রবিবার, ৯ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম | সাহিত্য ও সংস্কৃতি » ত্যাগের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন বঙ্গমাতা: প্রধানমন্ত্রী
ত্যাগের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন বঙ্গমাতা: প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক,ঢাকা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কথা তুলে ধরে বলেন,আমাদের অনেক বড় বড় অভিজ্ঞ নেতারাও কিন্তু অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সেখানে আমার মা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন।
শনিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন একটা কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়—সেখানে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ‘আমাদের অনেক বড় বড় অভিজ্ঞ নেতারাও কিন্তু অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বা হয়তো একটা ভুল সিদ্ধান্ত দিতে গেছেন। সেখানে আমার মা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন। ’
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি না নেওয়ার পরামর্শ বঙ্গমাতা দিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমাদের নেতারা আব্বাকে জোর করছিলেন, আইয়ুব খান প্যারোলে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসার জন্য। আমার মা সাথে সাথে নিষেধ করে বলেন, জনগণ আমাদের সাথে আছে। কাজেই তিনি যেন না যান। আমার বাবা যাননি। যার জন্য এই মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয় আইয়ুব খান। সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
সেটা যদি না হতো তবে আগরতলা মামলার ৩৫ জন আসামি, সার্জেন্ট জহুরুল হককে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হলো। বাকি ৩৪ জন, আমার আব্বা যদি যেতেন সেখানে (প্যারোলে) তবে বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটতো সেটা আপনারা বুঝতেই পারেন। তাদের আর জীবন নিয়ে ফিরে আসতে হতো না। কিন্তু আমার মা তাদের ফিরিয়েছিলেন। কারণ সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন বলেই মামলা প্রত্যাহার হয়েছিল এবং বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর ’৭০ এর নির্বাচন, সেই নির্বাচনেও অনেকে বলেছিল নির্বাচন না করার। আন্দোলন করা। আমার বাবা তখন বলেছিলেন না, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের নেতৃত্ব কে দেবে সেটা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তখন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে। আমার মা সবসময় আমার বাবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন। ’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের আগে বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গমাতার পরামর্শের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের সময় অনেকে অনেক কিছু বলেছিল কিন্তু আমার মায়ের কথা স্পষ্ট ছিল—সারা জীবন কাজ করেছো তুমি। তোমার মনে যেটা আসবে সেই কথা বলবে। আজকে বিশ্বব্যাপী সেই ভাষণ মর্যাদা পেয়েছে। ইউনেস্কো প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। ’
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে জড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সেখানে আমার মাকেও জড়ানোর অনেক চেষ্টা হয়েছিল। সেখানে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা কয়েকবার তাকে ডেকে নিয়ে প্রশ্নও করেছে। আমি বড় সন্তান হিসেবে কিছুটা জানতাম। ’
আন্দোলন ও জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দক্ষ ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার তার অত্যন্ত দক্ষতা ছিল। তিনি জানতে কীভাবে মানুষের মাঝে যেতে হবে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়ার পরে যে চক্রান্তগুলো চলছিল তারপক্ষে জনমত সৃষ্টি করা এবং আন্দোলন গড়ে তোলা। বিশেষ ছাত্রদের আন্দোলন, ছাত্র এবং শ্রমিক এই আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে আমার মায়ের একটা অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। কৌশল করে করে জনমত সৃষ্টি করেছিলেন। ’
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এবং গোপালগঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।
বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র, অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২শ’ সেলাই মেশিন এবং ১৩শ’ দরিদ্র নারীকে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া গোপালগঞ্জ প্রান্তে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।