বুধবার, ৮ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » আওয়ামী লীগ নেতা- দুই ভাইয়ের সম্পদ ১২৮ ফ্ল্যাট ও ৫১ কোটি টাকা - সিআইডি,
আওয়ামী লীগ নেতা- দুই ভাইয়ের সম্পদ ১২৮ ফ্ল্যাট ও ৫১ কোটি টাকা - সিআইডি,
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাসিনো কারবারির পুরান ঢাকার দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়ার দুই বাসা থেকে নগদ টাকা পাওয়া গেছে প্রায় ৩২ কোটি। আর দুই ভাইয়ের নামে ব্যাংকে পাওয়া গেছে ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ছাড়া এই দুই ভাইয়ের ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে ১২৮টি। পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘পুরান ঢাকার আলোচিত ক্যাসিনো ব্যবসায়ী এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা অর্থপাচারের চারটি মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এনামুল ও রুপন ভূঁইয়ার নামে ১২৮টি ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। আর ব্যাংকে এই দুই ভাইয়ের ১৯ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই দুই ভাই।’
সিআইডির কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সিআইডি বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনামুল হকের এক আত্মীয় বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসা করে এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়া যত টাকা আয় করেছেন, তা দিয়ে পুরান ঢাকায় অনেক পুরোনো বাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাঁদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাঁদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজপত্র পাওয়া যায়। সোনা পাওয়া যায় এক কেজি। এই ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়।
অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনও এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় এনামুলের বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। আর রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদকের পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, ক্যাসিনো কারবারি এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এখনো আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।
এনামুল ও রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের পদ কেনার অভিযোগ রয়েছে। এনামুল হক গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন, আর রুপন ভূঁইয়া ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এনামুল ও রুপন ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন।
সিআইডির তদন্তে ফ্ল্যাট-জমি
এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকায় স্টিল শিটের ব্যবসা থাকলেও আয়ের বড় উৎস ছিল মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জুয়ার কারবার। স্থানীয় লোকজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি টাকার কুমির বনে যান এই দুই সহোদর। নগদ টাকায় পুরোনো বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি কেনা তাঁদের নেশায় পরিণত হয়।
সিআইডির তদন্তে ১২৮টি বাড়ি, ছয়টি গাড়ি ও কয়েক বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে।
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এনামুল হক ও রুপনের পুরান ঢাকার ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পুরান ঢাকার ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ১০ টি ফ্ল্যাট, ১১৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিট ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট ও ১১২ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিট ছয়টি ফ্ল্যাটের মালিক এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়া। এ ছাড়া ১০৩ ও ১২০ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের দুই কাঠা প্লটের মালিক এনামুল ও রুপন। এ ছাড়া ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈসুন্দি এলাকায় ১৪ টি ফ্ল্যাটের মালিক এনামুল ও রুপন। আর গেন্ডারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনের ১৭ টি ফ্ল্যাট, ৭১ নং শাহ সাহেব লেনের চারটি ফ্ল্যাট, ৮ নম্বর শাহ সাহেব লেনের ১৩ টি ফ্ল্যাট, এক নম্বর নারিন্দা লেনের পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনে চারটি, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনের ১১ টি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনের দুটি ফ্ল্যাট এবং ৬ নম্বর গুরুদাস সরদার লেনের ১২টি ফ্ল্যাটের মালিক দুই সহোদর।
এ ছাড়া ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনের টিনশেড ভবন, ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারী রোডে একতলা টিনশেড বাড়ি, ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি ভজহরি শাহ স্ট্রিটে ৪ কাঠার প্লট, ৮৮ নম্বর মুরগীটোলায় ৯ কাঠা, কেরানীগঞ্জে তেঘরিয়ায় ১৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ১০ কাঠার প্লট, শরীয়তপুর নড়িয়ায় ১২ কাঠা, পালং থানায় ২০ শতক এবং নড়িয়ায় ১৪ শতক জমির মালিক এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়া।
দুই ভাইয়ের ব্যাংকে জমা কত টাকা
ক্যাসিনো কারবারি এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার বাসা থেকে নগদ ৩২ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানা যায়। তবে সিআইডি তদন্ত করে দেখেছে, বাসায় নগদ টাকা ও সোনা রাখার পাশাপাশি ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখে এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়া। সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী, এনামুল ও রুপনের ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকা এখন জব্দ রয়েছে। সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন বিতর্কিত ক্যাসিনো কারবারি এই দুই সহোদর। ব্যাংক হিসাবগুলো পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর শাখায় খোলেন তাঁরা।