বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারি
ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারি
বিবিসি২৪নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চলমান শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচী থামানোর লক্ষ্যে থাই সরকার ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারির আদেশ দিয়েছে।
বড় কোন সমাবেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এই আদেশে।
টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া এক ঘোষণায় পুলিশ জানিয়েছে ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে’ জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন’।
বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ অন্যতম প্রধান তিনজন নেতাসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে।
মূলত শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের দাবি, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং রাজার ক্ষমতা কমিয়ে আনা।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা থেকে ব্যাংককে জরুরি অবস্থা কার্যকর হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে তারা ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে, তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি।
যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে বিক্ষোভের প্রধান নেতারা - মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী অ্যানন নামপা, ‘পেঙ্গুইন’ নামে সুপরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট পারিত চিওয়ারাক এবং পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানকুল - রয়েছেন।
অগাস্ট মাসে থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে প্রথমবার সমালোচনা করে এবং প্রথাগত ধারার সংস্কারের দাবি তুলে আলোচনায় আসেন মি. অ্যানন।
ঐ মাসের শেষদিকে রাজতন্ত্রের নিয়ম সংস্কারের ১০ দফা দাবি পেশ করে আলোচনায় আসেন পানুসায়া সিথিজিরাওয়াত্তানকুল।
নতুন আদেশে কী বলা হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা’র আদেশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।ঐ ঘোষণায় বলা হয় বিক্ষোভকারীরা ‘বিশৃঙ্খলা ও সংঘাতকে উস্কে দেয়’ এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছিল এবং ‘রাজকীয় গাড়িবহরে’ বাধা দিয়েছিল।
আদেশটি কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণ পর দাঙ্গা পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বাইরে থাকা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। সেসময় কেউ কেউ প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করলেও তাদের জোর করে পিছু হটিয়ে দেয় পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার পরও রাস্তায় শত শত পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আদেশে একসাথে চারজনের বেশি জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি মিডিয়ার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
‘আতঙ্ক উদ্রেককারী বা ইচ্ছাকৃত ভাবে তথ্য বিকৃত করে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা অথবা শান্তি-শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলে’, এরকম কোনো খবর প্রচার থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আদেশে।
এছাড়া এই আদেশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ‘নিজেদের বাছাই করা যেকোনো এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে।
কেন বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা?
গণতন্ত্রের সমর্থনে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলতে থাকা আন্দোলন থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীনদের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা সাবেক সেনাপ্রধান ও ২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করা মি. প্রায়ুথের - যিনি গত বছর বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন - পদত্যাগ দাবি করছে।
থাইল্যান্ডের সংবিধান যেন নতুন করে লেখা হয়, সেটি বিক্ষোভকারীদের আরেকটি দাবি। সম্প্রতি করা সংবিধানের কয়েকটি সংশোধনী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
অগাস্টে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবি জোরালো হতে থাকে। বর্তমানে থাই আইন অনুযায়ী থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা বেআইনি, যেই ধারা দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে।
২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার পর থেকে মি. প্রায়ুথের বিরুদ্ধে বহু বিক্ষোভ হয়েছে, তবে ফেব্রুয়ারিতে আদালত নুতন করে গণতান্ত্রিক একটি দল বিলুপ্ত করার আদেশ দেয়ার পর এই আন্দোলন নতুন গতিবেগ পায়।
ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি ২০১৯ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সংসদে তৃতীয় সর্বোচ্চ আসন পায়। তবে ঐ নির্বাচনে বিতর্কিতভাবে জয়ী হয় সেনা নেতৃত্বাধীন সরকার।
এবছরের জুলাই থেকে নিয়মিত ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়ে আসছে। গত সপ্তাহে ব্যাংককে হওয়া বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।
থাইল্যান্ডের বাস্তবতায় রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের সমালোচনা করলে দীর্ঘ সময় কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।