের ফুটেজে দেখা যায় ট্রাম্পের একজন সমর্থককে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে কারণ সে হাউজ অব রেপ্রেজেনটেটিভসের লবিতে প্রবেশ করতে চাইছিল। আরেকটি ফুটেজে দেখা যায় দাঙ্গা পুলিশের এক সদস্য ব্যাথায় চিৎকার করছেন কারণ একটি প্রবেশ মুখের কাছে জনতা তার উপর হামলা চালায়।
যারা যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন তারা বার বার সেনেটরদের মানসিক অবস্থা এবং তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছিলেন। ওই সেনেটররা এই বিচারের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কংগ্রেসম্যান এরিক সোয়ালওয়েল বলেন যে, “জনতা যেখানে দাঙ্গা করছিল তার থেকে মাত্র ৫৮ কদম দূরে ছিলেন আপনি।”
ভাইরাল হওয়া এরকম একটি ছবিতে ডেস্কের ওপর পা তুলে রিচার্ড পা তুলে রিচার্ড বারনেটকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
“আপনি যেখানে রয়েছেন সেখানেই হামলাকারীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন…তারা এই স্থানকে অপবিত্র করেছিল এবং প্রেসিডেন্ট খুশি হয়েই বসে ছিলেন, আমাদের সহায়তায় তিনি কিছুই করেননি,” রেপ্রেজেনটেটিভ ডেভিড সিসিলিন বলেন। রিপাবলিকানদের তিনি বলেন, “আমাদের এটা ঠিক করতে হবে এবং আপনারা সেটা ঠিক করতে পারেন।”
রাতের খাবারের বিরতির পর বিচার আবার শুরু হলে, অভিশংসনের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিরা সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানাতে এবং নিজের সমর্থকদের নিরস্ত করতে ট্রাম্পের ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে আসেন।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবাইকে ক্যাপিটলে মারা যাওয়ার জন্য রেখে গিয়েছিলেন,” রেপ্রেজেনটেটিভ জোয়াকুইন ক্যাস্ট্রো বলেন।
পরবর্তীতে কী হবে?
বৃহস্পতিবারও ডেমোক্র্যাটরা তাদের মামলার বিচারের জন্য যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে যাবেন। এর পর ট্রাম্পের পক্ষের দল তার সমর্থনে বক্তব্য তুলে ধরবেন।
এরইমধ্যে তার আইনজীবী এই যুক্তিতর্ককে বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, তার(ট্রাম্পের) বিরুদ্ধে আনা এই মামলা অন্যায় এবং তিনি তার সমর্থকদের সহিংসতায় উস্কে দেননি বলে দাবি করেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির আগ পর্যন্ত যুক্তিতর্ক চলবে যখন সেনেটররা প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন।
তবে তখন অভিশংসন প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপকেরা সাক্ষী হাজির বা সমন জারির আবেদন করে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করবেন সেটা পরিষ্কার নয়। যদিও মি. ট্রাম্প এরইমধ্যে জানিয়েছেন যে তিনি স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতে যাবেন না।
দুই পক্ষের আইনপ্রণেতাদেরকেই বিচারের বিষয়টি দ্রুত করার অনুরোধ করা হয়েছে এবং মি. ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কি হবে না সে বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সেনেটে ভোট হতে পারে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে মাত্র ছয় জন রিপাবলিকান বিচার সাংবিধানিক বলে ভোট দিয়েছিলেন- যা সংখ্যার দিক থেকে কম। কারণ চূড়ান্ত বিচারে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে ১৭ জন রিপাবলিকানদের ডেমোক্র্যাটদের সাথে ভোট দিতে হবে।
মেইন রাজ্যের সেনেটর সুসান কলিন্স হাউস রেপ্রেজেনটেটিভসদের বুধবার “সুস্থির”, “অনুগত” বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি বলেন, “আপনি পিন পতনের শব্দও শুনতে পাবেন।”
“এখানে পুরো ঘটনা আমেরিকানদের সামনে নিয়ে আসার পর এবং তারা এটা জানার পর… ডোনাল্ড ট্রাম্প কিভাবে আবারো পুনঃনির্বাচিত হতে পারেন সেটা আমি দেখতে পাচ্ছি না,” আরেক রিপাবলিকান সেনেটর লিসা মুরকওস্কি সাংবাদিকদের বলেন।
অভিশংসন: মৌলিক তথ্য
•অভিশংসন কী? অভিশংসন হচ্ছে যখন ক্ষমতায় থাকা একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
•এরইমধ্যে কী হয়েছে? ১৩ জানুয়ারি মি ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে হাউস অব রেপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়েছে যা তার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহে আগে ঘটে। এখন সেনেটে বিচার অনুষ্ঠিত হবে।
•এটা দিয়ে কী বোঝায়? যেহেতু তিনি এখন আর প্রেসিডেন্ট নন তাই সেনেটররা তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করতে পারেন।