রবিবার, ৯ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশে আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা- এসপি’র নাম আসছে কেন?
বাংলাদেশে আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা- এসপি’র নাম আসছে কেন?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক,ঢাকা: পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার সূত্র ধরে ওসি প্রদীপ কুমার দাস এবং এসআই লিয়াকতসহ সাত জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ কক্সবাজারের এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেনের নামও এখন আলোচিত৷
এই ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে৷ সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানা পুলিশ নিজেই একটি হত্যা মামলা করেছে৷ যাতে সিনহা এবং তার সাথে থাকা সিফাতের ওপর পারস্পরিক দায় চাপানো হয়েছে৷ থানা আরো একটি মামলা করেছে মাদক এবং অস্ত্র আইনে৷ অন্যদিকে সিনহার পরিবারের পক্ষ থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাস এবং এসআই লিয়াকতসহ নয় জনকে আসামি করে আদালতের মাধ্যমে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই মামলাটিও আদালতের নির্দেশে থানায় রেকর্ড হয়েছে৷ তদন্ত করছে র্যাব৷ ওসি এবং এসআইসহ সাত পুলিশকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ তবে বাকি দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ ফলে তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি৷
পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
গত কয়েকদিনে কয়েকটি টেলিফোন কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম৷ আর সেই কথোপকথনে কক্সকাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেনও রয়েছেন৷ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সারোয়ার কাবেরী দাবি করেন, ‘‘পুরো ঘটনার সাথে এসপি নিজেও সম্পৃক্ত৷ কারণ যে টেলিফোন রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে তাতে এসপি সাহেব ওসিকে ঘটনা ঘটাতে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা স্পষ্ট৷ আবার এসআই লিয়াকতকে তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন যে, তোমাকে গুলি করেছে তা তোমার গায়ে লাগেনি৷ আত্মরক্ষার্থে তুমি যে গুলি করেছ তা তার গায়ে লেগেছে৷
‘‘গত ২২ মাস ধরে ওসি প্রদীপ আরো অনেক অপকর্ম করেছেন যার প্রতিকার আমরা এসপি সাহেবের কাছে চেয়েছি৷ কিন্তু তিনি ওসি প্রদীপের পক্ষ নিয়েছেন,’’ অভিযোগ করেন তিনি৷ তার মতে, সিনহা হয়তো পুলিশের মাদক ও ক্রসফায়ার বাণিজ্যের কোনো তথ্য জানতে পেরেছিল৷ যা ওসি সাহেবও জানতে পারেন৷ সে কারণেই সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে৷
সিনহার মৃত্যু বিচ্ছিন্ন ঘটনা: সেনাপ্রধান
তবে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তাতে ‘ক্রসফায়ার নাটক’ কিভাবে সাজানো হয় তা পরিস্কার হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ শুধু তাই নয় এটা করতে পুলিশকে এক ধরনের অনুমতি যে দেয়া আছে তাও বোঝা যায়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘সিনহা হত্যা পরিকল্পনায় বা হত্যার পর নাটক সাজাতে আরো কেউ জড়িত থাকতে পারেন৷ তারা আরো উপরের কর্মকর্তা হতে পারেন৷ তাই বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত হওয়া দরকার৷’’ পুলিশ যদি এভাবে মানুষ হত্যা করে তাহলে দেশের নাগরিকরা যাবেন কোথায়, প্রশ্ন করেন তিনি৷
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘‘আমি তো নিয়মিত টেকনাফ থানায় যাই৷ আমি দেখেছি ওসি প্রদীপ এসপি সাহেবের সাথে পরামর্শ ছাড়া কোনো কাজ করত না৷ সব সময়ই টেলিফোনে পরামর্শ করতো৷ তাই এত বড় ঘটনা সে এসপি সাহেবের সাথে পরামর্শ ছাড়া করেছে বলে আমার মনে হয় না৷’’
পুলিশ সুপার যা বলছেন
এসপি মাসুদ হোসেন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে৷ পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়েছে দুইটি৷ আর সিনহা সাহেবের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি৷ সবগুলো মামলারই এখন তদন্ত চলছে৷ তদন্ত শেষেই সব কিছু পরিস্কার হবে৷’’
টেলিফোন রেকর্ড এবং সিনহা হত্যার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে৷ একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ করছে৷ তাই এই অবস্থায় আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷ মন্তব্য করলে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে৷ আমার যে বক্তব্য তা আমি তদন্ত কমিটির কাছেই জানাব৷’’
তদন্তের অগ্রগতি
সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ আরো কিছু কাজ করেছে৷ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথেও কথা বলেছে৷ ওসিসহ গ্রেপ্তার আসামি, ঘটনার সময়ে মেজর সিনহার সঙ্গে যারা ছিলেন, তার পরিবারের সদস্যরা এবং কক্সবাজার পুলিশ সুপারেরও তারা বক্তব্য নিবে৷ কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা তদন্তে প্রয়োজনীয় কোনো দিকই বাদ দিচ্ছি না৷ আর স্বাধীনভাবেই তদন্ত করছি৷ পুলিশসহ সব পক্ষই আমাদের সহযোগিতা করছে৷’’
গত সোমবার থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷
এদিকে সিনহা হত্যার পর তার ডকুমেন্টারি প্রোডাকশন টিমের সদস্য শিপ্রা রানী দেবনাথকে হিমছড়ি রিসোর্ট থেকে আটক করে মাদক মামলা দেয় পুলিশ৷ রোববার আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন৷ আর সিনহার সাথে থাকা আটক রিফাতের জামিন এখনো মেলেনি বলে জানা গেছে৷