সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার
বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অংশ হিসেবে পেশাজীবী ও শ্রমিকরা আজ দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করছে।
রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ আজ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে, এবং রাষ্ট্রীয় টিভিতে সতর্ক করে দেয়া হয় যে বিক্ষোভকারীরা “জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনের” প্রতি হুমকি সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে শহরগুলোর রাস্তায় তিন দিন ধরে বিক্ষোভ হচ্ছে।
অনেকগুলো শহরে ছোট-বড় বিক্ষোভ
সোমবার সকালে রাজধানী নেপিডো, ইয়াঙ্গন এবং মান্দালয় সহ নানা শহরে বহু লোক রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন সরকারি চাকুরে, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ইন্টারনেটে কর্মচারিদের বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বিবিসিকে বলেন, “আজ আমরা পেশাজীবীরা এটাই দেখাতে চেয়েছি যে একনায়কতন্ত্রের পতনের দাবিতে আমরা সবাই এক।”
একজন পোশাক শ্রমিক নিন তাজিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমাদের বেতন কেটে নেয়া হলেও আজ আমরা কাজে যাচ্ছি না।”
বিক্ষোভে কিছু মানুষের আহত হবার খবর পাওয়া গেলেও কোন সহিংসতা ঘটেনি।
ভিডিওর ক্যাপশান,
মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান: ১০ বছরের মধ্যে বার্মায় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ
রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়।
বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেড জানাচ্ছেন, গত কয়েকদিনের সমাবেশ অভ্যুত্থানবিরোধীদের আন্দোলনে গতিসঞ্চার করেছে - যদিও এখানে তেমন কোন নেতৃত্ব নেই।
আপাতত এগুলোকে স্বত:স্ফূর্ত এবং স্থানীয় ভাবে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ বলেই মনে হচ্ছে।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সাথে কি আচরণ করবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুলিশের চাইতে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি।
সামরিক বাহিনী কী বলছে?
সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত সরাসরি কোন বক্তব্য দেয় নি।
তবে তারা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সোমবার তাতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবাণী প্রচার করা হয়।
তবে সুনির্দিষ্ট কারো নামে এ সতর্কবাণী প্রচার করা হয়নি।
বিক্ষোভ চলছে।
জোনাথন হেড জানাচ্ছেন, দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের দমনমূলক কর্মকান্ডের জন্য সুপরিচিত।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা জনতার এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনের পদক্ষেপ নেয়নি - যদিও অনেকে আশংকা করেন তারা হয়তো অচিরেই সে চেষ্টা করতে পারে।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দী নির্বাচিত নেতা অং সান সু চি-র মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনর্বহালের দাবি করছে।
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণবিহীন দাবি করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। মিজ সু চি সহ বেসামরিক রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করা হয়।
সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং লাইং এখন দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে সেনা কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু তা সত্বেও রোববার প্রায় লাখখানেক লোক ইয়াঙ্গনের রাস্তায় নেমে আসে।
“আমরা সামরিক শাসন চাই না” , “আমাদের ভোটকে সম্মান করুন” “গণতন্ত্র ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা দাবি জানাতে থাকবো” - এসবই ছিল বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানকারী সামরিক নেতাদের প্রতি বার্তা। তাদের হাতে ছিল গৃহবন্দী নেত্রী অং সান সু চির ছবি। অনেকের পরনে ছিল তার দল এনএলডির প্রতীকী লাল রঙের ব্যাজ, কারো হাতে ছিল লাল বেলুন। অনেকে তিন আঙুলে স্যালুট দেখিয়ে একনায়কতন্ত্রী শাসনের প্রতিবাদ করে।
নগর কেন্দ্রে দাঙ্গা পুলিশের উপস্থিতি ছিল, তবে তেমন কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায় নি।
একটি শহরে গুলি বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে - তবে কেউ আহত হয়নি।
গত সোমবার অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনী ফেসবুক, টুইটার ও ইন্স্টাগ্রাম ব্লক করে দিয়েছিল, এমন কি তারা ফোন সেবা বিঘ্নিত করার মাধ্যমেও মানুষজনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করার চেষ্টা করে।
সোমবার অবশ্য অনেক জায়গাতেই ইন্টারনেট সেবা ফিরে এসেছে।