বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | রাজনীতি | শিরোনাম » বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং মূর্তি ইস্যুতেঃ হেফাজতের শীর্ষ আলেমদের বৈঠকের ডাক
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং মূর্তি ইস্যুতেঃ হেফাজতের শীর্ষ আলেমদের বৈঠকের ডাক
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং মূর্তি ইস্যুতে হেফাজতে ইসলাম পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে ঢাকায় শীর্ষ আলেমদের বৈঠক ডেকেছে শনিবার৷
এদিকে, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের মাঠে না নামতে দেয়ার৷ দলটি তার সহযোগী সংগঠনগুলোকে এরইমধ্যে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে৷ আর কৌশল হিসেবে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের দাবি অব্যাহত রেখেছে৷
হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা দেশের বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনকে তাদের দাবির সঙ্গে যুক্ত করতে চায়৷ তার আগে তারা ঢাকায় বড় ধরনের কোনো সমাবেশ করবে না৷ এ কারণেই শনিবার তারা ঢাকায় শীর্ষ আলেম ওলামাদের সঙ্গে পরামর্শ সভা ডেকেছে৷ ওই সভায় চরমোনাইর নেতারা ছাড়াও আরো অনেক ইসলামিক নেতাকে রাখার চেষ্টা করছে তারা৷ তাদের দাবি অনেক ধর্মীয় নেতারা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন৷ সভায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে তারা৷ আর মূর্তি বিষয়ে ইসলামের ভাষ্য নিয়ে তারা একটা যৌথ বিবৃতি দেবে৷ হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গেপ্তারে যে দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংঠনগুলোর কাছ থেকে সে ব্যাপারেও নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হবে৷
বৈঠকটি ডেকেছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বা বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান৷ এটি বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড৷ আর কওমি মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে হেফাজতে ইসলাম৷ হেফাজতের আমীর মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী তাকে দিয়ে কৌশলে এই বৈঠক ডাকিয়েছেন বলে জানা গেছে৷ এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো কওমিপন্থিদের বাইরের মাওলানাদেরও দাবির ব্যপারে এক জায়গায় নিয়ে আসা৷
শুক্রবার ঢাকার শাহবাগ বা বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় হেফাজতের সমাবেশের যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে তা নাকচ করে দেন হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফায়েজি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো সংঘাতে যেতে চাই না৷ শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই৷ ইসলামে মূর্তি হারাম তাই শুধু বঙ্গবন্ধু নয় জিয়াউর রহমানসহ দেশে যত মানুষের ভাস্কর্য আছে তা ভেঙে ফেলতে হবে৷ আমরা মনে করি মূর্তি আর ভাস্কর্য একই৷ দুইটার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই৷’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষের অনুভূতি সরকারকে বুঝতে হবে৷ আমরা সরকারকে দেশের মানুষ কী চায় তা জানিয়ে দিতে চাই৷ আর সেজন্যই শনিবার ঢাকায় শীর্ষ আলেম ওলামাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে৷ তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেই পথেই অগ্রসর হব৷’’
চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান জানান, ‘‘আলেম ওলামাদের শনিবারের ঘরোয়া বৈঠকের আগে আমরা নতুন কোনো কর্মসূচি দেব না৷ আর মূর্তি ইস্যুটাকে আমরা রাজনৈতিকভাবে দেখছি না৷ এটা ধর্মীয় বিষয়৷ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়৷’’
হেফাজত নেতারা এখনও গরম কথা বললেও তারা আপাতত বড় কোনো শো ডাউনে যাচ্ছে না বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ কারণ মামুনুল হক ছাত্রলীগের প্রতিরোধের মুখে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের মাহফিলে যেতে পারেননি৷ এরপর তিনি তার বক্তব্যের ব্যাখাও দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কিছু বলেননি৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে৷ তিনি সব ধরনের মূর্তির বিরুদ্ধে বলেছেন৷
এখন মাঠ মূলত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের দখলে৷ বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশে শো ডাউন করছে৷ সেখান থেকে হেফাজত নেতা মামুনুলকে গ্রেপ্তারের দাবি করা হচ্ছে৷ ঢাকায় মঙ্গলবার ৬৫টি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মানব বন্ধন করে জুনাইদ বাবুনগরী ও মামুনুল হকসহ তাদের সহযেগিদের গ্রেপ্তারে দাবি জানিয়েছে৷ শাহবাগে প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ করছে৷ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে শুধু ঢাকা নয় সারাদেশেই তারা প্রতিদিন মিছিল সমাবেশ করছেন৷ তারা বলছেন, কোনোভাবেই তারা হেফাজতকে মাঠে নামতে দেবেন না৷
এই সব সভা-সমাবেশ তদারকির জন্য কয়েকজন মন্ত্রী এবং এমপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তারা প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন৷ শুধু মাঠে নয় সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা ‘ভাস্কর্যকে মুর্তি বলে অপপ্রচারে’ বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে৷ এটা আরো জোরদার হবে৷ এজন্য দুইজন মন্ত্রীকে সরাসরি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ, টেলিভিশনে টক শো আর সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচারের কাজও শুরু করেছে৷
কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে:…
এর বাইরে আওয়ামী ওলামা লীগ মাঠে রয়েছে৷ তারাও মাওলানাদের একটি প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে৷ তারা প্রতিদিনই ভাস্কর্যকে মূর্তি বলার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ইসলামের ব্যাখ্যা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের উদাহরণ দিচ্ছেন৷
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কদের ছাড়াও আরো কয়েকজন মন্ত্রী স্পষ্ট করেই হেফাজতের অবস্থানের বিরুদ্ধে বলেছেন৷ তারা পাল্টা ব্যবস্থার কথা বলেছেন৷ নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনো কাজকেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না৷ আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে মাঠে আছে৷ আর সরকারেরও দায়িত্ব আছে৷ কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে৷ দলের সাধারণ সম্পাদক একজন মন্ত্রীও৷ তার কথায় সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট হয়েছে৷’’
ভাস্কর্য ও মূর্তি ইস্যুতে পুলিশ প্রশাসন এরইমধ্যে সক্রিয় হয়েছে৷ তারা ফেসবুকেও নজরদারি শুরু করেছে৷ অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে৷
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমীর মাওলানা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর বিষয়টি আবার সামনে আসছে৷ তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ লিফলেট ছাড়া হয়েছে৷ বাবুনগরী বিরোধী মাওলানা শফী পন্থীরা বৃহস্পতিবার এইসব বিষয় নিয়ে ঢাকায় একটি বৈঠক ডেকেছেন৷ শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর বিষয়টি মামলায় গড়াতে পারে বলে মনে হচ্ছে৷