বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলা, নিহত বেড়া ৪, ফের অধিবেশন শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলা, নিহত বেড়া ৪, ফের অধিবেশন শুরু
বিবিসি২৪নিউজ,খান শওকত যুক্ত রাষ্ট্র থেকেঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। দেশটির আইন পার্লামেন্টে বা ক্যাপিটল ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যয়নে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ফের শুরু হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
গতকাল বুধবার ট্রাম্পের শত শত উগ্র সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ‘ক্যাপিটল’-এ হামলা চালায়। নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজিত হওয়ার ফল পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্যে এই হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত অনেকে।
ক্যাপিটল ভবনে হামলাকালে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছিল। ক্যাপিটল ভবনে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখে একপর্যায়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
ওয়াশিংটন পুলিশের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ক্যাপিটল ভবন ঘিরে হামলা-সংঘাত-সংঘর্ষ চলাকালে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তিনি একজন নারী। তিনি গুলিতে নিহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন ভবন বা পার্লামেন্ট ‘ক্যাপিটল’ ভবনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছে। গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তখন ভবনটিতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছিল।হামলাকারীরা ভবনের জানালা ভাঙচুর করে। আর সেই সঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ উগ্র জনতাকে হটাতে পুরো ভবন অবরুদ্ধ করে ফেলে। এ সময় গুলিতে একজন নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্যাপিটল ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বটে, তবে সেই সঙ্গে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
এ ঘটনার পর যৌথ অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়। তবে রাতে আবার তা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে জর্জিয়ার দুটি সিনেটের আসন জিতে যায় ডেমোক্র্যাটরা। এর ফলে সিনেট ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে চলে এল। ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই প্রার্থী রাফায়েল ওয়ারনক ও জন ওসফ সিনেটে নির্বাচিত হয়েছেন।
ক্যাপিটলে এ হামলার পর বিশ্বনেতারা একের পর এক বার্তায় এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। খোদ রিপাবলিকান পার্টির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর বেন স্যাসি বলেছেন, ‘এটা একটা কুৎসিত দিন।’ এমনকি জর্জিয়ার সিনেটে সদ্য হেরে যাওয়া কেলি লফলার এ ঘটনার সমালোচনা করেছেন।বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ওই নারী ক্যাপিটল ভবনের ভেতরেই নিহত হন। তিনি ট্রাম্প-সমর্থক বলে মনে করা হচ্ছে।
হামলার ঘটনার পর পুলিশ ক্যাপিটল ভবন থেকে আইনপ্রণেতাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। ক্যাপিটল ভবন থেকে ট্রাম্প-সমর্থকদের হটিয়ে দিতে পুলিশকে অন্তত তিন ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালাতে হয়।
এ সময় ট্রাম্প-সমর্থকেরা পুলিশের ওপরও হামলা করে। ভবনের ভেতর থেকে হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাপিটল ভবনকে নিরাপদ ঘোষণা করে পুলিশ। পরে আইনপ্রণেতারা ফের অধিবেশনকক্ষে ফিরে আসেন। আবার শুরু হয় যৌথ অধিবেশন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন বাইডেন। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনা ও প্রত্যয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থীর জয় আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হবে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের বিক্ষোভের মধ্যেই কংগ্রেসের এই যৌথ অধিবেশন বসে। অধিবেশনে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের সদস্যরা অংশ নিয়েছেন।
গত ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় থেকেই ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছেন। নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি। সম্প্রতি ট্রাম্পের অনেক সমর্থকও এ বিষয়ে বিক্ষোভ করে।
রিপাবলিকান পার্টির কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যও ট্রাম্পের দাবিতে সমর্থন দেওয়ার কথা জানান। তাঁরা এ-ও বলেন, কংগ্রেসের অধিবেশনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানানো হবে।
ট্রাম্পের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজারো সমর্থক রাজধানীতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে শত শত ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। অস্ত্র বহন যেন না করা হয়, সে জন্য ট্রাম্পের সমর্থকদের আগেই সতর্ক করে দেওয়া হয়।
২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের শপথ নেওয়ার কথা। অনানুষ্ঠানিকভাবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন তিনি। বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি।