শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১

BBC24 News
রবিবার, ১৬ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশেরযাত্রা,বঙ্গবন্ধু বলেই পেরেছেন
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশেরযাত্রা,বঙ্গবন্ধু বলেই পেরেছেন
১৯৩৬ বার পঠিত
রবিবার, ১৬ আগস্ট ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশেরযাত্রা,বঙ্গবন্ধু বলেই পেরেছেন

---বিবিসি২৪নিউজ,মোল্লা জালাল :খুবই স্বাভাবিক প্রশ্ন, একজন মানুষ কীভাবে একটি জাতির পিতা হয়? শুধু বাঙালি জাতিরই নয়, ইতিহাসে বহু দেশে বহু জাতি-গোষ্ঠী অনেককেই জাতির পিতা হিসেবে সম্মান দেয়, সম্বোধন করে। এ উপমহাদেশের ভারতে মহাÍা গান্ধী, পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাকে জাতির পিতা হিসেবে মান্য করা হয়।

বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশযাত্রা বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে নয়। বহু বছর আগে থেকে সভ্যতার ক্রমবিকাশে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে একটি মানবগোষ্ঠী ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক পরিবর্তন-পরিবর্ধনের লড়াই-সংগ্রামে টিকে থেকে জীবনাচারের মধ্য দিয়ে নিজেদের একটি সত্তা সৃষ্টি করে। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে অভিহিত হয়ে সর্বশেষ বাঙালি হিসেবে পরিচিতি পায়। এ বাঙালি জাতি হাজার বছর ধরে অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান ও চালাক-চতুর লোকদের দ্বারা শাসিত-শোষিত হয়েছে। অনেক বছর আগের কথা বাদ দিলেও সমসাময়িক সময়ের ইতিহাসে মোগল, পাঠান, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদেরও যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তাহলে দেখা যায়, এরা প্রত্যেকেই বাংলায় এসেছে পঙ্গপালের মতো।

এসে লুটেপুটে সব খেয়ে চলে গেছে, নয়তো বিতাড়িত হয়েছে। এ চলে যাওয়া বা বিতাড়িত এমনিতে হয়নি। অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি হাজার বছর ধরে লড়াই করেছে। যদি মোগল আমল থেকেও ধরা হয় তাহলেও দেখা যায়, রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার বিবেচনায় সেই ঈশা খাঁ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের মোনায়েম খাঁ পর্যন্ত সব শাসক এ বঙ্গভূমিকে বেশুমার লুটপাট করেছে। নানা কায়দায় বাঙালি জাতিসত্তার বিনাশ করতে চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত কেউ সফল হয়নি। অপরদিকে বাঙালি তার মানমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতেও পারেনি। কোনো না কোনো পর্যায়ে সমঝোতা করতে হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ঈশা খাঁ এক অসীম সাহসী বীরযোদ্ধা হিসেবে মোগলদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও একপর্যায়ে তিনি ভাটির রাজা হিসেবে মোগলদের কাছ থেকে ‘মসনদে-আলা’ খেতাব নিয়ে সমঝোতা করতে বাধ্য হন। তিনি পারেননি বাঙালি জাতিকে তার কাক্সিক্ষত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে। ঈশা খাঁর বংশধররাও পারেনি। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতবর্ষ তথা বঙ্গদেশে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস কারও অজানা নেই। ইঙ্গ-ফরাসি-পর্তুগিজ ফিরিঙ্গিদের নানা রকমের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বীর বাঙালির বীরত্বগাথার অনেক লড়াই-সংগ্রামের অনেক ‘গল্প’ ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। যুগে যুগে বাঙালি হয়েছে প্রতারিত। সর্বশেষ প্রতারণা করেছে পাকিস্তান।

