বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » খেলাধুলা | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ফুটবল ঈশ্বর ও ফুটবল মহানায়ক কিংবদন্তি ম্যারাডোনার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার
ফুটবল ঈশ্বর ও ফুটবল মহানায়ক কিংবদন্তি ম্যারাডোনার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার
বিবিসি২৪নিউজ, স্পোর্টস ডেস্ক : সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। খ্যাতি আর বিতর্ক যার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। ক্যারিয়ার ও বিতর্কের কিংবদন্তি ম্যারাডোনা দিয়েগো ম্যারাডোনা। হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকে চলে গেলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। বুধবার (২৫ নভেম্বর) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার।
১৯৮৬’র বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ম্যারাডোনা তার ক্যারিয়ারের পুরো সময়ই আলোচনায় ছিলেন। এমনকি অবসরের পরও তিনি বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন।
শৈল্পিক ফুটবলের পাশাপাশি বিতর্কে নাম জড়িয়েছেন অসংখবার।
পুরো নাম দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা।
সীমাহীন ভালোবাসায় পূর্ণ ও বাঁধনহারা এক জীবন তার।
গত অক্টোবর নিজের ৬০তম জন্মদিন পালন করেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি এ মহাতারকা। যদিও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সেলফ-আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। গত ২০ বছর দু’বার হার্ট অ্যাটাক এবং হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ম্যারাডোনা।
মাত্রাতিরিক্ত কোকেন গ্রহণ ও অ্যালকোহল সেবনের কারণে তার শরীর এখন প্রায়ই বিদ্রোহ করছে। ফলে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ঘরে থাকাই মঙ্গলজনক মনে করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের ডাকে চলে যেতে হলো এই ফুটবল ঈশ্বরকে।
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের এক দরিদ্র পরিবারে ১৯৬০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। কৈশোরেই তার ফুটবল প্রতিভা সবার নজরে আসে। সেই তার জাদুকরি ফুটবল প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখে পুরো বিশ্ব। আবার মাঝে মাঝে বিতর্কে জড়িয়েও শিরোনাম হয়ে আসছেন তিনি। তবে সেসব বিতর্ক পেছনে ফেলে ঠিকই উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
বেপরোয়া ও প্রতিভাবান, আগ্রাসী, একজন অনুগত বন্ধু এবং নির্দয় শত্রু- ম্যারাডোনা সর্বদাই ফুটবলভক্তদের জন্য তীব্র আকর্ষণীয় এক চরিত্র। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিয়েছেন তারই সাবেক আর্জেন্টাইন ও বোকা জুনিয়র্স সতীর্থ হুগো পোরেত্তি। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে, ম্যারাডোনা আফ্রিকা নেমে ঠিকমতো হাঁটতেও পারেনি। তাকে একনজর দেখার জন্য এত মানুষ জড়ো হয়েছিল যে রানওয়েতে প্লেন আটকে গিয়েছিল। ‘
এটা ১৯৮১ সালের কথা, যখন ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন কিছুই ছিল না। সে হাজারো মানুষের ভিড় পারি দিয়েছে। আমার ধারণা এত বিপুল জনপ্রিয়তা তার জীবনে বিপর্যয় বয়ে এনেছিল। (মাদকের ডুবে যাওয়ার পর) আমরা ভাবতেই পারিনি যে সে কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। ‘
শুরুতে তার ক্যারিয়ারের উত্থান। বোকাকে আর্জেন্টাইন শিরোপা জিতিয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সেই কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনায় পাড়ি জমান ম্যারাডোনা। এরপর মাত্র ২৫ বছর বয়সে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জেতান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার প্রতিভা আর তার উল্টো দিকটা প্রকাশ পায়।
ইংলিশদের বিপক্ষে ওই ম্যাচে হাত দিয়ে গোল করেন তিনি, যেটাকে তিনি নিজেই ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে অভিহিত করেন। একই ম্যাচে ঝড়ের গতিতে ৬০ মিটার দূর থেকে দৌড়ে ইংলিশদের পাঁচ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলটি করেন। ২০০২ সালে ফিফা ডট কম এর ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।
বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেশে ফেরার পর তাকে আর্জেন্টাইনরা ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেন। এমনকি তার ভক্তদের একটা অংশ ‘চার্চ অব ম্যারাডোনা’ প্রতিষ্ঠা তার আরাধনাও শুরু করেন।
এক বছর পর ইতালির নাপোলিকে প্রথমবারের মতো সিরি আ’র শিরোপা জেতান ম্যারাডোনা। তিন বছর পর আবারও নাপোলিকে শিরোপা স্বাদ দেন তিনি। ইতালির ওই শহরেও তাকে ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করা শুরু হয়। সেখানেও তার নামে চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন একদল ভক্ত। কিন্তু ততদিনে তার অধঃপতন শুরু হয়ে গেছে।
১৯৯০ বিশ্বকাপে দুর্বল দল নিয়েও ফাইনালে উঠে যায় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় কেঁদে ভাসিয়ে দেন ম্যারাডোনা।
এক বছর পর ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। শেষ হয়ে যায় নাপোলি ক্যারিয়ার। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর সেভিয়ায় এক মৌসুম শেষে ইউরোপ ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সেখানে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজে খেলার পর বোকায় ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু সেখানেও বেশীদিন থাকা হয়নি তার। ১৯৯৭ সালে তার ক্লাব ক্যারিয়ারও সেখানেই শেষ হয়।
২১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ৬৭৯ ম্যাচে ৩৪৬ গোল করেছেন।
শত বিতর্ক সত্ত্বেও ২০০০ সালে ম্যারাডোনাকে পেলের সাথে যৌথভাবে বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে ফিফা।
তবে কোচ হিসেবে ম্যারাডোনার সাফল্য কখনোই তার খেলোয়াড়ি জীবনের ধারেকাছে যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের পর দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে দায়িত্ব ছাড়তে হয় তাকে। তবে কোচ হিসেবে সাফল্য না পেলেও নামের জন্যই তার অফারের অভাব হয়নি, তা সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মেক্সিকোর ক্লাব কিংবা নিজ দেশের হিমনেশিয়া এসগ্রিমা লা প্লাতাই হোক না কেন। কারণ তার নামটাই তো যথেষ্ট এমনই সে নাম, যার কোনো তুলনা হয় না।