সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | রাজনীতি | শিরোনাম | সাবলিড » সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়াতে ছিল সম্রাটের সাম্রাজ্য-দুদক
সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়াতে ছিল সম্রাটের সাম্রাজ্য-দুদক
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক জানিয়েছেন,মহানগর যুগলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের প্রায় সোয়া ২ শ’ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে । এর মধ্যে ২১৯ কোটি টাকা সম্রাট পাচার করেছিলেন সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার তিনটি ক্যাসিনোতে। এ অবৈধ বিনিয়োগের টাকাও আয় করেছিলেন ক্যাসিনোর মাধ্যমেই। রাজধানীর পল্টন-মতিঝিলে একাধিক ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন তিনি। ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ খেতাবটা পেয়েছেন এভাবেই।
সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্তে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার তিনটি ক্যাসিনোতে ২১৯ কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পেয়েছে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এসব টাকা জ্ঞাত আয় বর্হিভূত। দেশের ভেতর তার বিনিয়োগ ছিল না বললেই চলে। মাত্র সাড়ে তিন কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিটের সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। রবিবার (১৫ নভেম্বর) কমিশন সেই চার্জশিট অনুমোদন করেছে।
দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিস্তারিত তদন্তে তার বিরুদ্ধে মোট ২২২ কোটি জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়েছে। এর মধ্যে সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা পাচার করে তথ্য গোপন করেছেন। যা মানি লন্ডারিং আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্ত সম্রাটের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করে কমিশনে প্রস্তাব করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত কর্মকর্তার এই সুপারিশ অনুমোদন করেছে।’
গত বছরের ১২ নভেম্বর দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। এর আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের পাশাপাশি মানিলন্ডারিং আইনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি একটি মামলা দায়ের করেন।
দুদক সূত্র জানায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে মাত্র দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করা হয়। পরে তদন্ত করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন ও অর্থ পাচারের তথ্য বেরিয়ে আসে।
দুদক সূত্র জানায়, সম্রাটের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেশের বাইরে থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরের দুটি ক্যাসিনোতে ৩ কোটি ৬৫ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার জমা দেয়ার তথ্য পেয়েছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১৯ কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে দুই কোটি ৩ লাখ সিঙ্গাপুরের ডলার উত্তোলন করেন সম্রাট। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
দুদক সূত্র জানায়, সম্রাটের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তারা মালয়েশিয়ার একটি ক্যাসিনোতে লেনদেনের তথ্য পান। ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল সম্রাট ২ লাখ ৫ হাজার রিঙ্গিত লেনদেন করেন (প্রায় ৪৯ লাখ টাকা)। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার তিনটি ক্যাসিনোতে তিনি মোট ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা পাচারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছিলেন।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্তকালে জব্দ করা রেকর্ডপত্র, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আসামির বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সম্রাট অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তার ভাই ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোস্তফা জামানের নামে রাজধানীর কাকরাইলে ৪ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনে নিজে ভোগদখল করেছেন। এ ছাড়া আয়কর নথির মাধ্যমে উৎসবিহীন ব্যবসার মূলধনসহ ৩ কোটি ৪০ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।
দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক বছরের তদন্ত শেষে কমিশনে সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন ইতোমধ্যে তা অনুমোদন দেওয়ায় শিগগিরই এই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।
এদিকে সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্রাটের বিরুদ্ধে ১৯৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে তারা একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার তদন্ত চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সম্রাট কাকরাইলের মেসার্স হিস মুভিজ নামে একটি অফিসে অবস্থান করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকার ১০টি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা ছিল সম্রাটের। এ ছাড়া যুবলীগের সভাপতি পদের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত সম্রাট ৩৫ বার সিঙ্গাপুরে, তিনবার মালয়েশিয়া, দুইবার দুবাইতে এবং একবার হংকং ভ্রমণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।