বাংলাদেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা
বিবিসি২৪নিউজ,আশরাফ আলী: সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশার পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা খাত যে জনগণকে জিম্মি করে গলায় ছুরি ধরে টাকা কামানোর ক্ষেত্র, সে সংক্রান্ত নানা খবরাখবরও আসছে প্রতিনিয়ত। করোনা মহামারীর শুরুতে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার রুগ্ণ অবস্থা প্রকাশিত হওয়ার পর একে একে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয়, দেশে করোনা মহামারীর আবির্ভাবের সময় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় স্বাভাবিক চিকিৎসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও পরে কিছু হাসপাতাল করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সংযুক্ত হলেও তৈরি করেছে প্রতারণার জাল।
কোনো ধরনের পরীক্ষা না করে, সংগ্রহ করা করোনা টেস্টের নমুনা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে কাউকে পজিটিভ আবার কাউকে নেগেটিভের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া শুরু করে। এ প্রতারণার বড় হোতাদের মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ও জেকেজির চেয়ারম্যান এবং এমডি ডা. সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিদেশে, বিশেষত ইতালির সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের খবর প্রকাশের পর। আশার কথা, দেরিতে হলেও সরকার এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, এখন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
সর্বশেষ করোনা পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে করোনা পরীক্ষা নিয়ে নানা নয়ছয়, ভুতুড়ে বিল তৈরি ও আদায়, এমনকি সরকারের অনুমোদন ছাড়াই অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মতো গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে স্বাস্থ্যের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ সেবাদানের দায়িত্বে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য রোগীপ্রতি ২৫শ’ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে সেখানে।
অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি পরীক্ষাকে প্রতারণা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ডাক্তারদের বেতন বাকি রাখা, অসুস্থ হওয়ার পরও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে না দিয়ে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করাসহ আরও অনেক অভিযোগও পাওয়া গেছে। এত অপকর্ম-প্রতারণাকারী এসব হাসপাতালটিরও সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের মতো হালনাগাদ লাইসেন্স নেই। আমরা মনে করি, করোনা প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের তো বটেই, সব হাসপাতাল-ক্লিনিকেরই লাইসেন্সসহ অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। এ কঠিন সময়ের শুরু থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে মানুষ চিকিৎসা পায়নি, কিছু হাসপাতালের কাছে তো মারাত্মক প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগেই মানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরকেন্দ্রিক নানা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যাদের অঙ্গুলি হেলনে তাদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে নেয়া হয় নানা সিদ্ধান্ত। শুধু তাই নয়, মেডিকেলে ভর্তি, ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ-বদলি-পদায়ন ইত্যাদিতেও হয় বড় ধরনের লেনদেন। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাদাতারাও অধিদফতরের যোগসাজশে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা দরকার। সরকার এখনও মনোযোগী না হলে, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে যে কোনো দুর্যোগে আরও বড় খেসারত দিতে হবে জনগণকে।