বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » মেট্রোরেলের জন্য কি, ভাঙ্গা পড়বে ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলষ্টেশন”
মেট্রোরেলের জন্য কি, ভাঙ্গা পড়বে ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলষ্টেশন”
বিবিসি২৪নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তরের প্রস্তাব এসেছে। বর্তমান স্থানে স্টেশনটি থাকলে নির্মাণাধীন ঢাকা মেট্রোরেলের স্থাপনার আড়ালে পড়ে যাবে।
আবার কমলাপুর স্টেশনকে ঘিরে নেওয়া মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রকল্পও বাধাগ্রস্ত হবে। এ বিবেচনায় স্টেশনটি কিছুটা উত্তরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা দিয়েছে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্টেশন ভবনটি ভাঙা পড়বে।
সম্প্রতি রেল ভবনে এ–সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি সাপেক্ষে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বৈঠকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে কারিগরি দিক তুলে ধরে জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা করপোরেশনের নেতৃত্বে একটি সাবওয়ার্কিং গ্রুপ।
মেট্রোরেল এবং এর সব স্টেশনই হবে উড়ালপথে, মাটি থেকে কমবেশি ১৩ মিটার ওপরে। এর ফলে শেষ স্টেশনটি বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনের সামনের অংশ ঢেকে দেবে।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলমান। এর শেষ স্টেশনটি পড়েছে কমলাপুর স্টেশনের ঠিক সামনে। মেট্রোরেলের পথ (রুট) পরিবর্তিত হবে নাকি কমলাপুর স্টেশন সরানো হবে, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, মেট্রোরেল কমলাপুর স্টেশনের সৌন্দর্যহানি করবে। তাই রুট পরিবর্তন করা হোক। কিন্তু মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) রুট পরিবর্তন করতে চাইছিল না।
ডিএমটিসিএলের বক্তব্য ছিল, রুট পরিবর্তন করলে দু–তিন কিলোমিটার পথ বেড়ে যাবে। এতে খরচও বাড়বে। এ ছাড়া মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। পরিবর্তন করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে।
শেষ পর্যন্ত জাপানের কাজিমা করপোরেশনের নকশা ধরে কমলাপুর স্টেশনটিই ১৩০ মিটার উত্তরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে। আগের ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। এতে মেট্রোরেলেরও কোনো পরিবর্তন করা লাগবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে।
জানতে চাইলে রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামা বলেন,কমলাপুর স্টেশন ঘিরে মাল্টি মোডাল হাব গড়ে তোলা হবে, যা শাহজাহানপুর সহ আশপাশের রেলের জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলেই নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যেই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।বাস্তবায়ন শেষ হতে ১০ বছর লাগতে পারে। তিনি জানান,মেট্রোরেলে র কারণে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়ে গেলে এর সৌন্দর্য আর থাকবে না। তাই সরিয়ে নেওয়াই উত্তম বিকল্প।
প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করে মেট্রোরেল কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। মেট্রোরেল এবং এর সব স্টেশনই হবে উড়ালপথে, মাটি থেকে কমবেশি ১৩ মিটার ওপরে। এর ফলে শেষ স্টেশনটি বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনের সামনের অংশ ঢেকে দেবে। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে আরেকটি মেট্রোরেল কমলাপুরে এসে মিশবে। এটি অবশ্য হবে পাতালপথে। এ প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ চলমান।
কমলাপুর স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব গড়ে তোলা হবে, যা শাহজাহানপুরসহ আশপাশের রেলের জায়গা জুড়ে বিস্তৃত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশনের আদলেই নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে সরকারি–বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) কমলাপুর স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব করার প্রকল্প সরকার নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়।
এর অধীন কমলাপুর স্টেশনের চারপাশে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। থাকবে হোটেল, শপিং মল, পাতাল ও উড়ালপথ। বহুতল আবাসন ভবনও নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের কাজিমা করপোরেশন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে তিনটি বৈঠক হয়েছে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে কাজিমা করপোরেশন পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করবে।
জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল পরিকল্পনামতোই হবে। এখন স্টেশন সরানোর বিষয়টি একান্তই রেলের বিষয়। যেভাবে করলে ভালো হয়, রেল সেভাবেই পরিকল্পনা করবে।
রেলের এসব পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, কমলাপুর স্টেশন ভবনটি ৬৭ বছরের পুরোনো। এটি রেলের আইকনিক ভবন হিসেবে বিবেচিত। এর সঙ্গে সংস্থাটির আবেগ জড়িয়ে আছে। মেট্রোরেলের আড়ালে পড়ে যাক, সেটা তারা চায় না। এ জন্য মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনেই বেশি জোর দিয়েছিল রেল। কিন্তু এ বিকল্প ব্যয়বহুল বলে স্টেশনটি সরিয়ে একই ধরনের ভবন তৈরির বিকল্পে সায় দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে স্টেশনের ভেতরে থাকা বিদ্যমান রেললাইনও সরাতে হবে।
রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, পিপিপির ভিত্তিতে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রকল্পটির গতি খুবই কম। বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলস্টেশনেও একইভাবে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এসব প্রকল্পের কাজ শিগগির শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম। জাপানের কাজিমা করপোরেশন থেকে বিষয়টি এখনই ফয়সালা করে রাখার তাগিদ এসেছে।