মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » তুরস্কের বিরুদ্ধে ইইউর নিষেধাজ্ঞা হতে পারে!
তুরস্কের বিরুদ্ধে ইইউর নিষেধাজ্ঞা হতে পারে!
বিবিসি২৪নিউজ, আবু আইয়ুব মুকুল, ইইউ প্রতিনিধিঃ আজিয়ান সাগর এলাকায় তুরস্কের তেল গ্যাস অনুসন্ধান অভিযানকে কেন্দ্র করে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এমনকি দুই দেশ সামরিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যাপারে আঙ্কারা আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলায় ইউরোপও তুরস্কের তীব্র সমালোচনা ও হুশিয়ার করে দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল অভিযোগ করেছেন, তুরস্ক সরকার সাবেক সাম্রাজ্যের যুগে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি পূর্বভূমধ্য সাগরে তুরস্কের সাম্প্রতিক তৎপরতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তুরস্ককে থামাতে হলে ওই দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়াই একমাত্র পথ।
এদিকে, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এইয়ু লুদ্রিয়ানও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন পার্লামেন্ট অধিবেশনে তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনা করা হবে এবং তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউরোপের সব দেশ একমত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে গ্রিসের কর্মকর্তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পূর্বভূমধ্য সাগরের সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুরস্ক সরকার পূর্বভূমধ্য সাগর ও আজিয়ান সাগর এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এটাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণের প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে সাইপ্রাস ও গ্রিসের সঙ্গে তুরস্কের তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আঙ্কারা দাবি করেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানি সাম্রাজ্যের পতনের ইউরোপের সঙ্গে চুক্তির কারণে তুরস্ক আজিয়ান সাগর ও পূর্বভূমধ্য সাগরে তার বহু দ্বীপ হাতছাড়া করেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান সম্প্রতি বলেছেন, আঙ্কারা চায়না তুরস্কের উপকূলীয় এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ুক।
আঙ্কারা পূর্বভূমধ্য সাগরে আজিয়ান সাগর এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু করায় গ্রিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। গ্রিস দাবি করেছে, তাদের অর্থনৈতিক এলাকায় তুরস্ক সরকার তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে। যাইহোক, তুরস্ক ও গ্রিস একে অপরের বিরুদ্ধে সীমানা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলায় দু’দেশের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়া তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান বলেছেন, এই ইউনিয়ন গ্রিসের পাশে রয়েছে এবং আমরা তুরস্ককে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুরস্ক সরকার তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে তাদের অবস্থানে অটল থাকায় পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাকর হয়ে উঠেছে। তুরস্ক সরকার চাইছে আজিয়ান সাগর এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের মাধ্যমে উপকূলবর্তী দ্বীপগুলোর উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ওই অঞ্চলের উপর আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে মেনে নিতে বাধ্য করা। কিন্তু গ্রিস ও সাইপ্রাসের প্রতি ব্রাসেলসের পূর্ণ সমর্থনের কারণে তুরস্কের এ লক্ষ্য পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এরইমধ্যে ইউরোপের কোন কোন দেশ গ্রিসের প্রতি কার্যকর সমর্থন দেয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে উত্তেজনা চলে আসছে। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াও থেমে আছে। এছাড়া সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযান এবং লিবিয়া যুদ্ধে তুরস্কের সামরিক হস্তক্ষেপও ইউরোপ ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
এর আগে ব্রাসেলসের পক্ষ থেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে তুরস্কের পদক্ষেপকে বেআইনি ঘোষণা দিয়ে আঙ্করাকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়েছিল তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে তুরস্ক ইউরোপের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে।
যাইহোক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান হুমকি দিয়ে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তারাও তুরস্কের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে। যদিও ব্রাসেলস বিরাজমান উত্তেজনা ও মতপার্থক্য নিরসনের জন্য আঙ্কারার সঙ্গে আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন। তিনি উস্কানি মূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য এরদোগানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় আগামীতে ইউরোপ ও তুরস্কের সম্পর্ক কোনদিকে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।