সোমবার, ১৯ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » আমিরাতের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
আমিরাতের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সুপরিচিত সাহিত্য ও শিল্প উৎসব ‘হে ফেস্টিভ্যাল’ এর পক্ষ থেকে উপসাগরীয় এক শীর্ষ রাজপরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে তাদের একজন নারী কর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে এই ঘটনাকে “ন্যক্কারজনক লংঘন” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হে উৎসবের সভাপতি, ক্যারোলাইন মিশেল বলেছেন শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান দেশটির সহিষ্ণুতা বিষয়ক মন্ত্রীর (মিনিস্টার ফর টলারেন্স) পদে যতদিন থাকছেন, ততদিন তারা আবুধাবিতে এই উৎসবের আয়োজন করা থেকে বিরত থাকবেন।
তাদের কর্মী কেইটলিন ম্যাকনামারা দাবি করেছেন শেখ নাহিয়ান এবছরের গোড়ার দিকে তার ওপর যৌন হামলা চালান এবং তিনি এর জন্য আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৬৯ বছর বয়সী শেখ নাহিয়ান।
লন্ডনের দ্যা সানডে টাইমস পত্রিকাকে ৩২ বছর বয়সী মিস ম্যাকনামারা জানিয়েছেন, তিনি যে হামলার অভিযোগ করছেন সেটি ঘটেছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি ব্যক্তিগত মালিকানার দ্বীপে এক আবাসিক অট্টালিকায়। আবুধাবিতে এবছর প্রথমবারের মত যে হে সাহিত্য ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করা হয়েছিল, ওই ঘটনার ১১ দিন পর তার উদ্বোধন হবার কথা ছিল। মিস ম্যাকনামারা ভেবেছিলেন ওই উৎসব নিয়ে কথা বলার জন্য তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
মিস ম্যাকনামারা বলেন তার ওপর নির্যাতনের ওই ঘটনার পরপরই তিনি বিষয়টি তার চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান এবং দেশটিতে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন। এবং ব্রিটেনে করোনাভাইরাস লকডাউন প্রত্যাহারের পর তিনি কেন্ট এলাকার পুলিশ স্টেশনে গিয়েও ঘটনাটি জানান।সানডে টাইমস পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের সরকারি কৌঁসুলি বিভাগ (ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস) এই মামলা নেবে কি না, তা জানার জন্য মিস ম্যাকনামারা অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন তিনি তার ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখার অধিকার বিসর্জন দিয়ে এই ঘটনার কথা সবার সামনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ তার ভাষ্য অনুযায়ী: “আমি মনে করেছি আমার হারাবার কিছু নেই।”
”আমি এটা করতে চেয়েছি, কারণ তার মত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা কী করতে পারেন সেটা আমি জানাতে চাই। তারা মনে করেন তারা এধরনের কাজ করতে পারেন এবং পার পেয়ে যেতে পারেন,” তিনি সংবাদপত্রে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন।
”তার বাসভবন যেভাবে সাজানো তা থেকে এটা স্পষ্ট যে আমি প্রথম নারী নই, এবং আমি শেষ নারীও নই। ওই ঘটনা আমার ওপর বিশালভাবে মানসিক ও শারীরিক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু তার জন্য হয়ত এটা নিছক একটা খামখেয়ালির মতো।”
সানডে টাইমস বলছে এই অভিযোগ সম্পর্কে শেখ নাহিয়ানের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দেননি। তবে লন্ডনে মানহানি মামলার আইনি প্রতিষ্ঠান শিলিংস্-এর আইনজীবীদের একটি বিবৃতি পত্রিকাটিকে দেয়া হয়েছে যাতে বলা হয়েছে: ”আমাদের মক্কেল এই অভিযোগে বিস্মিত এবং মর্মাহত। এই ঘটনা যখন ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তার আট মাস পর এটা জানানো হচ্ছে এবং জানানো হচ্ছে একটি জাতীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে। এই ঘটনার বিবরণ অস্বীকার করা হচ্ছে।”
শিলিংস্ বিবিসিকেও এর বাইরে আর কিছু বলতে অস্বীকার করেছে।
হে ফেস্টিভ্যালের সভাপতি ক্যারোলাইন মিশেল টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন: ”আমাদের সহকর্মী ও বন্ধু কেইটলিন ম্যাকনামারার সাথে গত ফেব্রুয়ারিতে আবুধাবিতে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা তার ও তার পদমর্যাদার প্রতি আস্থার ন্যক্কারজনক লংঘন এবং একটা ঘৃণ্য নির্যাতনের ঘটনা।”
”শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান মন্ত্রী হিসাবে তার দায়িত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন এবং দেশটিতে বাক স্বাধীনতা ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠাকে আরও উজ্জীবিত করতে হে ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছিল সেই প্রচেষ্টাকে খর্ব করেছেন।”
”এই যৌন নির্যাতনের আইনি বিচার চাওয়ার ব্যাপারে কেইটলিনের পদক্ষেপকে আমরা সমর্থন করছি এবং ইউএই-তে আমাদের যারা বন্ধু ও পার্টনার আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ানের আচরণ বিশ্লেষণ করে দেখেন এবং এধরনের আচরণ যে অগ্রহণযোগ্য বিশ্বের মানুষকে যেন স্পষ্টভাবে সেই বার্তাটা দেন। তিনি যতদিন মন্ত্রী পদে থাকবেন ততদিন হে ফেস্টিভ্যাল আবুধাবিতে যাবে না।”