শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদে আসলে কারা আছে ?
ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদে আসলে কারা আছে ?
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাঃ ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলন করে পরিচিতি পায় ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এপিএম সুহেলের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷ নতুন পরিষদের এই নাম ছাত্র অধিকার পরিষদেরই আগের নাম। নাম ও লক্ষ্য এক হলেও এক পরিষদ আরেক পরিষদকে মেনে নিতে পারছে না। বরং, দুই পরিষদের মাঝে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ।
ছাত্র অধিকার পরিষদ-এর নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন, নুরুল হক নুর, মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও ফারুক হাসান। পরিষদটির আহ্বায়ক কমিটিতেও ছিলেন তারা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিত পায় এ চার জনের নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি।
এদের মধ্যে নুরুল হক নুরসহ কয়েকজনের ওপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের শেষের দিকে হামলা হয়। এতে আলোচনায় আসেন তারা। আলোচনার ডামাডোলে ডাকসু নির্বাচনে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর প্যানেল থেকে নুরুল হক ভিপি প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
গত বছর ২২ ডিসেম্বর ডাকসু কার্যালয়ে হামলার শিকার হন নুর। এ সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এপিএম সুহেলও আহত হন। তবে সংগঠন পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে এ বছরের মে মাসে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় সুহেলকে।
২০ সেপ্টেম্বর ছাত্র অধিকার পরিষদের হাসান আল মামুনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। মামলায় ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে নুরুল হককেও আসামি করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এপিএম সুহেলও এ নিয়ে সোচ্চার হন। আর তখন থেকেই সুহেল-নুরের অনৈক্যের বিষয়টি সামনে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় সুহেলের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।
তবে ছাত্র অধিকার পরিষদ-এর চার নেতার মাঝে এখনও ঐক্য রয়েছে বলে জানান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। সুহেলের নেতৃত্বে আগের নামে নতুন সংগঠনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের মধ্যে কোনও ভাঙন হয়নি। মূল চার নেতার মধ্যে যদি একজনও আলাদা অংশে থাকতেন, তাহলে সেটাকে পুরোপুরি ভাঙন বলা যেত। যাদের হাত ধরে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তারা সবাই একত্রে আছেন। যার নেতৃত্বে আগের নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ঘোষণা হয়েছে, তাকে আগেই পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাকে নিয়ে আমরা ভাবছি না। সে তো আমাদের সংগঠনে নেই।’
শুরু থেকেই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন এপিএম সুহেল। তাকে কেন বহিষ্কার করা হয়েছিল জানতে চাইলে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘সুহেল সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী অনেক কাজ করেছেন। সিঙ্গাপুর প্রবাসী একজনের কাছ থেকে ব্যবসায়ের কথা বলে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে সেটা ফেরত দেননি। ওই টাকা চাইলে সুহেল এক ছাত্রলীগ নেতাকে দিয়ে ওই প্রবাসীকে হুমকি দেন। যার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এমন আরও কিছু কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও তিনি সংগঠনের মধ্যে ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছেন, যা এখন দৃশ্যমান।’
এ বিষয়ে এপিএম সুহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তা আমি প্রমাণ করবো। ওই সংগঠনে অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য লুকিয়ে আছে, যা আমি প্রমাণসহ পরে সংবাদ সম্মেলনে বলবো।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এপিএম সুহেল বলেছেন, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের তৃতীয় বর্ষে পদার্পণের অনুষ্ঠানে সংগঠনের নাম সংক্ষিপ্ত করা হয়। আমরা অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলাম। ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাড়াহুড়ো করে রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে তিনটি অঙ্গসংগঠন ঘোষণা করা হয়। এসব সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। এতে সংগঠনের ভেতরে চাপা ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তখন অনেকেই এর বিরোধিতা করেন। কিন্তু একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।’
সুহেল আরও জানান, ‘তারুণ্যনির্ভর এ দলের আত্মপ্রকাশ প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে মুখোশ পরে আছে ভয়ঙ্কর কিছু সত্য। এ ব্যাপারে সংগঠনের প্রায় সবাই জানে। কিন্তু কেউ প্রকাশ করতে চায় না।’
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আছে বলে এ বছরের আগস্টে জানিয়েছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তখন ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে এমপি প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন তিনি।