১৯৪৯ সালেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান শেখ মুজিব। তার আগে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন অগ্রসেনানী। পাকিস্তান সৃষ্টির পর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শুরু করেন জীবনপণ লড়াই। প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে দলের নাম পরিবর্তন করে করা হয় শুধু আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দীর অবর্তমানে শেখ মুজিব বাঙালির অধিকার আদায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনের সব দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। টানা তেইশ বছর ধরে বিরতিহীন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালি জাতির মনে দুর্দমনীয় সাহস সঞ্চার করেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গোটা জাতি প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায় জুলুম আর জালেমের বিরুদ্ধে। আর এ সাহসী সংগ্রামের আপসহীন নেতা হিসেবে তিনি শেখ মুজিব থেকে হয়ে যান সব মানুষের ‘বঙ্গবন্ধু’। বাঙালির ইতিহাসে ১৯৫২, ৫৪, ৬২, ৬৬, ৬৯ এবং ৭০ সালের ঘটনা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের একেকটি মাইলফলক।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে ‘বঙ্গবন্ধু’ বিশ্বের মানচিত্রে একদিকে যেমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেন, তেমনি মানবজাতির ইতিহাসে স্বাধীন বাঙালি জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। যে মর্যাদার জন্য বাঙালি হাজার বছর ধরে সংগ্রাম করেও সফল হয়নি। তাই ইতিহাস বলে, ‘মুজিব যখন ধরল হাল পাল্টে গেল সর্বকাল’। এ কারণেই তাকে বলা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা। এটা আওয়ামী লীগের স্লোগান নয়। অথবা নয় শেখানো কোনো গল্প। এটাই ইতিহাস। বুদ্ধি করে কেউ ইতিহাস বানাতে পারে না, মানুষের কর্মে ইতিহাস সৃষ্টি হয়। কেউ মানুক আর না-ই মানুক, সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশই এখন বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক। যতই দিন যাবে বিশ্বের সব প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ঠিকানা হবে বাংলাদেশ। কারণ, ছোট হলেও বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষের একটিই ভাষা, একটিই দেশ। সুতরাং কোনোকালে, কোনো কারণেই ভাষাগত দিক থেকে রূপান্তরিত হওয়ার কোনো সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই। তাই আগামী দিনে বাংলাদেশই সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব করবে। এ জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এ কারণেই জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের ১৯৫টি দেশে পালন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, কেন এ মহাযজ্ঞ। বিরোধীরা মানুষকে বোঝাতে চায় আওয়ামী লীগ শুধু এ মানুষটিকে বড় করে দেখে তাদের দলীয় স্বার্থে। এ কথা জিয়াউর রহমানের জামানা থেকে শুনে আসছি। বঙ্গবন্ধুবিরোধী অপপ্রচারে এ দেশের নতুন প্রজন্মকে নানা মুখরোচক গল্প শোনানো হয়েছে। পুস্তক রচনা করে শেখানো হয়েছে বানানো ইতিহাস। এখনও তারেক রহমানের মতো অনেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তারেক কেন এমনটা করেন? এর সহজ উত্তর ‘প্রতিহিংসা’। কিন্তু গোটা পৃথিবীর মানুষের মনে তো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রতিহিংসা নেই। তাই তারা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এ ক্ষণজন্মা মানুষটিকে সম্মান করে। তাদের মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে এক কিংবদন্তি, অনুশীলনীয় আদর্শ। বীর বাঙালির অর্জন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অমর ২১ ফেব্রুয়ারি এখন সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বাংলা ভাষা এখন ব্রিটিশদের ঐতিহ্যবাহী লন্ডনের দ্বিতীয় কথ্য ভাষা।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো। সে সময়ে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার কোনো উপায় ছিল না। পাকবাহিনী গোটা দেশটাকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। বঙ্গবন্ধু দিশেহারা হয়ে ছুটছিলেন- কীভাবে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায়, দেশটাকে গড়ে তোলা যায়; কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। ’৭১-এর পরাজিত শক্তির নীলনকশায় ১৯৭৫ সালে ইতিহাসের নজিরবিহীন বর্বরতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর ২০ বছরের বেশি সময় গেছে দেশটাকে লুটেপুটে খাওয়ার মহোৎসবে। ’৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে নতুন যাত্রা শুরু হয়; কিন্তু ৫ বছর পর আবার ব্যাঘাত ঘটে। ২০০১ সালে আবার লুটের রাজ্যে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এরপর ১/১১-এর অধীনে ২০০৮ সালে আবারও আওয়ামী লীগ মহাজোট করে ক্ষমতায় আসে। বলা যায়, এখান থেকেই শুরু। ২০০৮ থেকে ২০২০- এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আজ কোথায় চলে গেছে দেশের বাইরে না গেলে কারও পক্ষেই তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বিশ্বের এমন কোনো দেশ বা জাতি নেই যারা আজ বাংলাদেশকে জানে না, চেনে না। ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। এ সময়ে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বে নজিরবিহীন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করেছে বলেই আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের এ মহাযজ্ঞে গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আজকের বাস্তবতায় বাংলাদেশের বিপথগামী রাজনীতিকদের সঠিক পথে ফিরে আসারও এটাই সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগানো দরকার। বঙ্গবন্ধু এখন আর শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি বাঙালির নেতা, বিশ্বনেতা, জাতির পিতা। তাকে ছোট করে দেখার হীনম্মন্যতায় ভুগলে নিজেদের অস্তিত্বই থাকে না। কারণ, বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশকে কল্পনাও করা যায় না। জাতিসত্তাকে কেউ কোনোদিন অস্তিত্বহীন করতে পারে না। বাংলাদেশ মানেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক আর সেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মোল্লা জালাল : সিনিয়র সাংবাদিক, বিএফইউজে সভাপতি



আর্কাইভ

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত
পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ
ইলন মাস্কের রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে হাজির ট্রাম্প
লেবাননে নিহত দুই শতাধিক শিশু: ইউনিসেফ
মার্তিনেজের ধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়ালেন পুতিন
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হয়নি: হাসনাত
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি স্বাক্ষর