শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » গার্মেন্টসের অর্ডার ফিরছে, শ্রমিকদের চাকরি ফিরছে না কেন?
গার্মেন্টসের অর্ডার ফিরছে, শ্রমিকদের চাকরি ফিরছে না কেন?
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা :বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে চলতি বছর একের পর এক রপ্তানি আদেশ স্থগিত করে ক্রেতারা৷ বিজিএমইএর হিসাবে, তিন শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩১৫ কোটি ডলারের (প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়েছিল৷ এরই মধ্যে বাতিল হওয়া রপ্তানি আদেশের ৮০ শতাংশই ফিরেছে৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরী পোশাক শিল্পে স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে৷ স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশগুলো নতুন করে চালু করছেন ক্রেতারা৷
কারখানা মালিকদের এই সংগঠনের সভাপতি ড. রুবানা হকও সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন৷ বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করা হচ্ছে৷ অবশ্য ক্রয়াদেশ ফিরলেও বায়াররা অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে৷ অনেক ক্ষেত্রেই ছয় মাস কিংবা এক বছরের মতো লম্বা সময় নিচ্ছেন তারা৷ আবার কেউ কেউ দামে ছাড় দিতে বাধ্য করছেন৷ বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মশিউল আজম সজল বলেন, ‘‘আমরা এখনো বলতে পারছি না যে আসলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে৷ তবে কিছুটা ইতিবাচক হলো আমাদের কাছে যে কাপড়গুলো রেডি ছিলো সেগুলো এখন তারা নিচ্ছে৷ খুব যে বেশি নতুন অর্ডার আসছে তা নয়৷ ফলে সামনের সময়ে অর্ডার কেমন আসে সেটা দেখতে হবে৷’’
বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে চলতি বছর একের পর এক রপ্তানি আদেশ স্থগিত করে ক্রেতারা৷ বিজিএমইএর হিসাবে, তিন শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩১৫ কোটি ডলারের (প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়েছিল৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানিকারকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয় সরকার৷ তারপরও বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে৷ চাকরি হারিয়েছেন অনেক শ্রমিক৷
মশিউল আজম সজলের মতে, করোনা মহামারিতে ৩৪টি বড় ও মাঝারি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে৷ তবে কত সংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব দিতে পারেননি তিনি৷
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী করোনার পরিস্থিতে ১ লাখ ১০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন৷ বহু শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেননি মালিকরা৷ দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে কেউ কেউ পাওনা পেলেও অনেককেই পাওনার জন্য লড়ে যেতে হচ্ছে৷ তবে শুধু যে চাকরি হারিয়েছে, বিষয়টা এমন নয়৷ আবার নতুন চাকরিও পেয়েছেন অনেকে৷ আসলে মালিকরা দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্রমিককে বাদ দিয়ে নতুন শ্রমিক নিচ্ছেন৷ কারণ একজন শ্রমিক দীর্ঘদিন এক প্রতিষ্ঠানে থাকলে তার বেতন বেড়ে যায়৷ আর নতুন শ্রমিক নিলে তার বেতনও কম, পাওনাও থাকে না৷ করোনা পরিস্থিতিতে এই সুযোগটাই নিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকরা৷ তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ওই শ্রমিকরা অন্য কোথাও কম বেতনে হলেও চাকরি পেয়ে গেছেন৷ ফলে খুব বেশি শ্রমিক এখন বেকার নেই৷ তারপরও ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক এখনো বেকার৷’’
গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিক বেতন বেশি পেলেও তার প্রোডাকশনও বেশি৷ অভিজ্ঞ শ্রমিক ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না৷ আর ৪০ লাখ শ্রমিক যে সেক্টরে কাজ করে সেখানে ১৫-২০ হাজার শ্রমিক বেকার থাকা এমন বড় বিষয় না৷ বড় কথা হলো, প্রতিষ্ঠান না বাঁচলে কিভাবে শ্রমিক বাঁচবে? এখন ৬০-৭০ ভাগ অর্ডার দিয়ে কতদিন শতভাগ শ্রমিকের বেতন দেওয়া যাবে? তাছাড়া এই সময়ে সামনের গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা৷ কিন্তু সেই আলোচনা তেমন হচ্ছে না৷ এটি আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের৷’’
বাংলাদেশ থেকে একক ব্র্যান্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি পোশাক পণ্য ক্রয় করে সুইডেনভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম৷ প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিসের প্রধান জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, করোনার কারণে তারা কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি৷ শুধু তাই নয়, কারো পাওনা পরিশোধেও দেরি করেনি৷ গত দেড় মাসে তারা নতুন করে প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ দিয়েছে৷ এখন পরবর্তী গ্রীষ্মের জন্য অর্ডারের প্রস্তুতি চলছে৷
সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৬৮৬ কোটি ডলার (প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা)৷ স্বাধীনতার পর আর কখনও রপ্তানিতে এত বড় ধস নামেনি৷