বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে- মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর বক্তব্য
জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে- মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর বক্তব্য
বিবিসি২৪নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাংলাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডারদের একজন জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকারের একটি কমিটি, সে ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিবিসিকে বলেছেন, খেতাব বাতিলের সুপারিশের ব্যাপারে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত মঙ্গলবার সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের এক বৈঠকে খেতাব বাতিলের এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকা এবং রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনসহ নানা অভিযোগ থাকায় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের যে বৈঠকে, সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মল হক।
কিন্তু মন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত সুপারিশ হিসাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এবং প্রয়োজনে মন্ত্রীসভাতেও বিষয়টা যেতে পারে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রধান এবং একই সাথে তিনি সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকা এবং হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশ করছে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।
তিনি উল্লেখ করেছেন, এখন দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
“তিনি (জিয়াউর রহমান) বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাসে তাদের পদায়ন করেছেন। এবং মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছে, তাদের নিয়ে তিনি মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল, তা তিনি বাতিল করেছেন। সেজন্য তার খেতাব বাতিল করা হয়েছে” মি: হক বলেন।
কিন্তু শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার যে অভিযোগ সরকার করছে, তা নিয়ে কোন মামলা হয়নি বা কোন আদালতে বিচার হয়নি-তাহলে কিসের ভিত্তিতে খেতাব বাতিলের কথা বলা হচ্ছে?
এই প্রশ্নে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, “আইনের নিয়ম হচ্ছে, যখন কেউ মৃত্যুবরণ করেন, মৃত্যুর পর কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে কোন রায় হয় না।”
তিনি আরও বলেছেন, “যেহেতু জিয়াউর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই আদালত তাকে কোন শাস্তি দিতে পারে না। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত বিধান।”
জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সরকারি কমিটির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা ঢাকার পল্টন এলাকায় মিছিল সমাবেশ করেছেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসারত দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখান থেকে টেলিফোনে বলেছেন, দেশের এখনকার পরিস্থিতি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর জন্য সরকার এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
“জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হয়েছে। এ সরকারের যে অপকর্ম এবং দুর্নীতির যে চিত্র বেরিয়ে আসছে, তা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে এটা করা হচ্ছে।”
মি: আলমগীর আরও বলেছেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই বসে ছিলেন না, তিনি দীর্ঘ নয় মাস দেশের ভেতরে থেকে লড়াই করেছেন।
বিএনপি নেতা মি: আলমগীর উল্লেখ করেছেন, “বীর উত্তম খেতাব তিনি (জিয়াউর রহমান) পেয়েছিলেন, স্বাধীনতার পরে শেখ মুজিবুর রহমানের যে সরকার, সেই সরকারই তাকে খেতাব দিয়েছিল। এখন সরকারের সেই খেতাব বাতিলের উদ্যোগ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কলঙ্ক লেপন করা হলো।”
তবে বিএনপির বক্তব্য মানতে রাজি নয় সরকার।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, কোন রাজনৈতিক চিন্তা থেকে বা কোন পরিস্থিতির কারণে খেতাব বাতিলের বিষয়টি আনা হয়নি।
তিনি আরও বলেছেন, “ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য নয়, ইতিহাসের স্বচ্ছ্বতা প্রতিষ্ঠার জন্যই এবং ঐতিহাসিকভাবে যা সত্য, তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”
মি: হক বলেছেন, “তিনি (জিয়াউর রহমান) যদি প্রমাণিত হন যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জড়িত নন, তাহলে হয়তো ব্যবস্থা হবে না। তবে তিনি জড়িত মর্মে আলোচনায় যা উঠে এসেছে, তাতে তার জড়িত থাকার বিষয়টিই প্রমাণ হয়। যাই হোক তারপরও আমরা দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতেই রিপোর্ট তৈরি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো,” তিনি বলেন।
এদিকে, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের মঙ্গলবারের ঐ বৈঠকে খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নাম মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘স্মরণীয় বরণীয়’ ব্যক্তি হিসেবে যে রাষ্ট্রীয় তালিকায় আছে, সেখান থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া শেখ মুজিব হত্যা মামলায় পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শরিফুল হক ডালিমসহ চার জন আসামীর মুক্তিযুদ্ধের খেতাবও বাতিল করা হয়েছে।