মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে- এফবিআই
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে- এফবিআই
বিবিসি২৪নিউজ, খান শওকত যুক্তরাষ্ট্র থেকেঃ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার নির্বাচনী কর্মকর্তাকে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার কথা বলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এফবিআইকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির দুজন আইনপ্রণেতা।
কংগ্রেসের দুজন ডেমোক্র্যাট সদস্য টেড লিউ ও ক্যাথলিন রাইস ৪ জানুয়ারি এফবিআই পরিচালক ক্রিস ওরেই বরাবর পত্র দিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন বিচারের কোনো নজির নেই। প্রেসিডেন্ট ফেডারেল অপরাধ থেকে নিজেকে ক্ষমা করার ব্যবস্থা নিতে পারেন। যদিও কোনো অঙ্গরাজ্য আইনে তাঁর অপরাধের দায় থেকে মুক্তি নেওয়ার সুযোগ প্রেসিডেন্টের নেই।
নিউইয়র্কের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রিট ভারারা বলেছেন, ফেডারেল ও জর্জিয়ার নির্বাচনী আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে, জ্ঞানত ভোট জালিয়াতি-কারচুপিতে ইন্ধন দেওয়া বা উৎসাহিত করা দণ্ডযোগ্য অপরাধ।
ট্রাম্প ২ জানুয়ারি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করেন। তাঁদের দীর্ঘ ফোনালাপের অডিও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট গত রোববার প্রথম প্রকাশ করলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প কেন যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে থেকে যেতে চাইছেন, তা তাঁর বোধগম্য নয়।সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে ওবামা তাঁর টুইট বার্তায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিকেই আজ হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজসহ ১১ জন প্রভাবশালী সিনেটর অন্য আইনপ্রণেতাদের নিয়ে ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ঝামেলা পাকানোর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন।
সিনেটর ক্রুজসহ অন্যদের দাবি, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে কি না, তা একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত করা হোক। সে পর্যন্ত ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল স্থগিত রাখা হোক। ভোটে অনিয়ম পাওয়া গেলে অঙ্গরাজ্য আইনপ্রণেতাদের ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে সিদ্ধান্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
৬ জানুয়ারি ঘিরে ওয়াশিংটন উত্তপ্ত হয়ে ওঠার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ট্রাম্প পুরো আমেরিকা থেকে তাঁর সমর্থকদের ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো করছেন। প্রাউড বয়েজসহ অন্য রক্ষণশীল ট্রাম্প-সমর্থকেরা বড় ধরনের মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যেকোনো ধরনের সহিংসতা মোকাবিলার জন্য ন্যাশনাল গার্ড তলব করা হয়েছে। রক্ষণশীল সংগঠন প্রাউড বয়েজের নেতা এনরিক টেরিওকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার জানিয়েছেন, ৬ জানুয়ারি রাজধানীতে ট্রাম্প-সমর্থকদের সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩৪০ জন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ডাকা হয়েছে।
গতকাল সোমবার করা সংবাদ সম্মেলনে নগরীর মেয়র মুরিয়েল বাইজার নাগরিকদের ৬ জানুয়ারি ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ করার চেষ্টা করবে, তাদের এড়িয়ে চলার জন্য তিনি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নগরীতে কোনো সহিংসতা প্রশ্রয় দেওয়া হবে না এবং জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
মেয়র জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে, বিপুলসংখ্যক লোকজনের সমাগম হবে ৬ জানুয়ারি। সমাবেশে আসা অনেক লোকজনের কাছে অস্ত্র থাকবে বলেও তথ্য রয়েছে।
শুরুতে ট্রাম্প-সমর্থক রক্ষণশীল নারীদের আহ্বানে এমন সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, এমন সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে না।
৪ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রাউড বয়েজের নেতা এনরিক টেরিওকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে। গত ১২ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি সম্পত্তি ভাঙচুর মামলায় তাঁর নামে অভিযোগ আনা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের সময় এনরিক টেরিওর কাছে দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পৃথক আরেকটি অভিযোগ আনা হয়েছে এনরিক টেরিওর নামে।
ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য শেষ সময়ে বেপরোয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন। তাঁর দলের যেসব সিনেটর ৬ জানুয়ারি ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে কংগ্রেসে আপত্তি উপস্থাপন করবেন না, তাঁদের তিনি আত্মসমর্পণকারী হিসেবে উল্লেখ করে চাপ অব্যাহত রাখছেন।
২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা জো বাইডেন দৃশ্যত ট্রাম্পের নানা ধরনের বেপরোয়া আচরণের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না।
তবে গতকাল সন্ধ্যায় বাইডেন জর্জিয়ায় দেওয়া বক্তৃতায় শুধু বলেছেন, ট্রাম্প কেন যে প্রেসিডেন্ট থাকতে ইচ্ছুক, তা তাঁর বোধগম্য নয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তো কোনো কাজ করতে ইচ্ছুক নন বলে বাইডেন মন্তব্য করেন।