সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ দেবে-পশ্চিমবঙ্গ সরকার!
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ দেবে-পশ্চিমবঙ্গ সরকার!
বিবিসি২৪নিউজ,অমিত ঘোষ,দিল্লি ও বিধান চন্দ্র মন্ডল, কলকাতা থেকেঃ গত ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লির শাহীনবাগ-সহ দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিক্ষোভ আন্দোলন। বছরখানেক আগে পাস হওয়া বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র বাস্তবায়ন পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরের গোড়াতেই শুরু হয়ে যাবে বলে বিজেপি নেতারা ঘোষণা করেছেন।
এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম-রা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন বলে বলা হয়েছে - কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সরকার আগেই জানিয়েছে তারা এই আইন মানবে না।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র মাসকয়েক আগে এই উদ্যোগকে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল একটা ‘রাজনৈতিক স্টান্ট’ বলেই বর্ণনা করছে।
কিন্তু বিজেপি পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বা এনআরসি চালু করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
দলের সিনিয়র নেত্রী ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী এ কথাও জানিয়েছেন, যারা এই নতুন আইনের আওতায় আসবেন তাদের একটি বিশেষ ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ দেওয়া হবে।
সেই রেশ না থিতোতেই দেশ করোনা ভাইরাস মহামারি আর লকডাউনের কবলে পড়ে, ফলে নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন কার্যত হয়নি বললেই চলে।
কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গে ভোটের যখন আর পাঁচ মাসও বাকি নেই, তখন সে রাজ্যে বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়া ঘোষণা করেছেন সামনের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি থেকেই রাজ্যে পুরোদমে ওই আইনের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে।
যার অর্থ হল, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা এবার বৈধভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে শুরু করবেন।সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ও সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
রাজ্যে বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভারতী ঘোষ বলছিলেন কেন এই আইন রূপায়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গই তাদের “অগ্রাধিকার”।
তার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের যে ২০১৭ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, সেই পথে অনুপ্রবেশ ঘটছে বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে। আর তৃণমূলের আমলে এই বর্ডার তো পুরোপুরি খুলেই দেওয়া হয়েছে।”
“এমন কী, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজেও রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে কোনও সহযোগিতা করেনি। বরং চিঠি দিয়ে বলেছে, কাঁটাতার বসাতে গেলে নিজেরা জমি কিনে বসান।”
“ফলে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনকে বেআইনিভাবে ভোটার কার্ড দিয়ে, রেশন কার্ড দিয়ে একটা অবৈধ ভোটারের বিশাল বসতি তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গ। তাতে হুমকি তৈরি হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও।”
“এই জন্যই পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বা এনআরসি-র মতো পদক্ষেপ নিয়ে বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা আশু দরকার”, বলছিলেন ভারতী ঘোষ।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মুখে এই পদক্ষেপকে একটা শস্তা রাজনৈতিক চমক হিসেবেই দেখছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার - যারা আগেই ঘোষণা করেছে এই আইন তারা পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োগ করতে দেবে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও সাবেক এমপি কুনাল ঘোষের কথায়, “এটা তো পুরোপুরি একটা রাজনৈতিক স্টান্ট। উন্নয়ন ইস্যু নিয়ে বিজেপির কিছু বলার নেই, তাই তারা এসব বলে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে।”
“তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে সবাই তো আগে থেকেই নাগরিক আছেন। নতুন করে বিজেপি আবার কীসের নাগরিকত্ব দেবে?”
“পশ্চিমবঙ্গ-বাসীর ভোটার তালিকায় নাম আছে, আধার কার্ড বা প্যান কার্ড আছে, সচিত্র পরিচয়পত্রও আছে। তাহলে নতুন কী এমন জিনিস তারা দেবে যা দিয়ে আবার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে?”
“আসলে আমরা মনে করি এই গোটা ব্যাপারটাই মানুষকে চরম বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা।”
“যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচনে জিতে বিজেপির এমপি-রা পার্লামেন্টে গেছেন সেটাই যদি ভুয়ো হয়, তাহলে তারা জিতলেন কীভাবে?”, এই পাল্টা প্রশ্নও তুলছেন কুণাল ঘোষ।
বিজেপি নেত্রী ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ভারতী ঘোষ অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই তিনি ভারতের নাগরিক - ব্যাপারটা সেরকম নয়।
মিস ঘোষ বলছিলেন, “শুধু ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড থাকলেই কিন্তু কেউ নিজেকে ভারতের বৈধ নাগরিক বলে দাবি করতে পারেন না।”
“সে কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই করে নাগরিকত্ব দেওয়ার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যারা সত্যি সত্যি ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে এসেছেন তাদের একটা স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে”, বলছিলেন ভারতী ঘোষ।
আর এই ‘স্বীকৃতি’-টা আসবে নতুন একটি ‘নাগরিকত্ব কার্ডে’র আকারে, জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্যাবিনেটের সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত এমপি দেবশ্রী চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মিস চৌধুরী বলছিলেন, “বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে কিংবা সামাজিকভাবে প্রতারিত হয়ে যারা এসেছেন তারাই এই বিশেষ ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ পাবেন।
“একাত্তরের পর বাংলাদেশ থেকেও ভারতে হিন্দুদের আসার ঢল ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই কার্ডের মাধ্যমে এখন তারা ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব পাবেন।”
“বাংলাদেশ থেকে আসা বহু হিন্দুর দাবি তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে এখনও সংশয় আছে। তাদের সেই নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটাবে এই কার্ড”, বলছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী।
বিজেপি সূত্রগুলো আরও দাবি করছে, পঞ্চাশের দশক থেকে ‘মতুয়া’ সমাজের প্রায় তিরিশ লক্ষ হিন্দু বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন - নতুন আইনের সুবিধা তারাই সবচেয়ে বেশি পাবেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার যে কোনও সহযোগিতা করবে না - তৃণমূল কংগ্রেস তা এর মধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে।