মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশের বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে: জাতিসংঘ ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
বাংলাদেশের বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে: জাতিসংঘ ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানভাসী মানুষের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানেই কোনো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অসহায় মানুষেরা। জুড়ে প্রায় প্রতিদিনের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল। উত্তরের জেলাগুলো বন্যাকবলিত হবার পর বানের পানি এখন দেশের মধ্য অঞ্চলকে সয়লাব করে দিচ্ছে।
এ অবস্থায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি যৌথ জরিপ করেছে। গত শনিবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে মৌসুমি বন্যার প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ২১ জেলার ৭৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষ চলতি বন্যার কবলে পড়তে পারে। পুরোপুরি বাস্তুচ্যুত হতে পারে প্রায় তিন হাজার মানুষ।
দেশের কোনো এলাকার মানুষ কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার একটি ধারণাও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রাজধানী ঢাকার মানুষ। এই শহরের ১৬ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়তে পারে। এরপরই রয়েছে বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলা। এসব জেলায় তিন লাখের ওপরে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
এদিকে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষ যেন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সবাই যেন ত্রান পায় সেদিক নজর রাখতেও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ দিক নির্দেশনা দেয়া হয় বলে সংবাদ ব্রিফিং-এ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
‘আমরা বানভাসী, অভাবী মানুষের পাশে আছি’ ওদিকে, আজ দুপুরে নড়িয়া পৌরসভা চত্বরে বানভাসী মানুষের মাঝে শুকনা খাবার ও চাল বিতরণকালে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেছেন, বন্যায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা বানভাসী, অভাবী মানুষের পাশে আছি। আমাদের সরকার সব সময় জনগণের পাশে আছে। একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। সরকারের প্রচুর পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। আমরা মানুষের পাশে থাকব।
‘সরকারের কাছে বন্যাদুর্গতরা চরম উপেক্ষিত’
অন্যদিকে, দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত সেই সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকার ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত সেই সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকার ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এর প্রভাবে সোমবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ও তৎসংলগ্ন উপকৃলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
সেইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে দেশের সর্বোচ্চ ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৯ মিলিমিটার। আর রোববার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।