শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » করোনায় প্রবাসে অনিশ্চয়তায় সত্ত্বেও রেমিট্যান্সের রেকর্ড?
করোনায় প্রবাসে অনিশ্চয়তায় সত্ত্বেও রেমিট্যান্সের রেকর্ড?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক : করোনায় মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি কর্মীরা প্রবাসে কাজ হারাচ্ছেন৷ একটি অংশ ফেরতও এসেছেন৷ বিশেষ করে তারপরও কেন রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স আসছে? আর এই প্রবাসী আয় দেশে আসার রেকর্ড কি অব্যাহত থাকবে?
চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনে ২ দশমিক ২৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷ যা আজ (বৃহস্পতিবার) দিন শেষে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে৷ জুলাই মাসের প্রথম ২৭ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা পুরো জুন মাসের চেয়ে শতকরা ২২ ভাগ বেশি৷ আর গত বছর এই সময়ের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি৷ গত জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৮৩৩ বিলিয়ন ডলার৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গত অর্থবছরে ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে যা ১০ দশমিক ৮৫ ভাগ বেশি৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে৷ আর নতুন অর্থ বছরের শুরুতে জুলাই মাসের ২৭ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে৷ অতীতে কখনোই এক মাসে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি৷
কারণ কী?
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে৷ আর তার মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এই করোনায় প্রবাসে অনিশ্চয়তা এবং চাকরি হারিয়ে ফিরে আসার ভয়৷
সিপিডির ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কোরবানির ঈদের সময় অতীতেও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে৷ কিন্তু এবার তা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাসেও রেমিটেন্স বেশি এসেছে৷ তার মতে,‘‘এটা মাসিক আয়ের রেমিট্যান্স নয়, ধারণা করছি প্রবাসীরা অনিশ্চয়তার কারণে তাদের যে জমানো টাকা বা পুঁজি আছে তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশে৷ কারণ তাদের চলে আসতে হলে ওই সময় নগদ টাকা কতটা নিয়ে আসতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই৷”
করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্বই সংকটে আছে৷ বাংলাদেশে প্রবাসীদের যে স্বজন বা পরিবারের সদস্যরা আছেন তাদেরও আয় নেই৷ তার ওপর বন্যা৷ তাই অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত মনে করেন, ‘‘কোরবানি তো আছেই তার ওপর দেশে স্বজনদের সহায়তার জন্য হয়তো প্রবাসীরা অর্থ বেশি পাঠাচ্ছেন৷ কারণ তাদের স্বজনেরা এখানে সংকটে আছেন৷”
এর ওপরে যোগ হয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে শতকরা দুই ভাগ নগদ সহায়তা৷ এই করোনার সময় হুন্ডি নিয়ন্ত্রিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ আর নগদ সহায়তার কারণে কার্ব মার্কেট এবং ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধা এখন একই পর্যায়ে৷ তাই বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রবণতাও বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেকরা৷ ড. জায়েদ বখত বলেন,‘‘এর বাইরেও এখন মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেন প্রবাসীরা৷ তারা এখন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা তেমন পাঠাচ্ছেন বলে মনে হয়না৷”
সিপিডির ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত আরো একটি কারণ যোগ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রেমিট্যান্সের বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসলেও এখন অ্যামেরিকা ও ইউরোপ থেকেও রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বাড়ছে৷ ওইসব দেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসে তা স্থায়ী৷ ঈদ এবং দেশে করোনা সংকটের কারণে দেশে স্বজনদের জন্য তারও হয়তো বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন৷”
এই প্রবাহ কি অব্যাহত থাকবে?
তিনজন বিশ্লেষকই মনে করছেন এখন যে রেকর্ড পরিমান রেমিটেন্স প্রবাসীরা দেশে পাঠাচ্ছেন তাতে তাদের রেগুলার ইনকামের বাইরের অর্থও যোগ হচ্ছে৷ কেউ হয়তো তাদের জমানো টাকার পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ আবার কেউ হয়তো বিদেশে তাদের ব্যবসার পুঁজিও দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় শেই শঙ্কা থেকে তারা এটা করছেন৷
সরকারি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ২২ হাজার প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন৷ বাস্তবে সংখ্যাটা আরো বেশি হবে৷ আবার অনেকে কাজ হারিয়ে এখনো সেখানে অবস্থান করছেন৷ রেগুলার ইনকাম থেকে টাকা পাঠালে রেমিট্যান্স বাড়ার কথা নয়৷ জমানো টাকা বা পুঁজি দেশে পাঠানোর কারণেই এটা বাড়ছে৷ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এই বাড়তি রেমিট্যান্স প্রবাহ তাই অব্যাহত থাকবে কিনা সেটাই প্রশ্ন৷”
আরো কয়েক মাস গেলে বোঝা যাবে পরিস্থিতি কী হয়৷ তারা হয়তো এখন ধাপে ধাপে জমানো টাকা পাঠাচ্ছেন৷ জমানো টাকা বা পুঁজি দেশে পাঠানো শেষ হলে এই প্রবাহ থাকার কথা নয় বলে মনে করেন তিনি৷
সরকার এরইমধ্যে প্রবাসে এই করোনায় যাতে বাংলাদেশিরা চাকরি বা কাজ না হারায় সেই জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছে৷ কিন্তু এই উদ্যোগটা আরো কার্যকর ও দ্রুত হওয়া উচিত৷ নয়তো রেমিট্যান্সের হঠাৎ রেকর্ড উল্টো রেকর্ডেও পরিণত হওয়ার আশঙ্কা আছে৷